আশিক হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- এক সময় ঢাকার রাস্তায় ১২ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব চলাচল করলেও এর সংখ্যা কমে চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ৩ হাজারে ঠেকেছে।
ক্যাব মালিকরা বলছেন, প্রশাসনিক 'জটিলতায়' এবং কর্তৃপক্ষের 'উদাসিনতার' কারণেই রাজধানীর রাজপথ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ট্যাক্সি ক্যাব সেবা।
এদিকে ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। মূল ভাড়ার দ্বিগুণ টাকা গুণে তাদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০০৭ সালে রাজধানীতে প্রায় ১২ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব চলাচল করতো। এখন যেগুলো সচল রয়েছে, সেগুলোর মেয়াদও ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
বিআরটিএ এর প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাইফুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মেয়াদ শেষে মালিকরা চাইলে তাদের নতুন ট্যাক্সি ক্যাবের অনুমোদন দেয়া হবে।"
নতুন করে ট্যাক্সি ক্যাব আমদানি করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সরকার জনকল্যাণের কথা চিন্তা করে নতুন করে ট্যাক্সি ক্যাব আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমদানির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ঠেকাতে নতুন নিয়মে শুধু কোনো কোম্পানির মাধ্যমেই বিদেশ থেকে ক্যাব আনা যাবে।"
সাইফুল হক জানান, একজন আমদানিকারককে কমপক্ষে এক হাজার ট্যাক্সি আনতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যেক ট্যাক্সিতে অবশ্যই জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত থাকতে হবে।
রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় চলাচলের সুবিধার জন্য ১৯৯৮ সালে ঢাকার রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস চালু করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সে সময় একজন আমদানিকারককে কমপক্ষে ২০টি ট্যাক্সি আমদানি করতে হতো। ২০১০ সালে এ সংখ্যা করা হয় ১ হাজার।
দুই বছর আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ট্যাক্সি ক্যাব বিষয়ক গেজেটে 'এসি ও নন-এসি' মিলিয়ে চার ধরনের (চার রঙয়ের) ট্যাক্সি ক্যাবের কথা বলা হয়, যার মধ্যে ১৩০০ সিসি ক্ষমতার হলুদ ট্যক্সি ক্যাব, ৮০০ সিসির নীল, সিএনজি চালিত নয়- এমন কালো ট্যাক্সি ক্যাব বর্তমানে চলতে দেখা যায়।
২০০০ সিসি ক্ষমতার 'অপেক্ষাকৃত বড়' সবুজ ট্যাক্সি ক্যাবের কথা গেজেটে লেখা হলেও ঢাকার রাস্তায় তা দেখা যায় না।
'ইকোনমিক লাইফ' হিসেবে গেজেটে প্রতিটি ট্যাক্সি ক্যাবের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০ বছর।
ঢাকা মহানগর ট্যাক্সি ক্যাব (লিজ) মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "রাজধানীতে বর্তমানে চালু ট্যাক্সি ক্যাবের বেশির ভাগই ২০০২-২০০৩ সালে নিবন্ধিত। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৩ সাল নাগাদ রাজধানীর প্রায় সব ট্যাক্সি ক্যাবের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে।"
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, সরকারের উদাসিনতার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
"আগে ট্যাক্সি আমদানির ক্ষেত্রে ২০টির ফ্লিপ কার্যকর থাকলেও নতুন নিয়মে ১০০০ ট্যাক্সি ক্যাবের ফ্লিপের কথা বলা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকারকরা উৎসাহিত হচ্ছেন না। এ কারণেই এখন পর্যন্ত বিআরটিএ কোনো কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারেনি।"
সমিতির পক্ষ থেকে এ সংখ্যা কমিয়ে ৫০টি করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও সরকার তা কানে তোলেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"এভাবে সরকার ভবিষ্যতে ট্যাক্সি সার্ভিস চালাতে পারবে কিনা তা নিয়েই আমাদের সন্দেহ রয়েছে।"
ওবায়দুল হকের মতে, গণপরিবহনের চাহিদা অনুপাতে রাজধানীতে ১৫ থেকে ২০ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব প্রয়োজন।
পরে তার কথার সত্যতা ধরা পরে বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাইফুল হকের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, "ট্যাক্সি ক্যাব আমদানির বিষয়ে নতুন নিয়ম হলেও এখনো কোনো আমদানিকারকের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একটি কোম্পানির সাথে আলোচনা চলছে। দেখা যাক কি হয়।"
ট্যাক্সি মালিকদের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, "তারা প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তা গ্রহণ করেনি।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্যাক্সি ক্যাব সেবা বিলুপ্ত হয়ে গেলে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার চাহিদা আরো বাড়বে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যতো বাড়বে, সড়কে এর প্রভাব ততোই মারাত্মক হবে।
"সরকার ট্যাক্সি ক্যাব আমদানির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে আগে পাবলিক ফোরামে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। যে কোনো পরিকল্পনা নেয়ার আগে চিন্তা করা প্রয়োজন- এটা আসলে সম্ভব কি না।"
'মিটারে চলে না ট্যাক্সি'
ট্যাক্সি ক্যাব সেবা চালুর সময়েই নিয়ম করা হয়েছিল- প্রতিটি ক্যাব মিটার অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলবে। কিন্তু সেই নিয়ম থেকে গেছে খাতা কলমেই।
অন্যদিকে সরকারি গেজেট অনুসারে রাজধানীতে ট্যাক্সি ক্যাবের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্মাণের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। এ কারণে নানা ধরনের হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ মালিক-চালকদের।
ঢাকা মহানগর ট্যাক্সি ক্যাব (লিজ) মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যে সময় ট্যাক্সির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল তার তুলনায় এখন খরচ বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। আমরা কয়েক দফা ভাড়া পুনঃনির্ধারণের অনুরোধ জানালেও বিআরটিএ কিছু বলছে না।"
"যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আর বিআরটিএর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, নীতি নির্ধারণের সমস্যার কারণে ট্যাক্সি ক্যাব এখন আর সার্ভিস নেই, হয়রানিতে পরিণত হয়েছে", যোগ করেন তিনি।
বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাইফুল হক বলেন, "পার্কিংয়ের স্থান সিটি করপোরশেনের দেয়ার কথা। আমরা তাদের সাথে আলোচনা করেছি। তারা আজ দেব, কাল দেব বললেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।"
আর ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে বিআরটিএ তা বিবেচনা করবে বলে জানান এই কমকর্তা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএইচএ/জেকে/০৯৩০ ঘ.