টার্গেট যখন জনগন

শহিদুল ইসলাম বাহার
Published : 16 Jan 2015, 08:31 AM
Updated : 16 Jan 2015, 08:31 AM

নব্বই এর পর থেকে এই বাংলাদেশে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তার কোনটিকেই সত্যিকার অর্থে গন আন্দোলন বলা যাবেনা। গন আন্দোলন বলতে সাধারনভাবে আমরা যেটা বুঝি তা হল আন্দোলনের সাথে সাধারন জনগনের সরাসরি সম্পৃক্ততা। এই সম্পৃক্ততা এখানে ছিল না। কারন ছিল স্পষ্ট, এইসব আন্দোলন কখনোই জনস্বার্থকেন্দ্রিক ছিল না। বরং দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। ফলশ্রুতিতে জনগন শুধু আন্দোলন থেকেই নয় বরঞ্চ রাজনীতি থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। জনগনের রাজনীতিবিমুখতার ফলে কিন্তু তথাকথিত এই আন্দোলন থেমে থাকেনি। রাজনীতিবিদেরা জনগনের নাম ভাঙ্গিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন এবং এখনও চালাচ্ছেন। তবে আন্দোলনের চরিত্র পাল্টেছে। আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে সহিংস ও নৈরাজ্যে। আর বর্তমানে আমরা সেই আন্দোলনের মধ্যেই আছি।

গত কিছুদিন ধরে দেশে যে সহিংসতা চালানো হচ্ছে এর সাথে আন্দোলনের নূন্যতম সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। এটা ভাবতে অবাক লাগে একটা রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে পারে। এই লেখা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত সারা দেশে ২০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। আহতদের কথা বাদই দিলাম। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যপার হচ্ছে নিহতের সবাই সাধারন মানুষ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওরা সাধারন মানুষকে টার্গেট করেই হামলা চালাচ্ছে। এই হত্যাকান্ডের দায় কি খালেদা জিয়া নিবেন? অবরোধকারিদের হাতেই এইসব নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। খালেদা জিয়া হয়ত বলতে পারেন যে উনি অবরোধ করতে বলেছেন, হত্যা করতে বলেন নি। কিন্তু উনি প্রানহানির বন্ধের ব্যপারে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? উনিতো তার নেতা-কর্মীদের বলতে পারতেন যে তারা যেন এমনভাবে কর্মসূচী পালন করে যাতে প্রানহানি না ঘটে। কই আমরাতো এ ধরনের কোন ঘোষনা তার কাছ থেকে পাইনি। বরং বিএনপি নেতারা বলছেন সরকারই এইসব নাশকতা করছে। কিন্তু কোন টিভি চ্যানেল বা খবরের কাগজে এইধরনের ঘটনার সাথে সরকার বা সরকারের লোকেরা জড়িত সেরকম খবর পায় নি। বরং সবজায়গায় অবরোধকারিদের দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়েছে। আর যদি বিএনপির কাছে এ ধরনের কোন প্রমান থাকে তাহলে তা প্রকাশ করুক। তারা তো তা করছেনা। খালেদা জিয়া নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রানহানির ব্যপারে ওনার কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। গত ১৩ তারিখে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এ দেখলাম খালেদা জিয়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন। আর দেশে যে নাশকতা ও প্রানহানি হচ্ছে তাও প্রায় সবই মফস্বল এলাকার দিকে। এটা আমাদের কি ইঙ্গিত করছে? হতে পারে এসব ঘটনার পেছনে উনি নিজেই জড়িত আছেন। অবরোধ তো বাংলাদেশে এটাই প্রথম হচ্ছে না। কিন্তু এই অবরোধের চরিত্র ভিন্ন। এইবারের মত অতীতে কোন অবরোধ বা হরতালে এভাবে চোরাগোপ্তা হামলা করে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয় নি। এই নাশকতার যে ধরন তাতে মনে হয় কেন্দ্রীয়ভাবে এটা পরিচালিত হচ্ছে। কারন নাশকতা শুধু এক জায়গায় সিমাবদ্ধ না। সারা দেশেই হচ্ছে আর এর ধরনও সব জায়গায় প্রায় একরকম। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও নির্দেশনা ছাড়া এটা সম্ভব না।

খালেদা জিয়া জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে আন্দোলন করছেন। আর সেই জনগনকেই কিনা বোমা মেরে, আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। জনগনকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আর সরকারও যদি এতে ব্যর্থ হয় তাহলে এর পরিনাম শুভ হবে না।