রাঙামাটি (একটি ভ্রমণ কাহিনি)

imrul
Published : 10 Sept 2009, 10:20 PM
Updated : 10 Sept 2009, 10:20 PM

ভ্রমণ বিষয়ে
১.
ভ্রমণের চোখজোড়া ব্যস্ত
কর্দমাক্ত ও ঘোলাটে
যেন সবকিছুই নতুন অথবা
হুবহু অতীতেরই মতো
এই বিভ্রম, পরিক্রমা
ধামাচাপা চেষ্টা হৃদয় আবেগ
হীনম্মন্যতা ও ব্যক্তি-বোধকে ঘিরে
এইসব অবয়ব: স্থির-চিত্র, বধিরের

২.
স্থান বিষয়ে, বিষয় সংশ্লিষ্টতায় বলার ইচ্ছা যখন আসে তখন এই বিষয়ের প্রেক্ষিতে বর্ণনাসম্ভব সেলফ জেগে ওঠে বা তাকে করা যায় না বিশ্লিষ্ট আর, বিষয় প্রেক্ষিত থেকে সে বারবার সরে আসে ব্যক্তি দ্বন্দ্বে, বক্তিকেন্দ্রিকতায়, সাবজেক্টিভ সেইসব প্রয়াণ, বিষয়ের লেপ্টালেপ্টি এইসব হৃদয়দৌবল্য, স্থানের; আর স্থান যা হয়ে ওঠে মার্জিনাল, প্রান্তিকতা সবসময়, উৎস খুঁজে বেড়ায়, খুঁজে বেড়ায় ব্যক্তি আকার, সংশ্লিষ্টতার

স্থানের পরিপার্শ্ব ঘিরেই ঘুরপাক খায় সময়। আর সময়ের ডানা ধরেই আটকে থাকতে চায় স্থান। স্থান ঘুরে সময় থেকে সময়ে। সময়ের গোলকের ভিতর এক একটা স্থান। স্থানের নির্দিষ্ট রূপ কোন কি নাই? অ-পার স্মৃতিচিহ্নে, মনে পড়ায়, আটকে থাকায়, ভুলে যাওয়ায়? একইসাথে অশূন্য এবং নিরাকার স্থানচিহ্নের বন্দর ছড়াইতে থাকলো… সময় কী একাকার? একটা সরলরেখা? পাঁকচক্র? সেইটারও প্রচেষ্টা থাকে দৃশ্যকল্পে, কিংবা চোখ ধার করে আর দেখতেই থাকে, পুনরাবৃত্তি করে, যে একটা হয়ে ওঠা অসম্পূর্ণ হয়া আছে ও ছিল, তার অর্ধবৃত্তাকার, মিল ও অমিল

যে আছে, যে নাই, যে আসলে অনির্দিষ্টতা, যে বোধ সঞ্চার করে, দৃশ্যকল্প থেকে লোপাট করে কাঠামো, প্রবিষ্ট করে চেতনা, বেহুলার বাসরে সাপ, চিকন কালা, ভ্রম, সত্যনিবিষ্ট, দৃষ্টিগ্রাহ্যতা, অধঃপতিত বিহ্বলতার আকার, কল্পনা অভীপ্সার, হতোদম্য, আটকে থাকা . . .

তারে উদ্ধারে নেমেছে ডুবরীর সাঁতার। যতিচিহ্নের খেলা। আখ্যানমালার স্ফীতি, বর্ণনারূপ, ন্যারেটিভ এর ভিতর

বিপণীকেন্দ্র

পাহাড়ি মহিলাদের বিপণীকেন্দ্রে আমরা গিয়েছিলাম।
আমি, আমার বউ আর আমাদের মেয়ে।
তারা খুবই উৎসাহী, নানান পোশাক দেখায়।
আমরা হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সরল পোশাকগুলি দেখি
হ্যান্ডিক্রাফটস (উহাদের নাম)।

আমার মেয়ের পোশাক কিনি, তামাটে লাল।

আমার বউ কথা বলে, ওরাও উত্তর দেয় একই ভাষায়
তারপরও নিজেদের পৃথক পর্যটক মনে হয়
তারাও হয়তো একই কথা ভাবে, খামোখাই।

কারণ আমরা তো ইউরোপিয়ান প্রতিনিধি নই,
আর ওরাও নয় শিক্ষানবিশ
মনোঃসমীক্ষণ কেন্দ্রে, পৃথিবীর।

আনারস ক্ষেত পার হয়ে

বাঁকগুলি মসৃণ
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উঠছে উপরে
আবার নামছে নিচে

