মিডিয়ার হাতে নিহত আব্দুর রাজ্জাক!

বাসন্ত বিষুব
Published : 23 Dec 2011, 04:13 PM
Updated : 23 Dec 2011, 04:13 PM

এক অদ্ভুত দেশের বাসিন্দা আমরা! সেরা হবার উন্মাদনায় মত্ত আমরা সাবাই। সবার আগে খবর ছেপে কৃতিত্ব নিতে কী তাজ্জব কান্ডটাই না ঘটে গেল আজ। একজন লোক মরছে না, তাই খুন করে সবার আগে খবর ছাপার প্রতিযোগিতা। সত্যিই হুজুগের জাতি আমরা।

হ্যা, এটাকে খুনই বলবো। বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বেশ কয়েক মাস ধরেই গুরুতর অসুস্থ্য; তার চিকিৎসা চলছে লন্ডনের কিংস হাসপাতালে। ক্লিনিক্যালি তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তবে এখনো জীবিত; এখনো মারা যাননি। অথচ সন্ধ্যা থেকেই বেশ কয়েকটি অনলাইন সংবাদপত্র তার মৃত্যুর খবর প্রচার করে। সাথে সাথেই সেই খবর ব্রেকিং আইটেম হিসেবে প্রচারিত হতে থাকে টিভি চ্যানেলগুলোতে। বলা হতে থাকে, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী। তবে অনেক খুঁজেও এই মৃত্যু সংবাদটি পাওয়া যায়নি বিডিনিউজ২৪.কম এ। কয়েকজন ব্লগারকে দেখলাম বিডিনিউজের এমন নিস্ক্রিয়তায় (!) ক্ষোভ প্রকাশ করতে; বিডিনিউজকে নিন্দাবাদ দিতে। অথচ মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বাস্তবতা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে বিডিনিউজকে একসাথে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাতে হয়। কারণ এর দায়িত্বশীলতা; কারণ নিশ্চিত না হয়ে বিডিনিউজ জনাব আব্দুর রাজ্জাকে মৃত্যু সংবাদ ছাপেনি।

কিন্তু অপরাপর অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোর সংবাদ ছাপার ধরণ দেখে মনে হয়েছে যে, কে সর্বপ্রথম জনাব রাজ্জাকে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করার কৃতিত্ব নেবে তা নিয়েই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। বাংলা নিউজ গত কয়েকদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে জনাব রাজ্জাককে নিয়ে নিউজ আইটেম করছিল। এটা ইতিবাচক ছিল কারণ এসব নিউজের মাধ্যমেই জনাব রাজ্জাকের সর্বশেষ অবস্থা জানা সম্ভব হচ্ছিল। অথচ আজ তারা কেন এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করলো তা বোধগম্য নয়। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য বাংলানিউজের সম্পাদককে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, আজকের ঘটনায় বাংলানিউজের সংবাদ সূত্র নিয়ে যে সন্দেহের সৃষ্টি হলো তার রেশ থাকবে আরো অনেকদিন।

জনাব আব্দুর রাজ্জাক লাইফ সাপোর্টে আছেন, বাস্তবতা বলে তিনি হয়তো মারাই যাবেন। কিন্তু এখনো তো তিনি জীবিত! চিকিৎসকরা তাকে এখনো মৃত ঘোষণা করেননি। অথচ আমরা তাকে আগাম মেরে ফেলেছি। এবং আমি বিশ্বাসকরি, শুধুমাত্র সংবাদ প্রচারের প্রতিযোগিতার কারণেই আমাদের মিডিয়া এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। মিডিয়ার এমন ভূমিকায় আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও শংকিত।