আমাদের নারীরা কবে বিশ্বমানের হবে?

আশরাফুল আলম
Published : 22 Jan 2017, 06:22 AM
Updated : 22 Jan 2017, 06:22 AM

স্মরণকালের সবচেয়ে বড় নারীবাদী মিছিলটি হয়ে গেলো বিশ্বব্যাপী। শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরে বিশ্বের নানান শহরে। তবে এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের নারীরা। হয়তো সকালে কি নাস্তা বানাবে তার কথা চিন্তা করছে বা স্টার প্লাস সিরিয়ালে কি ঘটলো আজ তা নিয়ে গবেষণা করছে। এই নারীরা কিভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলাবে? যেখানে বিশ্বের খবরগুলো এরা পায়, খবর যখন ইতিহাস হয়ে যায় তখন। আমি জানি সকাল হতে হতেই ফেসবুকে ঝড় উঠবে এই নারীবাদী আন্দোলনের। কিন্তু এতো দেরিতে কেন? কি সমস্যা আমাদের নারীদের মাঝে? নাকি এখনো আমাদের নারীরা পরাধীন? সমস্যাটা আমাদের নারীদের জীবন ধারায়। বেশিরভাগ আমাদের জীবনযাত্রা বা ফেসবুকে পোস্টিং নির্ভর করে অন্যের উপর। আমরা আগে দেখি কোন খবরটা বেশি শেয়ার হচ্ছে বা কোন খবরটা বেশি লাইক পাচ্ছে। এরপর হয়তো নিজে লাইক দেই বা শেয়ার করি। শেষ কবে আপনি নিজে একটা খবর সবার আগে পোস্টিং দিয়েছেন? মনে পড়ছে না? এর কারণ আপনি এই ধরনের কিছু হয়তো কখনোই করেন নি।

সারাটাদিন নিউইয়র্কে নিজের এপার্টমেন্টে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন দেখবো বাংলাদেশ থেকে কেউ এই ধরনের নারী জাগরণের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেলেও কাউকে পেলাম না। পাশের দেশ ইন্ডিয়া আর নেপালের কিছু নারীকে দেখে ভালো লাগলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু দিল্লী বা নেপালের নারীরা যদি এই আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত করতে পারে তবে আমাদের ঢাকার নারীরা কোথায়? একজনও কি এই মুহূর্তে সিএনএন বা বিবিসি দেখছে না? হয়তো তাই। যে মুহূর্তে রাতের খাবার প্লেট ধুতে ব্যাস্ত থাকে রমণী সেই মুহূর্তে আমার এই রকম আশা করাটা একটু বেশি বেশি।

আমার দুই মেয়ে। একজনের জন্ম লন্ডন শহর আর একজন মার্কিন নাগরিক। এই মুহূর্তে মায়ের সাথে দেশে আছে। মন খারাপ করে আমার স্ত্রীকে ফোন দিলাম। বললাম আমার একটা ছবি চাই ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য। স্যাম্পল দিলাম নেপালের নারীদের একটা ছবি। ওই দিক থেকে শুনলাম "বাচ্চা ঘুমাচ্ছে এখন সম্ভব না" তবে অনেক পীড়াপিড়িতে ছবি পেলাম। টিভির স্ক্রিনে দেখলাম কিভাবে বাচ্চা কোলে নিয়ে মেয়েরা মিছিল করছে বক্তৃতা দিচ্ছে। মনটা আরো খারাপ হলো। কি আছে এই নারীদের যা আমাদের নারীদের নেই? ওয়াশিংটনের এই নারীরা এখনো পুরুষের চেয়ে কম বেতনভুক্ত এখনো এরা নিজের ইচ্ছেমতো গর্ভ ধারণ বা গর্ভপাত কোনোটাই করতে পারে না। এখনো এই নারীদের পণ্য হিসেবে দেখে সমাজ। তবে এরা সবাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রে থাকে। যেখানে আমাদের নারীরা প্রতি রাতে উড়াল দেবার স্বপ্নে বিভোর থাকে।

কি পাচ্ছে না আমাদের নারীরা? প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদের সব নেত্রী নারী। তাহলে কেন এই নারীরা পিছিয়ে? কেন নারী সংগঠনগুলোর ফেসবুক পেজে পুরুষ সদস্য বেশি? এই লজ্জা নারীদের না পুরুষের আমার জানা নেই? আজকের এই র‌্যালি শুরু হয়েছিল নারীদের অধিকার নিয়ে। শেষ হচ্ছে প্রায় সব ধরনের অধিকার আদায়ের র‌্যালি হিসেবে। নারীদের শুরু করা আন্দোলন হঠাৎ করেই সামগ্রিক আন্দোলনে রূপ নিলো! নারী আবার প্রমাণ করলো সবকিছু ধারণ ক্ষমতা কেবল তারই। আমাদের সমাজের ঝিমিয়ে পড়া নারীদের নাড়া দেবে কে? যারা এখনো বসে থাকে পাশের নারী কি করছে সেটা ফলো করার জন্য। কবে এরা নিজেদের ভালো নিজেরা বুঝবে তা আমার জানা নেই।

আজকে এই জঘন্য নিশ্চুপতা আবারো প্রমাণ করলো আমাদের নারীরা কোনোভাবেই বিশ্বমানের না যদিও সুযোগ-সুবিধা অন্যের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। ভাবতে খুবই খারাপ লাগছে। আমার দুইটা মেয়ে। এরাও কি বিশ্বমানের হবে না?

#womansmarch