পাহাড়ের সবুজ
ছায়া ও অন্ধকার ঘিরে
সরে যাচ্ছে পথ

লোম ওঠা টিলাও সরছে
ওরা আনারসের ক্ষেত, কলার বাগান
জুম চাষ হয় বলে পড়ছিলাম
পাঠ্যপুস্তকে।

ক্রমশঃ উঁচুতে উঠছি আমরা
বিডিআর ক্যাম্প ছেড়ে;
নিচে, জল ঘেরা বাড়ি ঘর, দালান কোঠা . . .
ঐটাই রাঙামাটি
বলছিলাম, আনারস ক্ষেত পার হয়ে
পরস্পরকে আমরা।

বাস থেকে নেমে

বাস থেকে নামি।
বাসের ভিতর বসে থেকে
পাহাড় দেখতে দেখতে
পেয়ারা খেতে খেতে
এই এতদূর এসেছি, রাঙামাটিতে।

হাঁটু জড়োসড়ো বসে থাকা শেষ।
নিজ পায়ে দাঁড়ালাম, ভূ-মণ্ডলে, পাকা রাস্তার উপর।
রিজার্ভ বাজারের আগে পড়েছি নেমে
দুপুর ১২ টার আগে।

বাস থেকে নেমে গিয়ে আমরা খুশি,
রাঙামাটিতে এসেছি, তাহলে!

টিভি স্টার

এ কী!
বিজন প্রান্তরে এসে দেখি
টিভি স্টার কয়েকজন!

হেঁটে যায় আমাদেরই পাশ দিয়ে
আর তার সুগন্ধিতে ছুঁয়ে যায়
আমাদের মন

শ্যুটিং-এর উদ্দেশ্যেই
তারা আসছেন এই নির্জন স্থানে
বললেন পর্যটনকর্মী

দুপুর রোদে হ্রদের কিনারে
রথ দেখে কলা বেচছেন তারা
আমরা দেখছি আজ চাক্ষুষ
বিনোদনমুখর, স্টারদের জীবন!

বিকালবেলা

এই যে বিকালবেলা, নরোম রোদের আলো
আমি আর শে পাশাপাশি হাঁটি
মনে হয় অন্য কোনো অবয়ব, অন্য কোনো সময়ের ভিতর
আমাদের এই হেঁটে যাওয়া; বিকালবেলার আলো
আরো নুয়ে আসে পথটির উপর, গাছেদের ছায়াগুলির পাশে।

সেই পথ ধরে হেঁটে হেঁটে
আরো দূর রোদের আলোর খেলার সাথে
সরে যাচ্ছে আমাদের মেয়ে;

রাঙামাটির শান্ত, ছবির মতো পথটির উপর দিয়ে।

ছড়ানো ছড়ানো টিলা

ছড়ানো ছড়ানো টিলা, এই রাঙামাটি।
উঁচু নিচু পথ।

সমতলের মন ধাক্কা খায়
একটু একটু ভালোই লাগে
ল্যান্ডস্কেপ।

চেনা চেনাও লাগে হঠাৎ
একই বাজার ও বিনিময় প্রথার
ভিতরই তো এই শহর।

হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায়
এইখানে ঢুকে পড়ছে সভ্যতা,
উন্নত হচ্ছে জনপদ।

রিজার্ভ বাজার ছাড়িয়ে
বনরূপা পর্যন্ত এক্সটেনশন হচ্ছে শহর।

ভান্তের দরবারে

ভান্তের বাড়িতে দাওয়াত নাই কারো আজ।
তবু ভিড়।

বুদ্ধের মূর্তির কাছে গিয়ে যে কেউ দাঁড়িয়ে পড়তে পারে
চোরাকাঁটা পায়ে নিয়ে আমিও তাই, দাঁড়িয়ে গেলাম।
ভক্তরা দেখছে আড়চোখে আমাকে
সোজা চোখে আমি তাকাই সামনে
দেখি স্বয়ং ভগবান। বসে আছেন।

স্থির দ্যোতনা ভক্তের।
অশুদ্ধ জীবনে শিখি নাই আমি
রীতি ও প্রণাম!

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছি

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকি, দাঁড়াই শেষে এসে।
পানিতে নৌকা বাঁধা, বিকালবেলায়, ঘোলা জলে।

পানির ঐপারে টিলা, ছোট ছোট বাড়ি ঘর।
সূর্য ডুবে যাবে, তার আলো জলের ভিতর।

মলিন দিনের স্মৃতি, শেষ হয়ে যেতে চলেছে
চলো, উঠে আসো;
মাঠের চোরাকাঁটায় আর একটু হাঁটি।

রিজার্ভ বাজার

রিজার্ভ বাজারের ভিড়ে
আটকে আছে মন।
মানুষের চলাফেরা, বসে থাকা নিশ্চল
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামা পথ
নৌকার গলুই পর্যন্ত

নেমে দেখি, কত অজানারে!

