মিশরের অভ্যুত্থান এবং আমাদের রাজনৈতিক সচেতনা

বিডি০৮
Published : 15 Feb 2011, 09:04 AM
Updated : 15 Feb 2011, 09:04 AM

মিশরের অভ্যুত্থান অত্যন্ত শান্তিপূর্নভাবে হয়েছে। এই অভ্যুত্থানে পুরুষদের সাথে নারীদেরও দেখা গেছে। আবার এই নারীদের মধ্যে হিজাব পরিহিতা নারীদেরকেও দেখা গেছে। নারীরা তাহরির স্কোয়ারে লক্ষ লক্ষ জনতার সাথে রাতেও সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জানতো পুলিশ বা আর্মিরা গুলি চালাইতে পারে কিন্তু তাদের ওড়না ধরে ছাত্রলীগের কর্মীদের মত কেউই টানবে না।

কিছুদিন আগে সম্ভবত আনন্দ মোহন কলেজের এক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কর্মীরা আক্রমন করে নারীদের লাঞ্ছিত করেছিলো। এই ছাত্রলীগকে তাদেরই সাধারণ সম্পাদক লণ্ডন প্রবাসী আশরাফ সাহেব অনষ্ট প্রজন্ম বা সঠিক প্রজন্ম বলেছেন, আর বাদ বাকীগুলো নষ্ট প্রজন্ম।

গতবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন (সম্ভবত ২০০০সন) থার্টি ফাস্টের রাতে টিএসসি চত্বরে একটি মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছিলো এক ছাত্রলীগের কর্মী।
একইসাথে জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৯ সনে ছাত্রলীগের মানিক ধর্ষনের শতক পুরুন ব্যানার টানিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলো। এইনিয়ে অনেক হৈ চৈ হলেও মানিকের শাস্তি হয়নি, শোনা যায় এখন উনি বড় পদে আছেন।

এবারও আওয়ামী লীগের জামিল হাসিনার আমেরিকা ভ্রমনে হাসিনার এক নারী সহকর্মীকে উক্তত্য করলে হোটেলের কর্মচারীরা জামিলকে বের করে দেন। সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জামিলের শাস্তি হয়নি। বরং যা জানা গেল এই দুশ্চরিত্র জামিলের চরিত্র সম্পর্কে শেখ হাসিনার আগাম তথ্যও জানতেন, তারপরেও তাকে ভালো জায়গায় পোস্ট দিয়েছিলো শেখ হাসিনা।

আরো আছেঃ
মিশরের গনঅভ্যুত্থানে কাউকে লগি নিয়ে মারতে দেখা যায়নি কিন্তু ২০০৬ সনে হাসিনা তাঁর ছাত্রলীগকে লগি-বৈঠা নিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলো নষ্ট প্রজন্মের লোকদের মারতে। টিভি পর্দাতে বিশ্ববাসী দেখেছে কিভাবে লগি দিয়ে নষ্ট প্রজন্মের লোকেদের মারা হচ্ছে। মারার পর লীগের কর্মীরা প্রকাশ্যে বলেছিলো রাজাকার মারা বৈধ।

এই হলো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাঁর পিতার মূর্তুর পর সে বাংগালীদের দেখে নেবার প্রতিহিংসায় মেতে উঠে আমাদের পুরো রাজনৈতিক অংগনে এখন অসুস্থ পরিবেশ বিরাজ করছে।

অনেকেই ভাবছেন আমি কেন কেবল আওয়ামী লীগের কথা বলছি, আর বিএনপি কি ফেরেস্তা!
হ্যা, বিএনপি ফেরেস্তা নয়।

আমরা খুব ক্ষুদ্র মানুষ। কিন্তু আমাদের জিজ্ঞাসা… জ্ঞানী এবং বড় বড় মানুষেরা যে সব ইস্যুতে বিএনপির সময় সরব থাকতো এখন তাঁরা সেই একই ইস্যুতে নীরব কেন?

একই সাথে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নগ্নভাবে মিথ্যার আবাদ করেই চলেছেন অথচ বড় বড় জ্ঞানী বুদ্ধিজীবিরা নীরব থেকেছেন। এই হাসিনা গতবছর বলেছিলেন ১৯৫২ সনের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিব নাকি ঢাকা হাসপাতাল থেকে এক চিরকূটের মাধ্যমে মিছিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন… যতটুকু মনে পড়ে কেমলমাত্র বদরউদ্দিন উমর-এর প্রতিবাদে বলেছিলেন ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিব ঢাকাতেই ছিলেন না, উনি ছিলেন ফরিদপুরে।

রাজনীতির এই দোলা চলে জনগনের সচেতনা কেমন হওয়া দরকার তাঁর নির্দেশনার জন্য বড় বড় জ্ঞানীদের কথা শোনার দরকার নেই সেটা সাধারন জনগন আজ বুঝতে পেরেছেন। এই সব বড় বড় জ্ঞানীরা জনগনকে বারবারই ধোকা দিচ্ছে।

এখন ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিক সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ রেখে উনারা তা সংসদে পাশ করাইতে চাইছেন। উনাদের ধারনা উনারাই কেবল বুঝেন আর বাদবাকী সবাই নষ্ট্র প্রজন্ম।

