একজন আতর আলী

আতাস্বপন
Published : 22 Sept 2012, 06:33 AM
Updated : 22 Sept 2012, 06:33 AM

লোকটার নাম আতর আলী। নাম শুনেই একটা পবিত্র সুবাস নাকে ভেসে আসে। অথচ সে তার নামের পুরোপুরি বিপরীত পেশার একজন। সারদিন দুর্গন্ধের মাঝে তার বাস। একটি এনজিও অফিসের টয়লেট ক্লিনার সে। তার বউ সফুরাও একই অফিসে বুয়ার কাজ করে। অফিস ঝাড়পোছ করাই তার কাজ।

কামাল আর কুসুম তার দুই ছেলে মেয়ে। কুসুম মাঝে মাঝে অফিসের রুম ছারপোছে সহায়তা করে। বয়স কত হবে, ছয় কি সাত এরকম। ব্রাক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে। অফিসে অন্যান্য জিনিসের চেয়ে কম্পিউটার গুলোর প্রতি তার আকর্ষন বেশী। মাঝে মাঝে মনিটরের দিকে তাকিয়ে কি লেখা হচ্ছে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বানান করে পড়ার চেষ্টা করে।
কম্পিউটার অপারেটর হাসান বহুদিন হল এ অফিসে আছে। কুলসুমকে সে খুব স্নেহ করে। বিভিন্ন উৎসবে কুলসুম এসে পা ধরে সালাম করে। তখন তাকে বখশিস দিতে চাইলে নিতে চায় না সে। ইতস্তত করে বলে,

আপনের কাছে টেকা চাইছি? টেকা নিলে মায় মারব।
মারবে ! মারবে কেন? নে কিছু কিনে খাস।
না ছার! মায় কইছে কাম কইরা টেকা নিতে হয়। আতুঁর লুলারা কামকাইজ পারেনা হেইলাইগা মাইগা খায়। আমিতো আর আতুঁর লুলানা!
বাহ! এতটুকু মেয় কি চটপট তার উত্তর । বিস্ময়ে আবিভূর্ত হয় হাসান।
কুলসুম!
জি ছার
যাতো এই গ্লাসে করে আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়
অহনই আনতাছি ছার
এক দৌড়ে গ্লাস ভরে পানি নিয়ে আসে সে।
নে এবার টাকাট রাখ। পানি আনার জন্য আমি তোকে দিলাম। তুই ভিক্ষা করিসনি কাজ করে উপার্জন করেছিস।
আজ সফুরা অফিস ঝাড়ু দিতে আসেনি। অফিস ঝারপোছ করছে কুলসুম। ব্যপারটা হাসানের কাছ ভাল লাগল না।
কিরে কুলসুম! তোর মা কোথায়? তুই কেন কাজ করছিস?
আমার বইন হইছে। মায়ে কয়দিন আইবনা।
ভাল! খুব ভাল খবর। তোর মাকে বেশী বেশী শাকসবজী খেতে বলবী। আর এই টাকাটা রাখ তোর বোনের জন্য আমার উপহার। তোর বাবাকে একটু ডাকতো, কোথায় সে?
ঐহানে ধোয়াধায়ি করে।
যা ওরে একটু আসতে বল
বাপজান! ও বাপজান! তোমারে ছারে ডাহে।
ছার আমারে ডাকছেন?
তুমি কি বলতো, এত ছোট্ট মেয়াটাকে দিয়ে এসব কাজ করানো কি উচিৎ হচ্ছে তোমার?
গরিবের মাইয়া ছার এইসব কইরাই খাইতে হইব। অহন থেইকা টেইনিং দেয়া থাকলে ভালা হইব। আমি ঠিক করছি অরে আর পড়ামুনা। বউয়ে কয় মাইয়ারে পড়াইব। কেলাস টু তক পড়ছে আর কতো পড়বো। পড়া লেহা মাইয়াগো লাইগা না ! কামকাইজ হিগলে বিয়া দিয়া দিমু। তয় পোলাডারে পড়াইতাছি বুড়া কালে কামে লাগবো। মাইয়াগো পিছে টাহা পয়সা খরচ কইরা কোন ফয়দা নাই। অগো মেলা যতনের দরকার নাই। আগাইছা কিসিমেরতো ! এমনেই বাড়ে।
এসব কি বলছ তুমি।
সত্যই কইতাছি ছার। বউয়ের আরেকটা মাইয়া হইছে। কনত দেহি কি যনতনা!
কথা বাড়ায় না হাসান। এমন ধ্যানধারনা যে মানুষের তার সাথে কথা বলা বৃথা। তবে নিজেই নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিভাবে আতার আলীর এ দৃষ্টি ভংগী বদলাবে? আরও কত আতর আলী আছে আমাদের এ সমাজে।
পশিষ্ট: কিছুদিনের মধ্যে সফুরার নবজাতক মেয়েটা মারা যায় নিমুনিয়ায়। ডাক্তার দেখানো জন্য স্বামীর পায়ে পড়েছিল সে। লাভ হয়নি।
ডাক্তর দেখাইতে টাহা লাগে । টাহা কি তোর বাপে দিব।
পিছ্চি মাইয়াটা কষ্ট পাইতাছে।
কস্ট পাওনের লাইগাতো জম্মাইছে। আরাম পাইব কেমনে?
মইরা যাইবতো । একটু রহম করেন।
বেশি পেচাল ভালা লাগেনা। মরলেতো ভালাই। আপদ খতম।

সমাজে আজো হাজার হাজার আতর আলী আছে আমাদের আসে পাসে । যাদের কারনে কন্যা শিশুরা যুগে যুগে নির্যাতিত হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। অধুনা শিক্ষিত সমাজেও হানা দিয়েছে এ নিকৃষ্ট মানসিকতা। জরায়ুতে কন্যাশিশুর ভ্রুণ নষ্ট করে ফেলছে।এ দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন প্রয়োজন। এ দায়িত্ব আমাদের সকলের। আর যেন অযত্নে অবহেলায় ঝড়ে না যায় এসব ফুলের কলিরা। এ প্রত্যাশায়ই বুকের গভীরে বাজে-

আমরা করব জয়
আমরা করব জয়
আমরা করব জয় একদিন
ও বুকের গভীরে আমারা জেনেছি
আমরা করব জয় একদিন

We shell over come
We shell over come
We shell over come some day
Deep in my hart
We do believe
That we shell over come some day