যুবকের আরটিভি প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্তি ও কিছু অজনা কথা

আতাস্বপন
Published : 27 Dec 2016, 02:50 AM
Updated : 27 Dec 2016, 02:50 AM

আজ এক যুগ পূর্তি হলো যুবকের আরটিভি প্রতিষ্ঠার। কিন্তু কার জম্মদিন কে পালন করছে? এ প্রতিষ্ঠানটি হতে পারতো যুবকের গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের একটি মাধ্যম। কিন্তু তা হয় নি। তাইতো যুবক সংশ্লিষ্টদের মনে ক্ষোভ ফুটে উঠে । যুবক সংশ্লিষ্টদের একজন বলেন, দুঃখ হয়! বেহায়া অবৈধ দখলকারী মোর্শেদ খান এমপি, বেঙ্গল প্লাস্টিকের চেয়ারম্যান হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েও বিনা টাকায় যুবক-এর আরটিভি'র মালিকানা ভোগ করছে। যার প্রতিমাসে আয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। আজকের এই আনন্দের দিনটি হওয়ার কথাছিল যুবক পরিবারের। মিডিয়া নীরব, সরকার নীরব, যুবক পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্নতায় কিছু করতে পারছেনা। অথচ আরটিভির বর্তমান অবৈধ মালিক বেঙ্গল প্লাস্টিকের চেয়ারম্যান মোর্শেদ খানের কাছে শতকোটি পাওনা হবে যুবক পরিবার। এই টাকা আদায় করা সম্ভব হলে জমির মাধ্যমে যুবক সদস্যদের ৫০০ কোটি টাকা পাওনা সমন্বয় করা সম্ভব হবে।


আর টিভি ছিনতাই বিষয়ে যুবক এর একজন পরিচালকের বিবৃতি——-
৪২ দিন নির্যাতন সেলে আটক রাখার পর মুক্তি দেয়া হয়। তারপর থেকে সপ্তাহে ২/১ বার হাজিরা দিতে হতো। অক্টোবরের শেষের দিকে লে. কর্নেল সাহেব আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জানালেন- 'সরকার জনগণের সম্পদ আরটিভি পুরো শেয়ারসহ অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আরটিভি'র পরিচালকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। সে অনুযায়ী যুবক পক্ষের পরিচালকদের স্বাক্ষর প্রদানের জন্য ১১৭ ফরমসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয় এবং স্বাক্ষর করে তবেই ডিজিএফআই ত্যাগ করার নিদেশ দেন। দাম পরিশোধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পরে জানাবেন বলে জানান। পরবর্তী দিবস থেকে যুবক পক্ষের কাউকে আরটিভি ক্যাক্সাসে না যাবারও নির্দেশ দেন।

কিছুদিন পর মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, বেঙ্গল গ্রুপ আরটিভি'র ১০০ ভাগ শেয়ার ক্রয় করে মালিকানা দখল বুঝে নিয়েছে। বিষয়টি লে. কর্নেল সাহেবকে জিজ্ঞেস করায় তিনি জানান, এটা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে। আরটিভিতে যুবক-এর বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে। এ বিষয়ে দুয়েকজন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করার কারণে কর্ণেল সাহেব ডেকে সাফ জানিয়ে দিলেন, আরটিভি বিষয়ে আর কারো সাথে আলাপ করলে বিপদ হবে। অবশেষে নভেম্বর মাসে ডিজিএফআই মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদনপত্র লিখে পাঠাই। পত্রে আরটিভি ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। নভেম্বরের শেষের দিকে ডিজিএফআইয়ের দুইজন পরিচালক (ব্রিগেডিয়ার) আমাকে ডেকে পাঠান।

