উইকিলিকস: নথির উৎস নিয়ে সন্দিহান সৈয়দ আশরাফ

বিডিনিউজ২৪
Published : 16 Sept 2011, 08:40 PM
Updated : 16 Sept 2011, 08:40 PM

ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন 'গোপন' তারবার্তার উৎস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তার দল এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করবে না।

শুক্রবার গণভবনে দলটির কার্যনির্বাহী ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন। কেউ যদি এর দায়দায়িত্ব স্বীকার না করে, তাহলে এর ওপর মন্তব্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।"

এসব তারবার্তার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে 'হয়তো একটা মন্তব্য করা যেতো' উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, "এগুলো মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তারবার্তা কিনা তাও আমরা জানি না।"

বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তা প্রকাশ করে দিয়ে গত বছর রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো দুই হাজারেরও বেশি 'কেবল' রয়েছে।

গোপন নথি প্রকাশ করে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পড়েন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ। দুই নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সুইডেনের একটি মামলায় ব্রিটেনে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

এ প্রসঙ্গ তুলে একটি ব্রিটিশ দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র উদ্ধৃতি টেনে সৈয়দ আশরাফ বলেন, "বলৎকারের মামলা চালাতে টাকার জন্য অ্যাসাঞ্জ এগুলো করছে।"

চলতি মাসের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় প্রায় এক লাখ তারবার্তা প্রকাশ করে উইকিলিকস। এরপর দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ভাষ্য ও মতামতের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বিভিন্ন দৈনিকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা খফরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতাসীন দল ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে ভাঙার জন্য 'উইকিলিকসের গল্প' সাজাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, "আওয়ামী লীগ কোনো দল ভাঙে না। আমরা দল ভাঙায় বিশ্বাস করি না। জিয়াউর রহমান সাহেবই ন্যাপ (ভাসানী) মুসলিম লীগ, ইউপিপি ভেঙে দল করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে ভাঙতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। সামরিক স্বৈরশাসকরাই গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে দল ভেঙে দল করেছে।"

প্রত্যেক দলেরই রাজনীতি করার সুযোগ আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "আমরা চাই বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হোক। সেটা আমাদের জন্যই ভালো।"

কার্যনির্বাহী ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ দিনের সফরে শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তার অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীই দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

"তিনি আমেরিকা থেকে ফেরার পরই দলের কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠক হবে। সে বৈঠকেই তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হবে।"

এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ জানান, আমেরিকা থেকে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করবেন। অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সরকারের আমন্ত্রণেই এই সফরে যাবেন তিনি।

গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। সফরের আগে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

এ প্রসঙ্গে আশরাফ বলেন, "মনমোহন সিংয়ের সফরের আগে ভারতের রাজনীতিবিদদের সাথে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদেরই আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিকরা দৃশ্যত তা দেখেননি। সেজন্যই বলা হচ্ছে- উপদেষ্টা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছিলো।"

তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সরকারি ও বিরোধীদলের সদিচ্ছার অভাব নেই।"

'হটাৎ উধাও'

বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বাইরে সমালোচনা না করে দলীয় ফোরামেই আলোচনা করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

এতে বৈঠকের ভেতরেই সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনায় মুখর হন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম হোসেন।

সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আশরাফের বক্তব্যের পর কাজী আরকাম হোসেন বলেন, 'বিএনপির বক্তব্যের কাউন্টার দেওয়ার লোক তো দেখি না। সাধারণ সম্পাদককে মাঝেমধ্যে দেখি। তারপর, তিনি উধাও হয়ে যান।' তখন আশরাফ বলেন, 'যখন দরকার হয়। তখন তো আমি কথা বলিই'।

"অবশ্য দলীয় সভানেত্রী সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নিয়ে বলেন যে- কথা কম বলাই ভালো।"

তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী

পুঁজিবাজার নিয়ে মন্তব্যের কারণে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আব্দুর রহমানের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

বৈঠকে উপস্থিত একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, চলতি বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধসের পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, শেয়ার বাজার হলো ফটকাবাজীর ব্যবসা। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বৈঠকে আব্দুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে ঘরে ঘরে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। আর অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তা ঠিক নয়। পুঁজিবাজারে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও আছে।

বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রীর কথাতে পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এরপর, আবুল মাল আব্দুল মুহিত দাঁড়িয়ে বলেন, তিনি পুঁজিবাজারের ব্যবসায়ীদের একবারই 'ফটকাবাজ' বলেছেন। আর বলেননি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/জেকে/০১১৩ ঘ.