এইরকম স্মৃতিও আছে
অন্যান্য রকমের মতো, যথা
পদলেহন

স্যাটায়ার

তোমার মুখ খুললেই বেদনা নিঃসৃত হয়
আর পালাই পালাই মনোভাব নিয়ে
জড়ো হন করুণ স্মৃতিমুখ

পাহাড়ে জঙ্গলে আসি
তুচ্ছ করি সেই প্রতিকৃতিসকল

যে জানে সে তো পগারপার
আমি কেবল ডুগডুগি বাজাই
অভিন্ন সমাজরেখায় দাঁড়িয়ে
দেখি, ভিন্নতাসমূহ
ইন্টার-অ্যাকক্টিভ মিডিয়ার ভিতর
বিম্বিত হতে চলেছে

এই স্থান, দৃশ্যকল্প, প্রেক্ষাপট
এমন কি ভাবনাও

স্যাটায়ার মানে বেদনারূপ, মনোকষ্ট,
অব্যক্ততার।

নিরবতা

যেখান থেকে শুরু
সেখানেই ফেলে আসছি সমস্ত প্রয়াণ।

যা কিছু দেখেছি
যা কিছু দেখি নাই
ঝাপসা হচ্ছে তার বিবরণ

বর্ণনার ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে গর্তগুলি
অতিক্রমগুলি ফিরে পাচ্ছে নতুন নতুন অবয়ব
যেমন করে হ্রদের ভিতর ঢুকে গেছে রাজবাড়ি
আর দাঁড়িয়ে আছে ডিসির বাংলো জলের কিনারায়

এই দৃশ্যকল্পটাই কি সবচেয়ে বেশি মানানসই, প্রেক্ষাপটের সাথে?
এই সিম্বলটা-ই কি সবচেয়ে বেশি রিপ্রেজেন্টেটিভ?
নৃতত্ত্ব ও ইতিহাস আলোচনায়, রাঙামাটির?

উ চি মং কী বলবে অথবা কী বলতো কল্পনা চাকমা?
কী ই বা এখন বলছে তারা?

পাহাড় স্তব্ধ আর জল নিশ্চল
নিরবতাই আমি শুনছি কেবল।

ঝুলন্ত ব্রিজ

ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
হেঁটে যেতে যেতে মেয়েকে দেখাই,
দেখো, কাঠের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে জল, স্থির পানি।
অর্থাৎ কিনা আমরা হেঁটে যাচ্ছি পানির উপর দিয়ে!

এই যুক্তি শুনে মেয়ে ভয় পেয়ে উঠলো কোলে।

একপাশে বিডিআর-এর বাংলো
আরেক টিলায় সেটেলারদের বেড়ার নতুন ঘর।

আমি ভাবছি, মানুষগুলি আজ গেলো কোথায়;
ওরা কি গেছে বিদ্যালয়ে, শিখতে বাংলা অক্ষর?

হ্রদের জলে সেটেলারের বোটে

বোটে করে যাচ্ছি সকালবেলায়।
যাচ্ছি শুভলং-এর ঝর্না দেখতে।
৩ ঘণ্টার পথ, আমরা ৩ জন আরোহী।
বোট চালাচ্ছেন যিনি তার আদি নিবাস, নোয়াখালী
এই পেশায় নতুন তিনি, তাই
বাতাসের গতিবেগ বুঝতে কিছুটা বিমূঢ়।

সেইটা আরো ভালোভাবে বোঝা গেল
যখন তার তেলের পাইপ জ্যাম হইলো,
মেশিন ছাড়া বোট তার এক টিলা থেকে
আরেক টিলায় টক্কর খেতে লাগলো . . .

হ্রদের পানি ঠেলে ছোট্ট নৌকাটাকে
শোঁ শোঁ বাতাস, সকালের;
আর কত দূর নিয়ে যাবে সে?

উদ্ধার-কর্তা

উদ্ধার-কর্তা মহান, কিন্তু সে নিতান্ত-ই কিশোর।

আমার বউ তাকে ধন্যবাদ জানায়,
আমি বিনম্রভাবে হাসি, মেয়েকে বলি,
'আন্কেলকে টা টা দাও, গুডবাই বলো।'

ঝর্নার কাছে

ঝর্নার বুকেও আছে ছোট্ট চায়ের দোকান।
তৃষ্ণায় অথবা আনন্দে কারো গলা শুকিয়ে গেলে
সেইখানে পাওয়া যাবে, মিনারেল ওয়াটার।

ঝর্না

ঝর্নার পানির সে কী শব্দ!
সে কী ঠাণ্ডা এই জল!
কোনোদিন ফুরাবে না যেন প্রপাত
চির অস্ফূট এই কোলাহল!