যুবক-এর পরিচালক রাশেদকে সাথে নিয়ে আমি সাক্ষাৎ করি। দীর্ঘ সময় ধরে উক্ত দু'জন পরিচালক মহোদয় অত্যন্ত মনোযোগের সাথে ডিজিএফআই এবং যুবক-এর সম্পর্ক ও লেনদেন বিষয়ে অবগত হন। আলোচনা শেষে এই দুই মহৎ কর্মকর্তা যুবক-এর প্রতি অন্যায়-অবিচারের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং প্রতিকারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আরটিভি'র শেয়ার এবং পজিশন ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

ডিসেম্বরে উক্ত দু'পরিচালকের আহ্বানে বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান অপর পরিচালক লুৎফর রহমান বাদল এবং যুবক পক্ষের পরিচালকদের উপস্থিতিতে ডিজিএফআই ভবনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব মোরশেদ আলম স্বীকার করে বলেন, যুবকের শেয়ারের বিপরীতে যেহেতু তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করেননি, তাই তিনি শেয়ারগুলো ফেরত দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে জনাব মোর্শেদ আলম যুবক-এর শেয়ার ফেরত প্রদানের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবেন।

কিন্তু নির্দিষ্ট ৩ দিনে কাজ না হওয়ায় ডিজিএফআই পরিচালকদ্বয় পুনরায় আরটিভি'র সকল পরিচারককে ডেকে পাঠান। সেদিন বৃহস্পতিবারের আলোচনায় পরবর্তী শনিবারের মধ্যে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জনাব মোর্শেদ আলম প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ হলো না। শনিবারের মধ্যেও কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় ডিজিএফআই পরিচালকদ্বয় পুনরায় আরটিভি'র পরিচালকদের ডেকে পাঠান। জনাব মোর্শেদ আলমের পরিবর্তে তার বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। ডিজিএফআইয়ের পরিচালকদ্বয় সেদিন আলোচনার পর জনাব মোর্শেদ আলমের বড় ছেলেকে ঐদিনের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন করে তবেই ডিজিএফআই ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে, অজ্ঞাত কারণে দুপুরের পর ডিজিএফআইয়ের একজন পরিচালক আমাদের ডেকে নিয়ে জানালেন- আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে মোর্শেদ সাহেবের বড় ছেলে নিজ দায়িত্বে সকল কাজ সম্পন্ন করবেন। তাকে সহযোগিতার জন্য আমাদেরকে অনুরোধ জানালেন। নির্বাচনের পর নতুন ডিজি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই পুনরায় তার বরাবর আরেকটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ডিজিএফআইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে বর্তমানে ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। এখন ভুক্তভোগী মানুষের বিনিয়োগের আরটিভি'র ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য সরকারের কাছেই আবেদন করবে। জনগণের সরকারই জনগণের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এটাই প্রত্যাশা।

যুবক অবৈধ। যুবক যদি অবৈধ হয় তাহলে আরটিভির বেঙ্গল প্লাস্টিকের মালিকানা বৈধ হয় কিভাবে? আরটিভিতে যুবকের বিনিয়োগ ৩৫ কোটি টাকা। অবৈধ দখলের ১০ বছরে লাভ ও আসল মিলিয়ে তাদের কাছে যুবকের পাওনা হবে ১শ কোটি টাকার বেশি। যুবক সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন এভাবে কি সকল অর্থ লুটেরারা ভোগ করবে? আর যুবকের পাওনা দাররা অনিশ্চয়তায় মাথা কুকরে মরবে?

জানা যায় যে, যুবকের পাওনাদারদের পাওনা শোধে যুবকের কোন নগদ অর্থ নেই। আছে সম্পদ। যে সম্পদ আছে তা দিয়ে দায় শোধ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এই সম্পদের বেশির ভাগই দখল করে বসে আছে প্রভাবশালীরা। এখন প্রশ্ন হলো দায় শোধ হবে কিভাবে? সরকারকে যুবকের সম্পদ উদ্ধারে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। আল্লাহ চাহে তো এই সম্পদই যুবক এর লক্ষ গ্রাহকের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।