একজন কাশেম বিন আবু বকর ও আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ

এ্যাডভোকেট আজাদী আকাশ
Published : 1 May 2017, 03:40 AM
Updated : 1 May 2017, 03:40 AM

.

বাংলাদেশের প্রবীণ ঔপন্যাসিক কাশেম বিন আবু বকর। বর্তমান সময়ে আলোচিত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম ‍যিনি। দেশীয় গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তোলপাড় করে দিয়েছে যে নাম সেটি হলো কাশেম বিন আবু বকর। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি কাশেম বিন আবু বকরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন তিনি বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। আবার কেউ কেউ মনে করছেন তাকে আসলে সাহিত্যিক বা ঔপন্যাসিকদের তালিকায় ফেলা যায় না। অনেকেই বলছেই তিনি ধর্মকে ব্যবহার করেছেন পাঠকপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য। কেউ বলছেন তার লেখা বই ইসলাম সাপোর্ট করে না। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল 'ফুটন্ত গোলাপ'। বইটির নাকি এক লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। ৭০ দশকের লেখক হওয়া সত্ত্বেও মূলধারার গণমাধ্যমে বরাবরেই তিনি বাইরে ছিলেন। পাননি সামাজিক স্বীকৃতি বা সমাদর। কিন্তু তিনি কাকতালীয় ভাবে বিশ্ব মিডিয়ায় চলে এসেছেন। তিনি এযাবতকাল একশোরও অধিক উপন্যাস লিখেছেন। দেশে বিদেশে তাঁর রয়েছে অগণিত পাঠক।

ছোটবেলায় আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল কাশেম বিন আবু বকরের প্রথম উপন্যাস 'ফুটন্ত গোলাপ' এবং 'বোরকা পরা সেই মেয়েটি' উপন্যাস দুটি পড়ার। কাহিনী ঠিক আমার মনে নেই কিন্তু উপন্যাস দুটিতে এমন কিছু ছিলো যে টি আমাকে ভাল মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ করতো। অনেকেই বলছেন তার গল্পে যৌনতা ও ইসলাম একসাথে থাকে। আমিও মানি। কিন্তু ঐ সময় যেহেতু ছোট ছিলাম তাই যৌনতার চিন্তাটা মাথায় আসতো না। বরং উপন্যাসের নায়কের মত নামাজ পড়তে ইচ্ছে করত। সবার সাথে নম্র ভদ্র আচরণ করতে ইচ্ছে হত। শালীন হতে মন চাইত। লেখকের মতে অনেক পাঠক তার কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছে তারঁ লেখা উপন্যাস পড়ে তাদের ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। কথাটি আমি বিশ্বাস করি। কারণ কাশেম বিন আবু বকরের লেখা উপন্যাসগুলি ভাল মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর উপন্যাসে হয়ত বড় বড় সাহিত্যিকদের লেখনির মত গাম্ভীর্যপূর্ণ কোন বাক্য নেই, কিন্তু তাঁর উপন্যাসে ঘূনে ধরা সমাজকে আলোর পথ দেখানোর জন্য, শান্তির পথ দেখানোর জন্য কিছুটা হলেও উপকরণ আছে যেটি অনেক বখাটে ছেলেদের কে ভাল মানুষ হতে সাহায্য করেছে। ভাল ব্যবহার শিখেয়েছে। উন্নত চরিত্র গঠনে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছে।

কাশেম বিন আবু বকর অকপটে তার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন নাম জশ খ্যাতি কোনটাই তাঁর লক্ষ্য ছিলো না। তিনি চেয়েছেন ইসলামী মূল্যবোধের মাধ্যমে যুব সমাজকে আলোর পথে আনতে। সত্য যেটাই হোক না কেন। সেটি নিয়ে তর্ক করার ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু একটি কথাতো আমাদের স্বীকার করতেই হবে, যে আপনি যত ভালই লেখেন না কেন, যত ডিগ্রিই আপনার থাকনা কেন, যত দার্শনিক কথাই আপনার লেখায় থাকনা কেন সেটি যদি পাঠকপ্রিয়তা না পায়, তাহলে আপনি জনপ্রিয় লেখক নন। আপনার বই যদি না চলে প্রকাশকরা আপনার বই ছাপবে না। এক অর্থে আপনার লেখা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কাশেম বিন আবু বকর যে মানের লেখকই হন না কেন তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে পাঠকের কাছে। আর এ জন্য তিনি জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম একথা মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বিশ্ব মিডিয়ায় চলে এসেছেন এজন্য অনেকের চক্ষুশুল হবেন একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু তাতে সত্য পাল্টাবে না। সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় দেখে অবাক না হয়ে পারিনা। ইসলামকে ব্যবহার করে হোক আর যেভাবেই হোক তিনি জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিক। এটা মানতে বাঁধা কোথায়? তার উপন্যাসে ভাল বাবা হওয়ার, ভাল পুত্র হওয়ার, ভাল কন্যা বা স্ত্রী হওয়ার সর্বোপরি ভাল মানুষ হওয়ার উপকরণ থাকে এবং এবং সেটি তরুণরা পড়ে  ভাল মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ হয় এটাই যথেষ্ঠ। তাঁর লেখার তুমুল জনপ্রিয়তা আছে। এটাই যথেষ্ঠ। সেটি ইসলাম সম্মত হলো কিনা, সেটি প্রকৃত অর্থে সাহিত্য হল কিনা বা তাঁর লেখা মানসম্মত কিনা এসব বিতর্ক কেন করা হচ্ছে? আসলে আমাদের সমাজের একটা অংশের এটি একটি স্বভাবগত দোষ হয়ে দাড়িয়েছে যে, ভালকে ভাল বলে সরাসরি গ্রহণ না করে তাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে কলুষিত করার চেষ্টা করা। আমাদের ঘুণে ধরা এই সমাজ তাঁর লেখনির মাধ্যমে একটু আলোর দিশা পেয়েছে যা অনেক বড় বড় সাহিত্যিক আমাদের সমাজকে দিতে ব্যর্থ  হয়েছে। এটিই আমি অনেক বড় মনে করি।