তারা সমাজের অভিশাপ

আবদুস সামাদ আজাদ
Published : 4 Jan 2017, 02:29 PM
Updated : 4 Jan 2017, 02:29 PM

ডেইলি স্টারের ৪ জানুয়ারি ২০১৭ এর এডিটোরিয়ালে দেখলাম, মেহেরপুরের গাংনিতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন গাংনি উপজেলার বামুন্দী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ। শিক্ষকের ওপর এরকম নগ্ন হামলা কি ইংগিত দেয়। এ শুধু একটি ঘটনা। এরকম বহু ঘটনা আছে যা নির্লজ্জ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। এ ধরণের মানসিকতার লোকজনকে বোকা বলা স্রেফ বোকামি।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন একদিনে গড়ে ওঠে না। এটি গড়ে ওঠে কোনো দুষ্ট চক্রকে ঘিরে। রাজনৈতিক দলে এ চক্রটির উপস্থিতি এখন সবখানে। এসব অপরাধ রাজনৈতিক দলকে ডোবাচ্ছে বললে ভুল হবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এদেরকেই বড় বড় পদে বসান। তারা তো ডবুছে না। ডুবছে মন-মানবিতা। কাদছে মনষ্যত্ব। তৃণমূলের নেতৃত্বে তাদেরকেই দেয়া হয়, যারা মূলত শিক্ষক, কৃষক, মজুর পেটানোর ক্ষেত্রে অগ্রগামী। সাধারণ মানুষের রক্ত পান না করলে এদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন আসে- যারা এসব কুকর্মে জড়িত তাদের কি মন-মানবিকতা নেই? কথাটা নির্লজ্জ হলেও সত্য, এদের মন-মানবিকতা আগে ছিল, এখন নেই। এদের সন্তানরাও এদের মানে না। এদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী এদের জন্য সন্ত্রস্ত। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের অভিশাপ নিয়ে এরা ঘোরে। তা না হলে সমাজের নিরপরাধ মানুষ এদের হাতে কেন জিম্মি হবে? আমি সব রাজনৈতিক দলের এ ধরণের চরিত্রের কথা বলছি। উদাহরণ দিলাম আওয়ামী লীগের। বস্তুত বিএনপি কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলে এদের সংখ্যা কম নয়।

এখন ভেবে দেখতে হবে, সমাজ কি এ ধরণের নেতাদের মানে? না নিরুপায় হয়ে মানে? এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সমাজের মানুষ এদের হিংসাত্মক চরিত্রের কাছে জিম্মি। হয়তো ওই নেতার দ্বারা তার মা-বাবাও কষ্ট পান, তার সন্তানরাও কষ্ট পান। সমাজ তা জানে–কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। কারণ ক্ষমতার জিঘাংসাপনার খড়গ নেমে আসতে পারে এই ভয়ে।

আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মূল চরিত্র এখন পর্যন্ত এটাই হয়ে গেছে। এর একটাই কারণ, নেতাদের কাজ ছিল জনগণের সেবক হওয়া, কিন্তু তারা জনগণের প্রভু হয়ে গেছে। শেখ সাহেব, হক সাহেব এ রাজনীতি শেখাননি। কিন্তু কালক্রমে আমরা আমাদের গুরুদের ভুলে গেছি। কিসের জন্য? জনস্বার্থ কথাটা এখন আর নেই। এখন সবই ব্যক্তিস্বার্থ হয়ে উঠেছে। যে নেতারা জনগণের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, তারা নিজস্বার্থে জিঘাংসাপনায় মেতে ওঠেন। যা সমাজের কোনো বস্তুকে রেহাই দেয় না। সব প্রকার প্রতিষেধক অকেজো হয়ে পড়েছে। এর রেষ টেনে ধরতে পারে একমাত্র মননশীল একজন নেতা বা তার নেতৃত্ব।

আমাদের সমাজে যেসব অপরাধ হয়ে থাকে, তার পেছনে ৯০ ভাগ রাজনৈতিক কারণ জড়িত। রাজনীতি সমাজের অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছে নোংরা হয়ে। অথচ ভাল রাজনীতি সমাজের কি ভালোই না করতে পারে। একজন ভালো নেতা সমাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। জনগণ তাদের নেতাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। রাজনীতিতে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু আমাদের নেতারা? জনগণের স্বপ্নকেই তারা দু-স্বপ্নে পরিণত করে দেয়। তাদের হাত দিয়ে কোনো ভাল মানুষের রাজনীতিতে আসবে কি করে? এটা শুধু আমার কথা নয়, এটা নির্যাতিত নিষ্পেষিত জনপদের আকুল আর্তনাদ।

এ সমাজের নেতারা এমন, তাদের হাতে কোনো নারী নিরাপদ নন। কোনো শিশুও নিরাপদ নয়। নেতাদের সাঙ্গপাঙ্গরা আজরাইলের মতো ঘুরে বেড়ায়। তাদের প্রশ্রয়ে কিলবিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বখাটেরা। কোনো বাবা তার মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। কোনো শ্বশুর তার পুত্রবধূকে নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদা উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?

তাই আসুন, আমরা ভালো মানুষকে সমাজের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করি। সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলি। নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দিই। মা-বাবাকে কষ্ট না দেই। কিন্তু নেতা যদি মা-বাবার অবাধ্য সন্তান হন, তাহলে সে সমাজের ওপর অভিশাপ, অভিশাপ, অভিশাপ।