বয়লার বিস্ফোরণ কি কোনো ষড়যন্ত্র?

আতাস্বপন
Published : 11 Sept 2016, 07:56 PM
Updated : 11 Sept 2016, 07:56 PM


গত ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ টঙ্গিতে টেমপ্যাকো ফয়েলস ফ্যাক্টরিতে বয়লার বিস্ফোরনের ঘটনা সত্যই মর্মান্তিক ও দু:খজনক। ঈদের আনন্দ নিয়ে যাদের পরিবার পরিজনের সান্নীধ্যে থাকার কথা ছিল তারা আজ কেউ লাশ আবার কেউ হাসপাতালের বেডে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছে। এই পর্যন্ত জানা খবরে শ্রমিক, রিক্সা চালক ও শিশু সহ ২৬ জন নিহত হয়েছে। আরো লাশ থাকতে পারে ভিতরে। কথা হলো কেন এই বিস্ফোরন? এটাকি শুধুই একসিডেন্ট? এপর্যন্ত পরপর অনেকগুলো বয়লার বিস্ফোরন হয়েছে দেশে যা সত্যই শংকার বিষয়।

খবর : ১
পাবনায় বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত।বৃহস্পতিবার(২২ শে অক্টোবর ২০১৫) বিকেলে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণিষা ইউনিয়নের একটি চালকলের বয়লার বিস্ফোরণে গণেস চৌধুরী (৫০) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুইজন।

খবর: ২
আশুলিয়ায় গার্মেন্টসের বয়লার বিস্ফোরন, শিশুসহ অন্তত ১০। শনিবার(১৯ ডিসেম্বর ২০১৫)দুপুরে আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় এঘটনা ঘটে।

খবর: ৩
নেত্রকোনায় চালকলে বয়লার বিস্ফোরণ, ২ শ্রমিকের মৃত্যু। রবিবার (২১ শে আগাষ্ট ২০১৬)নেত্রকোনা পৌর এলাকার নগড়াস্থ বিনোদবিহারী দাসের চাতালে (চাল কল) বয়লার বিস্ফোরনে ২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

খবর:৪
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বয়লার বিস্ফোরনে চাতাল শ্রমিক গুরুতর অাহত। ফেব্রুয়ারী ২০১৬ এর ঘটনা।

খবর:৫
কাঁচপুরে বয়লার বিস্ফোরনে তিনজন নিহত । শনিবার (এপ্রিল ০২ ২০১৬) সোনারগাঁঁয়ের কাঁচপুর পূর্ব বেহাকৈল বটতলা এলাকার একটি টেক্সটাইল মিলে বয়লার বিস্ফোরনে আল-আমিন, হাবিবসহ তিন জন নিহত হয়েছে।

খবর: ৬
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বয়লার বিস্ফোরনে নিহত ২ : আহত ৩ । বুধবার (এপ্রিল ২০ ২০১৬)সকাল সাতটার দিকে ধান সিদ্ধ করার সময় জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের রামঈশ্বরগাতিতে নুরুল ইসলামের চাতালের বয়লার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

খবর: ৭
লালমনিরহাটে বয়লার বিস্ফোরনে ৬ শ্রমিক দগ্ধ।বৃহস্পতিবার (১৮ আগষ্ট ২০১৬) দুপুরে হাতিবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের ওই চাতালে এ দুর্ঘটনা ঘটে ।

খবর: ৮
টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণ: নিহত ২৬, ভবনে ধস । ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ শনিবার। টঙ্গিতে টেমপ্যাকো ফয়েলস ফ্যাক্টরিতে শনিবার সকালে বয়লার বিস্ফোরনের এই ঘটনা ঘটে।

অনলাইন থেকে সংগৃহীত খবরের এই ঘটনা গুলো একটু পর্যালোচনার দাবি রাখে। হঠাৎ করে কেন শুরু হল ধারবাহিক এই বয়লার বিস্ফোরন? এটাকি নিছক দূর্ঘটনা? না নাশকতা? না কোন ষড়যন্ত্র? এ আশংকা কি অমূলক? এটা কি শুধু মাত্র মালিকের অবহেলা বা বয়লার এর ক্রুটিজনিত কারন? ধারবাহিক ভাবে বয়লার গুলো নষ্ট হতে থাকল আর বিস্ফোরিত হল। এটাকেকি কাকতালিয় বলা যায়?

যদি ধরা হয় মালিকে অবহেলা। তাই বলে এমন পরপর সবগুলো বিস্ফোরিত হবে? দেখা যাচ্ছে ২০১৬'তেই পর পর ৬টি বিস্ফোরনের ঘটনা। এটা কি ভাববার বিষয় নয়? এ ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত দরকার। যে কারনেই হোক বয়লার বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছে অসহায় শ্রমিক। মালিকেরতো কিছু হচ্ছে না। মালিকতো ইন্সুরেন্স থেকে তার ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেবে। কিন্তু আহত আর নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো চিরকালের মত পঙ্গু হয়ে যায়। দেশের শ্রমিক আর শ্রম বাজার ধংসে নতুন কোন দেশি বা বিদেশি ষড়যন্ত্রের স্বীকার নয়তো বাংলাদেশ?

টঙ্গীর দুর্ঘটনাকবলিত প্যাকেজিং কারখানা পরিদর্শনে যান স্থানীয় এম.পি জাহিদ আহসান রাসেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। মন্ত্রী বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মালিকের কোনো গাফিলতি আছে কি না, কমিটির সদস্যরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আশা করি শুধু মালিকের গাফলতি টার্গেট করে কমিটি তদন্ত করবে না সার্বিকভাবে এটা নিয়ে ভাববে ও তদন্ত করবে।

আশংকা আর শংকার এ ক্ষনে টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরেন নিহত-আহত ভাইদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।