পথে হল দেখা

আতাস্বপন
Published : 12 June 2015, 07:04 PM
Updated : 12 June 2015, 07:04 PM

আজ পল্টন গেলাম। জোহরের নামাজের সময় হওয়ায় পল্টন মসজিদে নামাজ পড়লাম। মসজিদ থেকে বেড়িয়ে দেখি একটি ছেলে পিস পিস করে কেটে আনারস বিক্রি করছে। তার সামনে এক লোক দাড়িয়ে। অগুছালো উস্কখুস্খ চুল। গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়া। চেনা চেনা মনে হল লোকটাকে। ঠিক চিনেছি। কাছে গেলাম লোকটার।

আনারস ওযালা ছেলেটাকে বললাম, কিরে পিস কত করে?

এইখানে দুই পদের আছে একটা ১৫/- আরেকটা ১০/-
দুইটাইতো একই মনে হচ্ছে তা এতো ডিভাইটেশন কেন? দাম দুরকম কেন?

কী কন? একটা একটু বড় দেখেনে আর আরেকটা ছোট।

১০/- দামের এক পিস দে দেখি।

সে সময় ছেলেটি পাসে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির ফরমায়েস মত- কিছু পিস প্যাক করছিল।

আমার অর্ডার শুনে লোকটি ছেলেটাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আগে ওনাকে দাও। তারপর আমার টা।

আমি বললাম, তা কী করে হয়?

কিন্তু ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা। অগত্যা আনারসওয়ালা ছেলেটা আমাকে একটি পিস কুটি কুটি করে কেটে পিরিচে দিল।

আপানি কী করেন? জিজ্ঞাস করল লোকটি।

জি !একটা এন.জি.ও তে আছি। থাকি টংগি। আমার প্রতি লোকটার কৌতুহল দেখে আমি আগ বাড়িয়ে তার সাথে কথা বলতে লাগলাম। ভাই! আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি?

ভদ্রলোক উত্তর দেবার আগেই আনারস ওয়ালা ছেলেটি বলল, ওনারে চিনলেন না! ওনিতো অভিনয় করে। হুমায়ূন আহাম্মদের নাটাকে দেখছি।

আমিতো আগেই তাকে চিনেছি তারপরও এইমাত্র চিনলাম একটা ভাব নিলাম।

আরে তাইতো। এবার চিনেছি। আমিওতো নাটক করেছি।

তাই নাকি! তা কোথায়?

জি ! রুহিনি হোসেন প্রিন্স ভাই আছে না তার নাট্য দলে।

আকাশ থেকে পড়লেন লোকটি।

প্রিন্সে আবার নাট্যদল! তা কী নাম?

জি! নামতো জানি না । তবে পথ নাটাক করেছি। শিশু পার্কে আর জাতীয় সংসদের সামনে।

ভদ্রলোক কোন কমেন্টস করলে না।

আমি ভাবলাম উত্তরটা বোধহয় সুবিধার হয় নাই। প্রিন্স ভাইয়ে নাট্যদল আসবে কোথা থেকে। আসলে যে বিল্ডিংয়ে ওনাদের পার্টি অফিস সেখানেই আমাদের নাট্যাদলের এক গুরু থাকতো । আমাদের অফিসের নাট্যগুরু মোতাহার হোসেন পুষ্প তার শিষ্য। তার বদৌলতে নাট্যকলায় মাঝে মাঝে আগ্রহ দেখানো। আসলে ওনার সাথে একটু ভাব জমানোর জন্য ভাব নিয়ে কথাটা বলেছিলাম। তবে উনি ওতে মাইন্ড করেননি। একটু পরেই তা বুঝতে পালাম।

আমার আনারস খাওয়া প্রায় শেষ। দু'এক টুকরো তখনো পিরিচে রয়েছে। দাম দিতে যাব, সে সময় আনরসওয়ালা ছেলেটা তাকে তার প্যাকেটটা হাতে দিল। তখন লোকটি একটা কাণ্ড করল।

ওনার থেকে কোন দাম নিবিনা আমি ওনার দামটা দিয়ে দিচ্ছি।

ভ্যবাচ্যাক খেয়ে গেলাম আমি। এটাতো অপ্রত্যাশিত। এমন একজন বড় মাপের নাট্যাকার, মঞ্চনাটকের জনপ্রিয় মুখ, অভিনেতা, আমার বিল দিচ্ছে।

না না এটা কী করে হয়! আমি সংকোচ বোধ করতে লামলাম।

কিন্তু ভদ্রলোক দামটা দিলেনই দিলেন। আমিও তখন একটা কাণ্ড করলাম।

ভাই দাম যখন দিয়েছেন তখন নিন আমার হাতে একটা আনারসের টুকরো আপনিও খান।

লোকটা নির্বিঘ্নে তা খেল। এই সময় মোবাইলটাও নষ্ট। তার সাথে একটা সেলফি তুলবো তা আর হলো না। এরপর 'আসি তাহলে' বলে লোকটা হাঁটা ধরল। আমিও তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলাম, অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। লোকটা অস্থস্তিতে পড়লো। আমি বললাম ভাই ! বর্তমানে আপনার কোথায় রিহার্স্যাল হচ্ছে যদি বলতেন ।

মনিসিংহ ট্রাস্টে। এই বলে গটগট করে হেটে লোকটা দ্রুত হাওয়া হয়ে গেল।

এই অভিনোতার প্রথম যে নাটকটি দেখি তার নাম মনে নেই। তবে সুবর্ণা মুস্তফার সাথে একটা খণ্ড নাটকে তিনি ছিলেন। সে নাটকে তার একটি গান ছিল। করুণ গলায় তিনি গানটি গাইতেন।

আমার মনে বড় দুষ্ক…………………
ওরে বড় দুষ্ক আমার মনেরে…………………

এতক্ষনে আপনারা সেই লোকটিকে চিনে ফেলেছেন নিশ্চয়ই। তিনি হলেন জনপ্রিয় অভিনেতা শংকর সাঁওজাল।

***

07/06/2015