"মা গো…….. ওরা নাকি আমাদের কে এখানে থাকতে দেবে না! আমাদেরকে ওরা বাঁচতে দেবে না মা…. তোমার বুকে আমাকে আর থাকতে দেবে না…."
দৌড়ে গিয়ে মায়ের বুকে মাথা রেখে যখন এ কথা গুলো বলছিলাম তখন মাথার উপর দিয়ে দুটো মিসাইল উড়ে আসছে। প্রাণপনে ছুটে ও এর থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব না। ঘর বাড়ি ছেড়ে এলাকা খালি করে সবাই ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। শুধু মা রয়ে গেছে তার ছেলের অপেক্ষায়। মায়ের বুক হারানোর কথা ভাবতে ই দুচোখ বেয়ে অশ্রু গোড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তে ই তা হাউ-মাউ কোরে কান্নার রূপ নিল। সামনে অনিবার্য মৃত্যু, তবু মায়ের হাত আমার মাথায় মমতার পরস বুলিয়ে আমাকে নির্ভার করতে চাইছে! এরকম মুহূর্তে ও মায়ের এমন মমতাময়ী রূপ…..!
-আর কি কখনো আমার মাথায় মা হাত বুলিয়ে দেবে না…. আর কি দেখতে পাব না মায়ের এই মমতাময়ী রূপ? ভাবতে ই আমার অশ্রু ধারা দ্বিগুণ হোয়ে গেল।
হঠাৎ আমি কেঁপে উঠলাম। দু চোখে শুধু অন্ধকার…. যখন অন্ধকারে চোখ সয়ে গেল নিজেকে তখন আবিষ্কার করলাম বিছানার উপর। কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে বাস্তবতায় ফিরে আসতে।
দুঃস্বপ্ন! এটি একটি দুঃস্বপ্ন!!!
ঘুম ভাংগার পরও মিনিট পাঁচেক আমি কান্না থামাতে পারিনি। সবকিছু হারিয়ে ফেলার ভয়ার্ত অনুভুতি যে এর আগে কখনো আমাকে স্পর্শ করে নি।
৭১ নিয়ে আর পাক বাহিনির অত্যাচারের কাহিনি অনেক বারই পড়েছি, শুনেছি, মুভি দেখেছি। কিন্তু একটি দুঃস্বপ্ন আমাকে যে অনুভুতি দিয়েছে, যে উপলব্ধি দিয়েছে তা দিতে পারে নি আর কোন কিছু।
আজ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও কিছু লোক আছেন যারা আজও নিজেদেরকে "তাদের" অংশ মনে করেন। "তাদের" জন্য ব্যথিত হন, "তাদের" ও তাদের "এ-দেশীয় দোসর" দের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেন! লখো শহীদের রক্তের মূল্য যারা আজও উপলব্ধি করতে পারেন নি….. তাদের জন্য আমার একটা ই চাওয়া-
-প্রতি রাতে তারা দেখুক এরকম "একটি দুঃস্বপ্ন"।