ভারতের বাংলাদেশ দখল: ফ্যাক্টশিট ও নিয়মাবলী

আশরাফুল আলম
Published : 13 April 2017, 03:11 AM
Updated : 13 April 2017, 03:11 AM

শেষ কবে আপনি বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকিয়েছেন? খুব সম্ভবত প্রাইমারি স্কুলে থাকাকালীন। একবার আবার দেখুন। এবার অন্যভাবে। অবাক হবেন। ভারত আর বাংলাদেশের মানচিত্রে দুটি চিকেন নেক বা সুক্ষ্ম রেখা আছে যার একটি শিলিগুড়িতে আর একটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফেনীতে। শিলিগুড়ির এই সুক্ষ্ম রেখাটাই ভারতকে এর উত্তর-পূর্ব  প্রদেশের সাথে আটকে রেখেছে। এই একটি মাত্র পথ ছাড়া মূল ভারতের পক্ষে এর উত্তরের সাতটি প্রদেশের সাথে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব। তবে আরেক ভাবে সম্ভব। যদি বাংলাদেশের উপর দিয়ে যায় তবে। ঠিক একই জিনিসটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফেনীতে। চট্টগ্রামের এই অংশে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা রেখা এতটাই কাছাকাছি যা রাস্তা থেকে দেখা যায়। একপাশে ভারতের বর্ডার আর অন্য পাশে বঙ্গপোসাগর। এই ধরনের চিকেন নেক সীমারেখা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য খুবই স্পর্শকাতর। কারণ সুক্ষ্ম এই রেখাটা যদি কেটে যায় চট্টগ্রাম যেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে ঠিক তেমনি ভারতের উত্তর-পূর্ব সাতটি রাজ্য। সাধারণ আমরা এই ব্যাপারটিকে হালকাভাবে নিলেও সামরিক বাহিনী কখনই এইগুলোকে হালকা ভাবে নেয় না। ব্যাপারটা সার্বভৌমত্বের।

ফ্যাক্ট নম্বর এক কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব  শহরে যেতে হলে শিলিগুড়ি দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। যাতে সড়কপথে সময় লাগে প্রায় ২৭ ঘন্টা। আর যদি এই পথ বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে হয় তবে সময় লাগবে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা। আপনি যদি একজন ভারতীয় হতেন আপনি অবশ্যই চাইতেন এই পথ ১৬ ঘন্টার হোক। ভারতও অবশ্যই এটি চাইবে। কিন্তু কেন এই পথের ব্যাপারে ভারত এতো দেরি করছে সেটিই প্রশ্ন। আমরা কখনোই চাইবো না আমাদের দেশের উপর দিয়ে এই রকম একটি পথ হোক। কিন্তু এতো দিন ভারত কেন চায়নি বা এখনই বা কেন এতো তাড়াহুড়ো করছে না?

উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলো প্রচন্ড অস্থির। শিলং আসাম বা মিজোরামের মতো শহরগুলোতে এখনো সান্ধ্য আইন চলে। সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এই রাজ্যগুলো নিয়ে মুখ ভারত বেশ বেকায়দায় আছে। বিচ্ছন্নতাবাদ এতটা প্রকট কোন ভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, আর পারার কথাও না। কারণ মূল ভারতের সাথে এই রাজ্যগুলোর তেমন একটা যোগাযোগ বা মিল কোনোটাই নেই। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ মাঝামাঝি থাকায় ভারতের এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সরাসরি মূল ভারতের সীমানা চোখে দেখে না। আর বাংলাদেশ এদের কাছে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র। আমাদের সিলেটি ভাইরা অবাধে শিলং এর মতো শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এই শহরগুলোর রেস্টুরেন্টে আমাদের বাংলা সিনেমার গান বাজে। অনেকটা বাংলাদেশ প্রিয় এই রাজ্যের বাসিন্দারা। সম্ভবত এই একটি কারণেই বাংলাদেশের সীমারেখা ভারতের কাছে এতো প্রিয়। কারণ আপনি যদি মানচিত্র থেকে বাংলাদেশকে মুছে দেন তাহলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ডার পড়বে আসাম বা শিলং এর সাথে। আর পশ্চিমবঙ্গ এখনো এই উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধকল সামলাতে প্রস্তুত নয়। সুতরাং বাংলাদেশের সীমারেখা অনেকটা মূল ভারতকে রক্ষা করছে সামরিকভাবে।

