ব্লগিং যেন আজ আতঙ্ক আর শঙ্কার এক নাম

আতাস্বপন
Published : 30 March 2015, 10:42 PM
Updated : 30 March 2015, 10:42 PM

ব্লগিং যেন আজ আতংক আর শংকার এক নাম। কেন? আরও একজন ব্লগারের মৃত্যু হল। কেন? তারা নাস্তিক এ কারনে? নাকি তারা উস্কানীমুলক লেখা লিখেছে এ জন্য? নাকি তারা মুক্তমনা এ জন্য? আসলে কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুই কাম্য নয়। কথা হলো মানুষ অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্বীকার হচ্ছে। এর প্রকোপ বাড়ছে। কেন?

ব্লগে যারা লেখে তারা সবাইতো তাদের ব্যাক্তিগত মতামত তুলে ধরে। এটাতো দোষের না। তথাপি কেন এই আক্রমন? কেন এই হত্যা? ব্লগিং এর মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ বর্তমানে অন্যকারো স্বাধীন চিন্তা বা বিশ্বাসকে অপমানিত করছে না তো?

আবার সে অপমান ক্ষোভ এ রূপান্তরিত হয়ে আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো এহেন কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে না তো?

উত্তরগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ব্লগিং একটা ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। বাংলাদেশে এখন অনেক ব্লগ আছে। নামকরা ব্লগগুলোতে ব্লগিং এর ক্ষেত্রে সম্পাদক এর এডিটিং এর স্বীকার হতে হয় ব্লগারকে। সেখানে সেটাই প্রকাশিত হয় যা সবার কাছে মোটামুটিভাবে গ্রহনযোগ্য। এটাই উচিৎ। লাগামছাড়া ব্লগিং বিপদজনক। এটা আজ কয়েকজন ব্লগারের মৃত্যুতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

লেখক বলেন ব্লগার বলেন ফরমাইসি লেখা যে লেখে সে আসলে প্রকৃত অর্থে একজন ব্যবসায়ী। লেখক না। একজন লেখক বা ব্লগার তার মনের বিশ্বাসটাই লিখবে এটা সত্য। লেখার ক্ষেত্রে বা ভাবার ক্ষেত্রে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু তার ভাবনা জনসম্মক্ষে প্রকাশের ক্ষেত্রে তাকে কিছু নিয়মতো মানতেই হবে। লেখার ক্ষেত্রে ভাবনার জগৎটা একান্তই নিজস্ব। তাই সেখানে যেমন চাইলাম তেমন ভাবলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ভাবনাটা প্রকাশ করলে সেখানে জানছে সবাই। যার মধ্যে কেউ হযতোবা এ ভাবনার পক্ষে কেউ বিপক্ষে। কেউ এ ভাবনায় সহমত আবার কেউ দ্বিমত ও বিক্ষুব্ধ। নানা ধরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। তাই কোন ভাবনা জনসম্মুক্ষে প্রকাশের পূর্বে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবা যুক্তিযুক্ত নয় কি?

সমাজের সব মানুষ এক রকম হবে বা সবার ভাবনা এক রকম হবে এটা ভাবা সত্যাই বোকামী। এখানে সব দর্শনের লোকই থাকবে। থাকবে তাদের ভাবনাও। সমমনা যারা তাদের সাথে যে যার যার ভাবনা খোলাখুলি শেয়ারে কোন আপত্তি নেই। তবে আম ভাবে সবার মাঝে ভাবনা শেয়ার করার ক্ষেত্রে একটু ভাবতেতো হবেই।কারন এ ভাবনায় কারো স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে নাতো? কোন গোষ্ঠি বিক্ষু্ব্ধ হচ্ছে না তো?

সে যা ভাবছে তাই একমাত্র সত্য এটা নাও হতে পারে? নিজের মতামতকে জোর করে অন্যদের কাছে চাপিয়ে দেবার প্রবনতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে।নিজের মতকে সঠিক ভেবে বিপরীত মতাদর্শকে নগ্ন আক্রমন করে নিজেকে স্পষ্টবাদি প্রমান করার চেষ্টা করা কোন ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।

আমার মতাদর্শের সম্মন রক্ষাই আমাকে অন্যের মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে কোন বিশ্বাস বা কোন বিষয়ে কোন সংশয় বা কোন মন্তব্য থাকলে তা শালিন ভাবে যুক্তযুক্ত পন্থায় করাটা বাঞ্ছনীয় নয় কি?

