অযৌক্তিক দাবিতে পরিবহণ শ্রমিকদের কাছে জিম্মি বাংলাদেশ

মিঠু
Published : 2 March 2017, 02:00 AM
Updated : 2 March 2017, 02:00 AM

গত দুইদিন ধরে চলতে থাকা শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে এবং সমর্থন দিচ্ছিলো আমাদের সকারের মন্ত্রী!

উল্লেখ্য যে, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় ঘাতক বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। এদিকে সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালকের বিরুদ্ধে সোমবার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই গতকাল থেকে সারা দেশে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন প্রায় ২৮ জন মানুষ প্রাণ হারায়। বাংলাদেশ বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিত'র তথ্য মতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সর্বমোট ছয় হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মাঝে মারা গেছে প্রায় আট হাজার ৬৪২ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ২১ হাজার ৮৫৫ জন, যা কিনা মহামারী আকার ধারণ করেছে।

এ তথ্য মিডিয়া এবং সরকারী অনুসারে, বেসরকারি সংগঠনগুলার তথ্য অনুসারে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুসারে ২০১৫ সালের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র- সর্বমোট দুর্ঘটনা ৬৫৮১ টি, মারা গেছে ৮৬৪২ জন। এর মাঝে- ছাত্রছাত্রী ১০৮০জন, শিক্ষক ৩০৫ জন, সাংবাদিক ১৩৩ জন, চিকিৎসক ১০৯ জন, নারী ১৬৭৭ জন, প্রকৌশক ১০৬ জন, পরিবহণ শ্রমিক ৫৩৫ জন, চালক ৪১৯ জন এবং অন্যান্য ৪২৭৮ জন মারা গিয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের চিত্রও প্রায় একই।

সরকার এই মহামারী বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে না, ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় চলছে সে সব বন্ধ হচ্ছে না সাথে লাইসেন্স বিহীন চালক, এর থেকেও ভয়ানক বিআরটিএ থেকে অবৈধ পথে লাইসেন্স বের করা। যেখানে আইনে মোটরযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া এবং দিনে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও কেউ  মানছে না নিয়ম।

মাসিক বেতন না থাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশ চালকই রোজগারের জন্য দিনে আট ঘণ্টার বদলে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। দৈনিক ট্রিপনির্ভর বেতন হওয়ায় বাড়তি আয়ের জন্য বিশ্রাম না নিয়ে, নির্ঘুম ১৫ থেকে ১৮ ঘন্টা গাড়ি চালাচ্ছে সাথে চলছে গতির প্রতিযোগিতা এবং ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটছে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য।

আমরা ভূমিকম্প সহ অন্যান্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অনেক সচেতন কিন্তু এযাবৎ কালে ভূমিকম্পে আমাদের দেশে বড় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়াবহ হলেও সড়ক দুর্ঘটনার মতো এতোটা মহামারী আকার ধারণ করেনি।

একমাত্র সচেতনতা এবং আইনের সুষ্ঠু ব্যবহারই পারে সড়ক দুর্ঘটনা নামক এই মহামারী থেকে মুক্তি দিতে।