থ্রি জি নেটওয়ার্কের বেহাল দশা

আশরাফুল আলম
Published : 29 Nov 2016, 04:06 AM
Updated : 29 Nov 2016, 04:06 AM

টিভিতে মোবাইল কোম্পানি গুলোর বিজ্ঞাপন দেখলে মনে হতে পারে পুরো বাংলাদেশ 3 জি নেটওয়ার্কে উপচে পড়ছে আর ইন্টারনেট স্পিড এর ধাক্কায় কিছু নেটওয়ার্ক ভারতেও চলে যায় মাঝে মাঝে। আপনি দেশের মধ্যে থেকে ইন্টারনেট আর 3 জি নেটওয়ার্ক নিয়ে মোবাইল কোম্পানি গুলোর এই মিথ্যাচার মোটেও টের পাবেন না। না পাবার কারণও অবশ্য আছে। কারণ আপনি ঠিক যেখানে আছেন সেখানে আপনি 3 জি নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন আর ভাবছেন সারা দেশে একই অবস্থা। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে গেলে হয়তো একটু সমস্যায় পড়েন কিন্তু শহরে ফিরে আসার পরই তা ভুলে যান আপনি। আপনার এই অদ্ভুত ভাবে ভুলে যাবার ক্ষমতাকে টেলিকম অপেরাটররা সাধুবাদ জানায়। কারণ গ্রামে থাকা আপনার স্বজনরা এতটা আপডেটেড না এই ইস্যু নিয়ে আগে বাড়িয়ে কথা বলবে।

খুব বেশি এনালাইসিস করার দরকার নেই। আজকে আপনি শুধু দেশের প্রধান দুই অপারেটরের নিজস্ব সাইটে নিজেদের 3 জি কাভারেজ ম্যাপ এর অবস্থা দেখেন। বুঝতে পারবেন আপনি কোথায় আছেন।

https://www.grameenphone.com/personal/internet/see-also/coverage-map

এটা গ্রামীনফোনের 3 জি নেটওয়ার্ক ম্যাপ যা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে থেকে নেয়া। দূর থেকে দেখলে আপনি ভাববেন পুরো বাংলাদেশটাই 3 জি নেটওয়ার্কের আওতায়। একটু অপেক্ষা করুন আর জুম করে আরেকটু বড় করুন ম্যাপ টা।

এবার বুঝলেন আসল কাহিনীটা কি? দেশের যে জায়গা গুলোতে 3 জি নেটওয়ার্ক এখনো কভার করা নেই ওই জায়গা গুলোতে বড় করে 3 জি এর একটা লোগো। আপনি খাতা কলম নিয়ে হিসেবে করে দেখতে পারেন মোটের উপর ৫০ ভাগ বাংলাদেশও কিন্তু 3 জি এর আওতায় নেই।

এই কভারেজ দিয়ে যদি নিচের এই বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে আপনি কি ভাববেন?

https://www.robi.com.bd/internet/35g-internet/35-g-coverage/?lang=eng

এবার আসি রবি এর নেটওয়ার্ক নিয়ে। রবি অবশ্য ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে নাই। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে দেশের ৩০ ভাগ জায়গায়তেও রবির 3 জি নেটওয়ার্ক নেই।

খুব সম্প্রতি শেষ হওয়া LTE কনফারেন্সে মোবাইল অপেরাটররা 4 জি নেটওয়ার্ক নিয়ে আসার ঘোষণা দিলেন। যেখানে 3 জি এর সেবা দিতে পারছে না এই প্রতিষ্ঠান গুলো সেখানে 4 জি কিভাবে আনবে আমার জানা নেই। তবে যদি ঢাকা বা চট্টগ্রামের কিছু অভিজাত এলাকায় এই সেবা দিয়ে টিভিতে সারা দেশের কথা বলে বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে হয়তো সম্ভব। কারণ প্রকারান্তে কভারেজের বাইরে থাকা লোকগুলো হয়তো এই চটকদার টিভি বিজ্ঞাপন থেকেও বঞ্চিত।

বিশ্বের দ্রুত ইন্টারনেট স্পিডের দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারত আর শ্রীলংকার নাম আছে আর আমাদের নাম নিচে থেকে খুঁজলে পেতে পারেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে এই সব অপারেটরকে ধাক্কা দিয়ে ঢাকা থেকে বের করতে হবে। কারণ জুকারবার্গ যে ঢাকাতেই জন্মাবে তার গেরেন্টি কেও দেয়নি।

দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সাধারণ সুবিধার আওতায় না আনতে পারলে দেশে ডিজিটাল বিপ্লব সম্ভব না। আর টিভি বিজ্ঞাপনের উপর ভিত্তি করে তরুণ সমাজ যে স্বপ্ন দেখছে তা কখনোই পূরণ হবার নয়।

বি টি আর সি এর উচিত এই কভারেজ বাড়ানোর জন্য অপেরাটরদের চাপ দেয়া। কারণ আইননানুগ ভাবে চুক্তি না থাকলে যেকোনো অপারেটর সামনে আর নেটওয়ার্ক কাভারেজ না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বসতে পারে। বি টি আর সি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এখুনি এই সব অপেরাটরদের সাথে কভারেজ নিয়ে কথা বলা উচিত এবং তা না হলে টিভিতে প্রচার করা এদের বিজ্ঞাপন বদ্ধ করা উচিত। অন্তত বাংলাদেশ আর মিথ্যে স্বপ্ন দেখবে না।