প্রতিনিয়ত ঘটছে, দেখিনা কিংবা উপলব্ধি করি না

আবদুস সামাদ আজাদ
Published : 2 Feb 2017, 01:43 AM
Updated : 2 Feb 2017, 01:43 AM

বাস্তব জীবনে চলতে ফিরতে আমরা কত ঘটনার মুখোমুখি হই। আবার কত ঘটনা আমাদের দৃষ্টির বাইরে ঘটে যায় তার ইয়ত্তা নেই। আমরা যে যেখানেই বাস করি তার আশপাশে অনেক ধরনের মানুষ বাস করে। প্রতি জনে প্রতি মনে কত কল্পনা, কত ঘটনার অাস্তরণ রয়েছে, তা একজন মানুষের পক্ষে ভাবাই অসম্ভব

আমরা মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্তের জীবন দেখিনা। উচ্চবিত্তরা মধ্যবিত্তের জীবন দেখিনা। মিসকিনদের দিকে নিম্নবিত্তদের হয়তো তাকানোর সময় নেই। সবাই খুবই ব্যস্ত। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। হাতেগোনা কিছু মানুষ হয়তো আছে নিচের মানুষদের দিকে, অভাবীদের দিকে তাকায়। সেই মানুষদের সম্পর্কেও আমরা কয়জন জানি?

আমরা প্রতিনিয়ত হাটি-চলি। কিন্তু যাপিত জীবনের আড়ালে ঘটে যায় নানা অানন্দ, দুঃখ-বেদনার কাহিনী। কেউ এসব নিয়ে চিন্তাও করে না। আপনার এলাকায় হয়তো আজ একটি পথশিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে হয়তো দুইদিন খেতে পাবে না। হয়তো মারাও যাবে। কিন্তু তার দেখার কেউ আছে কি? হয়তো একটি শিশু তার মাকে দুমুঠো ভাত যোগানোর জন্য পথে নেমেছে। হয়তো একটি টাকা চাওয়ার কারণে থাপ্পড় দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনি জানেননা শিশুটির মা হয়তো গুরুতর অসুস্থ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

আপনি পুলিশ অফিসার। আপনি একজন মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন- যে ব্যক্তি সহায়-সম্বল বিক্রি করে টাকাটি যোগাড় করেছে। পরের দিন কি খাবে সে ব্যবস্থাও হয়তো নেই। তার অভিশাপ লেগে যাওয়ারই কথা। আপনি আপনার সন্তানের কথা যেমন চিন্তা করে কষ্ট পান, অপরের সন্তানও কষ্টে পড়লে তাদেরও তেমনি কষ্ট হয়। কিন্তু এসব কিছুই আমরা চিন্তা করি না। চোখেল আড়ালেই বয়ে যাচ্ছে কত দুঃখের নদী। কেউ হয়তো তা আন্দাজও করতে পারিনা।

আপনি হাসপাতালের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। দেখছেন বড় সাইনবোর্ডে লেখা অমুক হাসপাতাল। সেখানকার ডাক্তার আপনার এক আত্মীয়। এ কথা মনে করে দেয়ার জন্য কারও লাগবে না। কিন্তু হয়তো হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে একইমাত্র নেমে গেল একজন কোটিপতির লাশ। প্রচুর টাকা আছে বলে তাদের দুঃখ কম, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয় তাহলে ওই বাবা-মায়ের জন্য বড়ই আফসোস। তাদের জন্য সন্তানও কাঁদবে না।

হয়তো এইমাত্র কেটে ফেলতে হলো আরেক কোটিপতির পা। হয়তো মায়ের মৃত্যুতে বুকফাটা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলেছে এক মেয়ে অথবা ছেলে। এসব আমাদের নজর এড়িয়ে সব সময় ঘটে চলেছে। যা আমরা দেখি না। উপলব্ধি করতে পারি না।

আমরা বস্ত্র পরিধান করি। এর পেছনে যে মেয়ে-মায়ের হাত আছে তাদের কথা আমাদের চিন্তায় আসে না। তাদের বেতন যে বাড়ানো দরকার সেসব কথা মনেই করতে পারি না। অথচ ঢাকা শহরে পোশাক শ্রমিকদের ৯০ ভাগ মেয়েরা, তারা মাও। প্রতিদিন তাদের হয়তো চোখের জলে ভাসতে হয়। প্রতিদিন বাড়িওয়ালার চোখ রাঙানি দেখতে হয়। প্রতিদিন হয়তো তাদের সন্তানরা মায়ের দুঃখ বুকে নিয়ে সবকিছু মেনে নেয়। এসব কথা আমরা কখনও ভাবি কি?

টাকার আধিক্যে আমাদের ঘুম আসে না। আসলেই আসে না। যারা কম টাকা আয় করি। কোনো কারণে যদি হাতে বেশি টাকা এসে যায়, তখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করি যে, টাকা ঘুম কেড়ে নেয়। কিন্তু প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখা যায়, এ টাকার অভাবে কত ছাত্র, কত শ্রমিক, কত ব্যক্তি তাদের জীবনে সামান্য স্বপ্নটুকু পূরণ করতে পারছেনা। এসব মানুষের জীবনে কত না দুঃখে ভরপুর, তা আমরা উপলব্ধি করি না। হাজারো সামর্থ থাকলেও ফিরে তাকাই না। আমাদের সুদৃষ্টি সবখানে কার্যকর হোক এই কামনা করি।