পিতা ও পাপীর ভারে ন্যুজ অছাত্রদের ছাত্রদল

বাসন্ত বিষুব
Published : 19 Oct 2014, 06:34 PM
Updated : 19 Oct 2014, 06:34 PM

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে খেলাটা দারুণ জমে উঠেছে। ভাবছি, এ খেলার নাম কী দেওয়া যায়! আচ্ছা দিলাম, ''নিজেরা নিজেরাই।'' যে কমিটি নিয়ে এই অভিনব খেলা সে তো এক আজব জিনিস। নাম ছাত্রদল, কিন্তু নেতৃত্বে পিতা, পাপী আর অছাত্রদের ছড়াছড়ি। একেই বুঝি বলে আদর্শহীন, পদ-পদবীর রাজনীতি!
ছেলেবেলায় ভাবতাম, ''কবে যে ছাত্রত্ব শেষ হবে! স্কুলে যাওয়া-যাওয়ি আর ভাল লাগে না।'' এ ভাবনা মাঝে মাঝে এতটাই কট্টর হয়ে উঠতো যে মন্দ ভাবতেও দ্বিধা করতাম না। ভাবতাম, ''আহা! কত দেশেই না ভূমিকম্প হয়, আমাদের দেশে হয় না কেন! আচ্ছামত একটা ভূমিকম্পে যদি স্কুলটা ভেঙ্গে যেত তাহলে আর পরীক্ষা দিতে হতো না, অনেকদিন আনন্দ-ফুর্তিতে কাটিয়ে দিতে পারতাম।'' অবশ্য ভুলেও কাউকে এসব বলতাম না, এসব ভাবনা কি আর বলা যায়! তবে পরে জেনেছি, শুধু আমি না, আমার মত আরো অনেকেই নাকি এসব ভাবতো।

আমার ছেলেবেলা তো আর হাজার বছর আগের কথা না। কিন্তু এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এবেলায় একি কান্ড! দুই সন্তানের জনক হয়েও আজকাল দেখি অনেকে ছাত্রত্ব ছাড়তে চায় না। তবে কি সবাই কবি সুনির্মল বসু হয়ে গেলো!– ''বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।'' ছাত্রত্ব ধরে রাখার বাসনা কীসের মোহে? জ্ঞান অর্জন নিশ্চই নয়। এই মোহ পদ-পদবীর।
গত কয়েকদিনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যে তেলেসমাতি দেখিয়েছে তা আমাদের দেশে বিরল। যে কারণেই হোক, বিএনপি বিগত দিনে কয়েক দফা মৌসুমী আন্দোলন ও হরতাল করেছে। আন্দোলনের ইস্যু হালকা হোক আর ভারী হোক ঐসময়েও ছাত্রদলের এতবড় মিছিল চোখে পড়েনি, যতবড় মিছিল তারা গত দুদিনে বের করেছে পদ-পদবী না পেয়ে। পদ না পাওয়ার যন্ত্রণাটা বোধহয় সত্যিই অসহনীয়। তা না হলে কি আর কেউ নিজ দলের অফিস ভাঙ্গে, নেতা দৌঁড়ায়। আন্দোলনকারীদের বেদনা এতটাই অপরিসীম যে তারা যার আদর্শের রাজনীতি করে বলে দাবি করে তার ভাস্কর্যটাও পর্যন্ত ছেড়ে কথা বলেনি। সত্যিই, তেলেসমাতির অভাব নেই আমাদের বাংলায়!

অছাত্রদের ছাত্রদলের এই আন্দোলনে রেকর্ড ভঙ্গের ঘটনাও ঘটেছে। যে সালাউদ্দিন হরতাল ডেকে গোপন ঘাঁটি থেকে লাদেনের মত ভিডিও বার্তা প্রচার করতেন সেই সালাউদ্দিন প্রকাশ্য হয়ে এবার দৌঁড়ানি খেলেন, তাও আবার নিজ কর্মীদের কাছে। আমি তো ভেবেছিলাম তার খেতাব হওয়া উচিত ''লাদেন সালাউদ্দিন'' কিন্তু এখন দেখছি ''দৌঁড় সালাউদ্দিন নম্বর টু'' এর আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে, এতে আমার ধারণা হয়েছে, আধুনিক যুগে সাঁতার না জানলেও চলে, তবে দৌঁড় না জানলেই নয়। বলা তো যায় না, কখন কোন দিক থেকে ধাওয়া আসে।

আবার আসি ছাত্রত্বের কথায়। ছাত্রদলের অছাত্ররা যে বাসনাতেই ছাত্রত্ব ধরে রাখতে চাক না কেন আমরা পাবলিকরা কিন্তু ঠিকই কবি সুনির্মল বসুর ছাত্রের মত ''নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবা রাত্র।''