পেদা টিং টিং

এই রকম একটা মনোরম দ্বীপরাজ্যে এসে
আর কী চাই তোমার বলো?

লাঞ্চ শেষে তোলা হোক
একটি ফ্যামিলি ফটো!

হরতাল

হরতাল হয় রাঙামাটিতেও।

শুধুমাত্র ঢাকা আর রাঙামাটিতেই হরতাল হয় এখন।
এইখানে না আসলে বিশ্বাস করতাম না
এমন ভর দুপরে রাস্তায় বের না হয়ে পড়লে।

রোদ-গন্ধ দুপুরের ভিতর হাঁটতে হাঁটতে এই এতদূর
ফিরে যাওয়ার পথ খোলা নাই
হরতাল শেষ হলে, তারপর

এর আগে সমস্তই বন্ধ;
বন্ধ আজ বিপণীকেন্দ্রগুলি, তবলছড়ি বাজার

ফাঁকা রাস্তায় তিন চাকার সাইকেল চালাচ্ছে শিশু
তারপর একটা মিলিটারি জিপ ছুটে গেলো হঠাৎ।

হরতাল, হরতাল।

মিছিল নাই, পিকেটিং নাই
আছে গোপন-ভীতি, রেস্ট ডে'র ঝিমুনি
তপ্ত রোদের নিদান।

মিলিটারি

শালা, মিলিটারির দাপট কতো, দেখো!

মন কেন তুমি মিলিটারি হইলা না?
জিপ চালাইতা ফাঁকা রোড দিয়া
স্পিড বোটে যাইতা দূরে
পাহাড়ের চিপা দিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে!

আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস, ট্রাইবাল বেদনা চাপা, মনে।

বাসের টিকিট

কবে যাবো শহরে, চট্টগ্রামে?
যেতে কি পারবো আজ?

জিজ্ঞেস করলাম দোকানদারকে আবার।
কোক কিনলাম জবাব পাওয়ার আশায়।

তিনি সদাশয়, জানালেন
ঢাকার বাসের খবর
লাস্ট ট্রিপ তো যাবে অবশ্যই।

আর বাসের টিকেট বিক্রেতা তো
সাক্ষাৎ ফেরেশতা
দিয়ে দিলেন প্রথম দুটি সিট

আমি তো গদগদ
কী যে করি!
ঠাণ্ডা পানির বোতল নিয়ে আসি
বউ বাচ্চাকে খবর দিই
চলে যেতে পারছি আজকেই

শুরু হয়ে যাবে আবার গর্তের জীবন
দ্রুত ঢুকে যেতে পারবো চিন্তা আর দুর্ভাবনায়
অহমিকায়, নিজের।

ফিরে যাচ্ছি

ফিরে যাচ্ছি, আবার আসবো বলে।

এই যেমন, বিদুৎ কর্মকর্তার বউ উঠলেন, দুইজন বাচ্চাসহ
বাপের বাড়ি কয়েকটা দিন থেকে আবার ফিরে আসবেন বলে।
জেলা মৎস্য অফিসারের তিনজন বন্ধু বউ-বাচ্চাসহ
ভেকেশন কাটিয়ে ফিরে চলেছেন;
তারাও আবার আসবেন কখনো সময় পেলে,
কথা দিলেন।

হিন্দু নব-দম্পতির হানিমুন হলো এই রাঙামাটিতেই
কী লাল বউটার কপালের সিঁদুর!
যদি তারা নাও আসেন কখনো, চিরকাল গল্প করবেন
এই ভ্রমণের;
বিয়েটা টিকে গেলে নাতি-নাতনিদেরও বলবেন হয়তো

কাঠের ব্যবসায়ী যিনি, উনাকে তো আসতেই হয়
এক সপ্তাহ পর পর;
রাঙামাটি তো এখন উনার বাড়ি ঘরের মতোই।

শেষ বাসে আরো অনেকের সাথে আমরাও ফিরে চলছি।

সূর্য ডুবে গেছে।
বৃষ্টি হচ্ছে একটু একটু।
পথ ভিজে যাচ্ছে।

অনেক হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমদের মেয়েটা এখন
তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে।
জেগে উঠে শে কি বুঝবে কোনোদিন, তার কি মনে থাকবে
শেও এসেছিল রাঙামাটিতে একদিন;
দেখেছিল পাহাড়, উঁচু নিচু পথ
গ্লানিময় জলের ছোট্ট শহর!

