শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত যখন কানে ধরে উঠ-বস করছিলেন, চারিদিকে তখন শুনসান নিরবতা। মানুষ হতবিহ্বল। লজ্জায় তৃষ্ণার্ত লাউডগার মত তাদের মাথা নুইয়ে পড়েছে, চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরছে। মানে, এরকম হতে পারতো কিংবা হওয়ার কথা ছিল। কারণ, শ্যামলকান্তি একজন শিক্ষক, নিরিহ শিক্ষক। কিন্তু, হয়নি।
হলোটা কী! জয়ধ্বনি। 'জয় বাংলা' ধ্বনি- যে ধ্বনি দিয়ে '৭১ এ স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙালি। বিএনপি'র আমলে জাতীয় ধ্বনি ছিল 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'। আচ্ছা, বর্তমানে কী কোন জাতীয় ধ্বনি আছে? যদি থাকে, তবে নিঃসন্দেহে সেটা 'জয় বাংলা'-ই হবে। তাই তো হওয়া উচিত।
যদি জাতীয় ধ্বনি নাও থাকে, তবুও ধরে নিলাম বঙ্গবন্ধুকন্যার শাসনামলে 'জয় বাংলা'-ই জাতীয় ধ্বনি। এই ধ্বনি দিয়েই তো সব শুভ কাজ হয়েছে, হচ্ছে। ৭১ এর পর জয় বাংলা থেমে যায়নি। ৭৫ এর পরও থামেনি। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ আর ফাঁসির রায়ে বিজয় উল্লাস- সবই তো হয়েছে এই জয় বাংলা দিয়েই। সুতরাং, জয় বাংলা চলছেই। কিন্তু চলতে চলেত সে ক্লান্ত, বিবর্তিত। পথহারা 'জয় বাংলা' আজ কলঙ্কিত।
'জয় বাংলা' এখন অপমানের ধ্বনি। এ 'জয় বাংলা'র শিকার বাংলার শিক্ষক সমাজ। কবির হোসেন তাপস লিখেছেন: 'বাংলাদেশ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।' দাঁড়িয়ে কোথায়? বাংলাদেশ কান ধরে উঠ-বস করছে। আমরা দেখছি, লুকিয়ে হাসছি!
শিক্ষামন্ত্রী 'প্রয়োজনে' তদন্ত করার কথা বলেছেন। তিনি হয়তো তদন্তের প্রয়োজন এখনো বোধ-ই করেননি। অথচ, আমার ভুল না হলে, তিনিও কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র। আর প্রধানমন্ত্রী! তিনি কি পারবেন, কান ধরার হুকুমদাতাকে শিক্ষক শ্যামলকান্তির পা ধরে ক্ষমা চাওয়াতে? কিংবা, তিনি কি পারবেন, শিক্ষক সমাজের অপমানের বিচার হওয়ার আগে 'জয় বাংলা' বলতে?