ফ্যাক্ট নম্বর দুই কিভাবে আপনি বুঝতে পারবেন ভারত বাংলাদেশ কিনে নিয়েছে (আপেক্ষিক ভাবে)? খুবই সহজ। যেহেতু ভারত বাংলাদেশেকে মানব বর্মের মতো রাষ্ট্র বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে সেহেতু যতদিন ভারতের উত্ত-পশ্চিমের সান্ধ্য আইন না উঠবে ততদিন অন্তত বাংলাদেশ নিরাপদ।

ফ্যাক্ট নম্বর তিন ভারত কেন বার্মাকেও বন্ধুরাষ্ট্র ভাবে? কলকাতা থেকে মিজোরাম পর্যন্ত সড়ক পথে প্রায় তিন দিন লেগে যায়। তাই ভারত বার্মার উপর দিয়ে একটা সড়কপথ ব্যবহার করে এই দুরত্ব কমাচ্ছে। যেহেতু বার্মার সড়কপথ ব্যবহার করছে সুতরাং বার্মার সাথে সম্পর্ক তো ভালো থাকবেই। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চাইছে এই পথের জন্য। কারণ একটা জাহাজ কলকাতা না গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসলে সময় এবং খরচ দুটোই কমে যায়। এই জায়গায় সম্ভবত মূল সমস্যা। কারণ যেহেতু আগেই বলেছি চট্টগ্রাম একটা সুক্ষ্ম চিকেন নেক বা শুরু রেখা দিয়ে বাংলাদেশের সাথে জড়িত সেহেতু চট্টগ্রামকে নিয়ে মাথা ব্যাথা হতেই পারে।

তাহলে কিভাবে বুঝবেন চট্টগ্রাম সামরিকভাবে অনিরাপদ একটা ভূখণ্ড? বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সেনানিবাস গুলোর অবস্থান দেখুন। বুঝতে পারবেন সমস্যা কতটা গুরুতর।

ফ্যাক্ট নম্বর চার কেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সাথে মিশে যাচ্ছে না? কারণ বাংলাদেশ যত বেশি কলকাতা ঘেঁষা হবে তত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিশানায় পরিণত হবে। সুতরাং চাইলেই বাংলাদেশ কলকাতা হয়ে যেতে পারবে না। নিশ্চিন্ত থাকুন। লক্ষ্য করলে দেখবেন নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে। এবং এটাই সামরিক ভাবে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়তো দেশবাসীকে পরিষ্কার করে দিবেন আসলে কি এমন সামরিক চুক্তি হয়েছে ভারতের সাথে। কিন্তু যারা বারবার বলছেন সামরিক চুক্তির কথা তারা কি একবার ভাবছেন না যে সামরিক চুক্তি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মাঝে হয়। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করাকেই দুই দেশের সামরিক বাহিনী প্রাধান্য দিবে। সামরিক বাহিনী কোনো ভাবেই চেইন অফ কমান্ড এর বাইরে যাবে না। যেমনটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আমেরিকার বা জাপানের আছে অনেকটা ওই রকম। আর এই ধরনের কিছু হয়ে থাকলে ঐটা কখনই রাজনৈতিক কিছু না। ব্যাপারটা সামরিক।

ভারত প্রীতি বা ভারত বিদ্বেষ এই দুটোই কিন্তু মানচিত্রের মাঝে আছে। যখনই আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে এই মানচিত্রগুলো নিয়ে ফ্যাক্টশিটগুলো চেক করে নিবেন, উত্তর পেয়ে যাবেন। কারণ সমস্যা একদিনের না। এটি রবীন্দ্রনাথের আমল থেকে শুরু। ষড়যন্ত্র আগরতলা হলেও সাহায্য আসে অপর প্রান্ত থেকে। বুঝতে হবে।