পাহাড় থেকে দূরে

বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পথ
এলোমেলো হচ্ছে ভাবনারা
ভ্রমণবিলাসী ডানা, আসছে গুটিয়ে

বাস ছুটছে দ্রুত, সন্ধ্যা নামার আগে
পৌঁছাতে হবে শহরে
যেখানে জ্বলছে বাতিগুলি ত্রস্ততায়

পাহাড় থেকে দূরে
পাহাড় জেগে উঠছে
আমাদের মনে

রাবার বাগান
হাটহাজারী পার হয়ে

পাদটীকা

সন্ধ্যার অতিথি যিনি, বংশীবাদক
তাকে কেন অগ্রাহ্য করি
বলছি যতোই খুঁটিনাটি
ততই হাঁসফাঁস করছে ক্রম

কেন আর তাকেও যুক্ত করি
এই যে বর্ণনা-কাহিনি
তা তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
কাহিনির আড়াল আছে
আছে সত্য ও প্রবহমান সংশয়
ব্যক্তির মূলে যে অস্থাবর বোধ
তার ক্রিয়াকলাপ

স্বচ্ছ পানির নিচে
লতা-গুল্মের বেড়ে ওঠার স্মৃতি
ধরে ফেলে আমাকে তারপরও
বলে, ঐ যে আমরা গিয়েছিলাম না!
রাঙামাটি!!

প্রথম স্মৃতি ও পুরানো গান

শেষ বাসে বমি করতে করতে আমি প্রথম নেমেছিলাম
সন্ধ্যাবেলায়।
তারপর একবার বিকালবেলা হোন্ডা চেপে
রিজার্ভ বাজার।

ফিরে এসে গেয়েছিলাম চাকমা গান
সম্মিলিত কণ্ঠে
কিংবা যাওয়ার আগেই

আসলে আমরা তো সবসময় অভ্যাস করি
রিপ্রেজেন্ট করার অধিকার
বর্ণনাসম্ভব বিষয়ের ভিতর বন্ধুত্বে ও অব্যক্ততায়
ক্রুরতা জারি থাকে তখন
যথা, সান্ধ্য-আইন।

ভ্রমণের শেষে

খণ্ডিত এই বয়ান, একচোখা ও অসম্পূর্ণ, পার হতে থাকা দিনগুলির মতোই একরোখা, বাস্তবিক। তার প্রতিরূপ, ছায়ার ভিতর লুকানো। সেইসব ঘটনা খুঁজতে খুঁজতে ভুলে যাওয়া, অবদমন, ভ্রমণ-কাহিনি বর্ণনা। বিরতির ভিতর জেগে থাকা, ব্যক্তিগত জঞ্জাল। তারা মুখোশ আটা ক্রম, অথচ হতে চাইছে মানবিকতার বোধ!

এই অভিলাষ-অভিব্যক্তি-বাহ্যিকতা, অন্তঃপ্রাণ লোকালয় স্পৃহা, বাজারে বাজারে ঘুরে, অস্পৃশ্য আত্মাগুলি বেচে। বেঁচে থাকার এইসব ম্রিয়মাণ চিহ্ন, দ্যুতিময়, ক্ষণিকের সময় গহ্বরগুলিতে, স্থানের পাঁকচক্রে বাঁধা। চরিত্র-নির্ভর অবলোকন, নির্দিষ্টকরণ, ফেলে দেয়া, ঘষা-মাজা, নির্বাচন, যেতে যেতে দেখছিলাম আমি কিংবা আমরাও!

এই যে বহুত্ববোধ, ক্রম-উল্লেখ, তাদের নিস্তার নাই, এইবার তাদের মরিচ বাটা। তার মধ্যে আবার স্বচ্ছ পানিতে ভেসে যায়, আমাদের ভালোবাসা!

জলের উপর স্টিমারে বসে সন্ধ্যাবেলার নাস্তা, জন্মদিন পার্টি, কলেজের দিন হয়ে ফেরত আসে নাই, তথাপি আর কী -ই বা বলা যাইতো, আর কী-ই বা বলতাম কোরাস কণ্ঠ? পাহাড়ের খাঁজে প্রথম আনারসের জন্ম? পথের মধ্যে অথবা হঠাৎই? আবারো?

সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, ২০০৬

বন্ধুদের কাছে লেখাটি ইমেইল করতে নিচের tell a friend বাটন ক্লিক করুন: