গৃহবন্দী ট্রাম্প, সাঁওতাল আর সংখ্যালঘু

আশরাফুল আলম
Published : 15 Nov 2016, 07:22 PM
Updated : 15 Nov 2016, 07:22 PM

খুব অবাক হয়ে আমার ফেসবুকে হিন্দু ধর্মালম্বী বন্ধুদের প্রোফাইল পিকচার কালো করে ফেলতে দেখি । কালো মানে, শোক পালন ।কিন্তু এই রং কালো না হয়ে লাল কেন হলো না ? আপনাদের মাঝে কি আন্দোলন করার সাহস নেই? জোর করে বলতে পারেন না, এই দেশ আপনার আর আপনার অধিকার আছে? ভালো কথা, কিসের অধিকার সেটাই তো মনে হয় আপনি জানেন না। আসুন সাঁওতাল আর আমেরিকার ইলেকশন থেকে শিক্ষা নেই, কেন আপনার প্রোফাইল পিকচার লাল রঙের হওয়া উচিত ।

এই মুহূর্তে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কি গৃহবন্দী? অনেকটা তাই । এই ভদ্রলোককে অনেকটা গৃহ কারাগারে বসবাস করতে হচ্ছে । গত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, অনেক ট্রাম্প সমর্থক নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন । ফুলে ফেঁপে উঠা সাধারণ অমানুষের আন্দোলন বাড়ছেই । যেখানে সবাই ভেবেছিলো ট্রাম্প অনেক শক্ত অবস্থানে যাবে, আজকে ট্রাম্পের হাল ধরার জন্য লোক খুঁজে পাচ্ছে না ট্রাম্প নিজেই। খুব সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের  চেয়ে অসহায় এই মুহূর্তে আর কেও নেই । তাহলে ভাববার বিষয়, কারা সবচেয়ে বিষধর? ট্রাম্প সমর্থকরা নাকি সাধারণ মানুষ যারা ট্রাম্পকে তার ফিফথ এভিনিউর বাসায় আটকে রেখেছে ।

সাধারণ নাম মানেই যে ভালো, ভদ্র বা সুশীল হবে এর কোনো মানে নেই । সাধারণের মাঝেও হিংসে থাকতে পারে, পারে অন্যায় করতে । এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষ গুলো নিউ ইয়র্কের রাস্তায় যা করছে, তা নিতান্তই অন্যায়, অন্তত আইন তা বলে। কিন্তু এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে প্রশাসন । আপনি দেখবেন ক্যালিফোর্নিয়াতে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ খুবই ভালো ব্যবহার করছে । শুধু তাই নয় অনেকে আবার সেলফি তুলছে । এইসব দেখার পর ট্রাম্প সমর্থকরা রীতিমতো ঘাবড়ে গেছে, এরা নিজেরদের এখন মাইনোরিটি ভাবতে শুরু করেছে ।

খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, কট্টরপন্থী করা? ডোনাল্ড ট্রাম্প যার মুখে বাজে কথা ছাড়া কিছুই বের হতো না, আজকের দিনে এসে নিজেকে সংযত করে সব মেনে নিয়ে বাধ্য হচ্ছে । আর সাধারণ মানুষজন যাদের আমরা ডেমোক্রাট বা গনতন্ত্রকামী ভাবি, এরা কিন্তু নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ে নাই । ভোটের ফলাফলকে অগ্রাহ্য করে তারা ট্রাম্পকে সরিয়ে দিতে ব্যস্ত, এতে নিয়মের প্রয়োজন আছে বলে তাদের মনে হয় না । তাহলে বলুন, কট্টরপন্থী কারা হলো ? ট্রাম্প সমর্থকরা নাকি গণতন্ত্রকামীরা ?

যাই হোক, বোঝার ব্যাপার হচ্ছে এই, আপনি যদি দলে ভারী হন, তবে আপনি যেই হন না কেন, আইন আপনার জন্য । দলে ভারী হওয়াটা জরুরী, নীতির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন । বেশির ভাগ লোক যা চাইবে তাই হবে, আর বাকিরা মাইনোরিটি বা সংখ্যালঘু । ধরুন আমাদের দেশের হিন্দু সম্প্রদায় অথবা গারো বা সাঁওতাল ।এরা যতই আইনের মধ্যে থাকুক না কেন, সবসময় অন্যায় এদের হবে । কারণ বেশির ভাগ মানুষের কাছে আইন তো অন্য রকম। তাই বেশির ভাগ মানুষ যা মানে তাই আপনাকে আইন বলে মেনে নিতে হবে । এটাই গণতন্ত্র ।

আর অধিকার আদায়ের জন্য ঘরে বসে থাকলে তো হবে না । অধিকার আদায়ের জন্য রক্ত দিতে হবে । আপনাকে প্রমাণ করতে হবে সংখ্যালঘু হয়েও আপনি সংখ্যাগরিষ্টদের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেন । আমেরিকা থেকে শিখুন । আপনার গণতন্ত্রকামী নীতি নির্ধারকরা দেখতে চায় আপনি সংখ্যালগঘু হয়েও কি করতে পারেন । এটাই নিয়ম । ঘর থেকে বের হন । বুক পেতে দিন পুলিশের গুলিতে । দেখবেন সবাই আপনার পেছনে ।

সাম্প্রতিক কালে সাঁওতালদের উপর আক্রমণের ফলে সাঁওতালরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর সরকারি ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে যে সাহস দেখিয়েছে, তাতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সবাই উঠে পরে লাগবে । আর একসময় সাঁওতালরা এর সুবিধা ভোগ করবে । কিন্তু আপনি যদি চুপচাপ থাকেন আর ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার কালো করে আন্দোলন করেন, তাহলে আশা করি আপনার কিছু হবে না । কারণ প্রোফাইল পিকচার লাল রঙের করুন, কালো নয়। আপনার প্রিয় নীতিনির্ধকরা আপনার লাল রঙের রক্ত দেখতে চায়, কালো রঙের প্রোফাইল পিকচার নয় ।

মালাউন বা অন্য শব্দ আপনারা যেভাবে ব্যবহার করছেন তাতে খুব শীঘ্রই উইকিপিডিয়াতে এই শব্দ সংকলন হবে আর এক সময় এর জন্য আপনাদের দায়ী করবে সবাই । নিজেদের গায়ে নিজের কালো রং মেখে নিজেদেরকে আরো বিপন্ন করে তুলছেন । কেন বুঝছেন না, সবাই আনন্দ পাচ্ছে । আপনাদের এই আচরণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বুলির মতো ভাইরাল হচ্ছে , আর এতে মজা পাচ্ছে সবাই , আর এক সময় মজা শেষ হলে , আপনাদের সবাইকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের  মতো গৃহবন্দী করে রাখবে ।