আজ ব্লগিং হুমকির সম্মুক্ষীন। কেন? একদম সোজা উত্তর আমরাই নষ্ট করেছি একটি মহৎ উদ্রোগকে। লাগমা ছাড়া ছুটে। ব্লগার আর ব্লগিংকে শত্রু বানাচ্ছি । অথচ এটা তেমন ব্যাপরই না।

কী দরকার আছে কোন ধর্ম বা গোষ্টিকে কটাক্ষ করে ব্লগ প্রকাশের? যার যার ভাবনা তার তার কাছে থাক না। সর্বজনে প্রকাশের কী দরকার। এই ভাবনা তো একমাত্র সত্য নাও হতে পারে? নিজেদের সবজান্তা ভাবাটাই শেষে কাল হচ্ছে না তো? একটু ভেবে দেখা দরকার।

ব্লগিং এর মাধ্যমে যে গোষ্ঠীর বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্থ হলো তার সবাই কি ব্লগিং সম্পর্কে জানে? না জানে না।এটাই বর্তমানের মিডিয়াতে উঠে এসেছে। না জেনেই ব্লগাদের উপর ক্ষোভ শেষে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যাকারী শুধু জানে তার বিশ্বাসকে খুন হওয়া ব্যাক্তি আঘাত করেছে। সে একজন পাপি। এটা সে ব্লগ সচেতন কোন ব্যাক্তি থেকে নিশ্চয় জেনেছে। যে হয়তো তাকে এ বিষয়ে উৎসাহ যুগিয়েছে। কথা হলো এমন আক্রমনাত্বক লেখা প্রকাশ করে কেন তাদের হত্যার পক্ষে যুক্ত উপস্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছি?

কিছু কিছু ব্লগারদের বোকামীর জন্য আজ সকল ব্লগারই নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। কখান কোন কারনে কাকে মেরে কোন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। দেখা যাচ্ছে যে সকল ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে তারা বেশীর ভাগ সময়ই ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে তাদের ব্লগে মুক্তমান চিন্তা ভেবে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেছেন। ইসলাম ধর্ম সবাই মানবে বা সবার পছন্দ হবে এটা কখনোই যুক্তি যুক্ত নয়। তাই বলে যে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যে ধর্ম বিশ্বাস করে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল করে অনুভতিতে আঘাত করে এমন কথা বলা কি যুক্তিযুক্ত? এতে কি ব্লগারদের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ক্ষোভ বেড়ে যায় না? আর এ সুযোগে একটি গোষ্ঠি মানুষের আবেগককে পুজি করে তাদের কায্য হাসিল করেছ। ধর্মপ্রান মানুষ কখনো তার ধর্মকে কটাক্ষকারী ব্যাক্তির প্রতি সহানুভুতি দেখাবে না। তাই দেখা যায় অভিজিৎ রায় জনস্মুক্ষে হত্যা করা হলে তার স্রীকে আঘাত করা হলে তাকে হাসপাতালে নেযার জন্য মানুষ সাহায্য করতে আগ্রহ দেখায় নি। অথচ দেশে একজন শাসক থাকতে বা আইন আদালত থাকতে আইন নিজের হাতে তুলে হত্যাকারী যে ইসলামের একটি বিধান লংঘন করেছে তা ধর্মপ্রান মানুষ তখন ভাববার সুযোগ পায় না। কথা কেন এমন পরিস্থিতি হবে?

সামহোয়্যার ইন ব্লগ। এই ব্লগে ঢুকতে হলে অনেক ষ্টেপ পার হতে হয়। বিডিনিউজ২৪ ডটকম এই ব্লগে একটা লেখা প্রকাশ করতে হলে তাকে বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে করতে হবে। ঢালাও প্রকাশ হয না। লেখা সম্পাদনা বা এডিটিং হয়। এসব ব্লগে তাই লাগাম ছাড়া লেখার কোন সুযোগ থাকে না। এতে উক্ত ব্লগগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এবং মান সম্পন্ন ব্লগিং ও ব্লগার তৈরী হচ্ছে। এ ধরনের ব্লগগুলোই আসলে দরকার। লাগমছাড়া ব্লগ এর দরকার নাই। যারা শুধু ব্লগারদের নিরাপত্তাহীনতা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।