এই সংকর সংবিধানের জন্যে দেশে গনআন্দোলন বা মিশরের ন্যায় আন্দোলনের সৃস্টি হতে পারে। দেখুন সংকর সংবিধান ইতিমধ্যেই ছাপানো হয়েছে অথচ আওয়ামী বুদ্ধিজীবির দল রয়েছে নীরব।

ইসলাম ধর্ম বা বিসমিল্লাহ যদি থাকে তবে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকলে দোষের কি?
নাকি আওয়ামী লীগ বুঝাইতে চাইছে আল্লাহ নয় শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনা উপর পূর্ন বিশ্বাসে দেশ পরিচালিত হবে।

আওয়ামী লীগের হিন্দু, মুসলিম সমর্থকেরা ইসলামিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী নন, উনারা আল্লাহর উপর পূর্ন বিশ্বাস তাতেও বিশ্বাসী নন, উনারা বিসমিল্লাহ সহ সেকুলারিজমে বিশ্বাসী। এরা সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত দ্বীন-এ-ইলাহীর মত এক নতুন ইসলামের আবির্ভাব করতে চাইছেন। এরা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের ইসলাম নয়, এরা শেখ হাসিনার উপর পূর্ন বিশ্বাসের ইসলাম বাংলাদেশে প্রবর্তন করতে চাইছেন। উনার পিতাও বাকশাল নামে মোবারকের মত একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। মোবারকের পরিনিতি আজ কি তাতো সবাই দেখতে পারছে। মিশর এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সংবিধান থেকে বের হয়ে বহুমত,বহুদলের গনতন্ত্রের সংবিধানে যেতে চাইছে। আর সেখানে আমাদের সরকার ৫ম সংশোধনীর বহুদলীয় গনতন্ত্রকে কোর্ট থেকে অবৈধ করেছে। দেখুন, মিশরে মোবারকের সংবিধান পরিবর্তন করে আর্মীরা বহুদলীয় গনতন্ত্রের সংবিধান রচনার কাজ করছেন। এই কার্যক্রম মোবারকের রেখে যাওয়া সংবিধানের ভিত্তিতে অবৈধ। কিন্তু কোন বিপ্লব সংবিধান মেনে পরিচালিত হয় না। আর আদালতের কাজ সংবিধান অনুযায়ী রায় দেওয়া, কোন ইতিহাস বা বিপ্লবের পক্ষে বা বিপক্ষে আদালত অবস্থান নিতে পারে না।

আওয়ামী লীগ দেশে ইতিমধ্যেই প্রতিহিংসার রাজনীতির চর্চা করেছেন এবং নিজদের সন্তানদেরকে বিদেশে রেখে অন্যের হাতে লগি তুলে দিয়েছে আরেকজনের মাথায় মারার জন্য। উনারা বিদেশে থেকে থাকবেন রাজপরিবার হয়ে আর আমরা নিজেদের দেশের মাটিতে মারামারি করবো তাদের সংজ্ঞায়িত নষ্ট-প্রজন্মের সাথে। কি তামশা! আওয়ামী তামশা! এই তামশা চলবে না।
পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় জরুরী আইন দিয়ে ফকরুদ্দিন সাহেবেরা দেশ চালিয়েছিলেন, দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে গেলেও পশ্চিমারা বাংলাদেশকে শোষন করেছে ঠিকই। দেশপ্রেমিক ফকুরুদ্দিন পশ্চিমাদের আস্থাভাজন হয়েছেন্‌ শোনা যাচ্ছে উনি নাকি এখন আমেরিকা নাগরিকত্ব নিয়েছেন, উনার ছেলেমেয়ে বৌ বাচ্চা, শালা শালি সবাই নাকি উন্নত পরিবেশে উন্নত মস্তিস্ক নিয়ে আমেরিকাতে আছেন। আর তাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশে পড়ে আছে নষ্ট প্রজন্ম।

আমার প্রস্তাবনাঃ

১, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের অধিকার দেওয়া হোক কিন্তু যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কিংবা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব
ছেড়ে দিয়েছেন তাদেরকে ভোট প্রদানের অধিকার না দেওয়া।

২, দেশের স্থানীয় সমস্যা-সমাধানের বিষয়াদি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন ফারাক্কা বাধের জন্য আমাদের পরিবেশগত ক্ষতি ইত্যাদি ছাত্রাবস্থায় শেখানো উচিত। এতে দেখা যাবে, এর প্রতিকারের জন্য আন্তর্জাতিক কি কি আইন কানুন পড়ার উচিত সেদিকে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ধাবিত হবে (এটি একটি উদাহরন মাত্র, এই রকম অনেক ইস্যুই আছে)। কাজেই আমাদের শিক্ষা নীতি আমূল পরিবর্তন করতে হবে। উল্লেখ থাকে ধর্মীয় শিক্ষার রুপ কেমন হবে তা নিয়েও ভাবতে হবে। তবে ধর্ম শিক্ষার রুপরেখা আমেরিকা-ইসরায়েল বা ভারতীয়দের কাছ থেকে শেখার দরকার নেই। কিন্তু হাসিনার এই সরকার দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতির জন্য আমেরিকা থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে এনে পশ্চিমবংগের মাদ্রাসার সিলেবাস চালু করা আওয়ামী পায়তারার কোন মানে নেই।