ছবিঘর থেকে চাপঘর: সিনেমা ভাবনা

আশফাক সফলআশফাক সফল
Published : 5 Jan 2015, 02:54 PM
Updated : 5 Jan 2015, 02:54 PM

সময়টা ছিল ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ । মাঝ কৈশোর বা তার শেষ প্রান্তে ছিল বয়সটা। নিউরনের পরতে পরতে সবকিছু নেই সব কিছু। তারপরও মনে পরে আছে সিনেমা হলের সামনে কাপড়ে আকা পোস্টারের কথা। রিক্সা এর পিছনে কাঁচা বা পাকা হাতের আকার প্লেট গুলর ছবি বেশ ভাসে চোখে। সেই সময় হাতেই আকা হত এগুল । মডিফাইড লেদ সেমিকমার্শিয়াল চার রঙের পোস্টারের খুব একটা বেশি প্রচলন ঘটেনি। ফটগ্রাফের মত নিখুঁত মুখশ্রি ছিল না পোস্টারগুলোতে । কিন্তু বয়সের দোষে (বা গুনে) বেশ টানত সেই পোস্টারগুলো। নায়িকার তনুশ্রী (অনেকক্ষেত্রে  দেহশ্রি) আকর্ষিত করত বেশ।

সময়ের সাথে পরিবর্তন আছে সবকিছুর। পোস্টারের প্রতি সেই ভাল লাগা আর থাকে না, সেই সাথে যুক্ত হয় দেহ পল্লব (নাকি চর্বির) প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। তনুশ্রী গল্প এখানে শেষ, দেহশ্রি (পড়ুন দেহকুশ্রি) এর গল্প শুরু। আলোচনা আসলে সেখানে যাবেন না,কোন ভাবনা বা কথা নেই এখানে ২০০০ থেকে ২০০৬ শাল পর্যন্ত সিনেমা শিল্পের বিস্তার, প্রসার আর মান নিয়ে। কথা আছে সেই পোস্টার নিয়ে। সেই পোস্টার হতে পারে "কেয়ামত থেকে কেয়ামত"  , "আগুনের পরশমনি" , "দুখাই" অথবা "জুম্মান কসাই" এর। প্রযুক্তির মারপ্যাঁচ আর প্রয়োগ বেশি না থাকার কারনে সেই পোস্টারগুলো (আসলে সিনেমা হলের ব্যানার গুলো) আঁকা হতো হাতে।

সেই সময় রিকশার পিছনে ছবিগুল আঁকা হতো হাতে । বাঘ-ভাল্লুক থেকে শুরু করে বিড়াল-পাখি কিছুই বাদ যেত না সেই ছবিগুলোতে। অনেক সময় যে জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার ছবিও উঠে আসত। এরপর আসে অন্য এককাল, এখন হাতে আঁকা হ্যান্ডম্যানশিপের স্থান দখল করে নেয় প্রযুক্তি।  প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কোন তর্ক নেই এখানে , কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় যখন নামকা-ওয়াস্তে কিছু বাতিল প্রিন্টিং প্লেট দিয়ে কাজ চালান হয়। হাতে আঁকা ছবিগুলোকে মেনে নিতে হবে সংস্কৃতির অংশ হিসাবে । হয়ত বা সুশিল সামাজের অনেকেই নাক কুঁচকে ভুরু পাকিয়ে তাকাবে। কিন্তু শত বছর ধরে যা চলে আসছে, অনুশীলিত হচ্ছে সেটা অবশ্যই আমাদের নিজেদের অংশ।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আসে, হারিয়ে যায় অনেক কিছু। ঠিক তেমনি ভাবে অনেক কিছুই ফিরে আছে অন্যভাবে। আর তাই সিনেমা ঘর হয়ত ফিরে আসছে কাবাব ঘরে । আজকাল বেশ কিছু ফাস্ট ফুড দোকানের নাম থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, অনেক কিছুতেই সেই চেনাজানা বাংলা সিনেমার অনুভূতি । কখনও বা দোকানের নাম সেটা হতে পারে "চাপ সামলাও" বা "চাপ এক্সপ্রেস" , অথবা "কোপা সামসু" ধরনের কোন সাইনবোর্ড । খারাপ কী? কোন ভাবে টিকে থাকছে সেই সিনেমার অনুভূতি।