তিউনিশয়া: “আমরা আর মোটেও ভীত নই”!

সংকলক
Published : 6 Jan 2011, 00:02 AM
Updated : 6 Jan 2011, 00:02 AM

গত সপ্তাহের প্রথম দিকে আইনজীবী,সাংবাদিক এবং তিউনিশীয় ইউনিয়ন আয়োজিত প্রথম প্রতিবাদের ভিডিও বর্হিবিশ্বের কাছে আপাত নিরীহ মনে হলেও তিউনিশীয় প্রেক্ষাপটে তা ছিল ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা।

তিউনিশীয় ব্লগার আনিস যুব সমাজের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে এক পোস্টে লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল (ফরাসী ভাষায়) "আমার বয়স ৩১ এবং আমি কখনো ভোট দেইনি"। তিনি ৩০ ডিসেম্বর লিখেন: "জনাব রাষ্ট্রপতি,আমরা আর ভীত নই"।

Cette phrase, aperçue sur une pancarte lors d'une manifestation des avocats Tunisiens devant la Cour de Justice de Tunis, résume parfaitement le sentiment de beaucoup de Tunisiens aujourd'hui. Nous vivons une période historique pour les Tunisiens, qui habitués au silence, à la peur et au conformisme depuis des décennies prennent enfin leur destin en main.[…]La dernière fois que le peuple s'est soulevé massivement et spontanément sans être motivé par des raisons religieuses ou pour soutenir les Palestiniens ou les Irakiens… c'était sous Bourguiba, les bien fameuses révoltes du pain.

তিউনিশীয় আদালতের সামনে আইনজীবীদের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রাস্তার এক প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই বাক্যটি দেখা যায়, যা বর্তমানে অধিকাংশ তিউনিশীয় জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন।বর্তমানে আমরা এক ঐতিহাসিক মূহুর্তে বসবাস করছি, সাধারণত: চুপচাপ,ভীতু এবং দশক ধরে বাধ্যগত তিউনিশীয় জনগণ চূড়ান্তভাবে তারা তাদের ভাগ্যকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে(..)। ফিলিস্তিন বা ইরাকিদের প্রতি সমর্থন নয় বরং শেষবার জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে ধর্মীয় প্রণোদনা ছাড়া বোরগুইবার ছত্রছায়ায় অদ্ভুত রুটি বিদ্রোহে অংশ নিয়েছে।

২৪ ডিসেম্বর, ৪৪ বছর বয়স্ক চৌকি বেলহোসেইনী এল হারদি পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এফআইডিএইচ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে (ফরাসী ভাষায়) বিষয়টিকে সংঘাতের মূল ভিত্তি এবং ভায়োলেন্স এগেইনেস্ট লইয়ার এর চিত্র তুলে ধরেন এবং তিউনিশীয় গার্ল নামক ব্লগে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়।

A Tunis,par exemple, des agents de police en civil et les agents de la force de sécurité ont assiégé de la zone du palais de justice. Ils ont empêché certains avocats d'entrer dans la zone et laisser d'autres y accéder. Lorsque les avocats tenté de quitter la Maison du Barreau, où ils se réunissaient, les forces de sécurité sont intervenues et ont utilisé la violence.

তিউনিশিয়ায় পুলিশরা সাধারণ পোষাকে থাকে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আদালত ভবনের চারপাশে মোতায়েন থাকে। তাঁরা কিছু কিছু আইনজীবীকে ঐ এলাকায় প্রবেশে বাধা দেয় এবং কোন কোন আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়। আইনজীবীরা যখন আদালত ভবন ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে সমাবেশে আসার উদ্যোগ নেয়, তখন পুলিশ বলপ্রয়োগ করে এবং সহিংসতার পথ গ্রহণ করে।

বেন আলির বুধবারের আকস্মিক টেলিভিশন ভাষন [ ভিডিও] এবং সরকারের পরিবর্তন, পরিস্থিতিতে কোন প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনতে পারবে না। টুইটার ও ফেসবুকে সর্বাধিক পঠিত ও অন্যকে জানানো এক পোস্টে, এক তরুণ তিউনিশিয় উদ্যেক্তা তাঁর এক খোলা চিঠিতে বলেন (ফরাসী ভাষায়):

Vos jeunes se sont soulevés et il sera difficile de les faire taire : Ils s'immolent, s'électrocutent, et je ne pense sérieusement pas que des coups de matraques ou des longues nuits dans les commissariats vont leur faire peur.

এখানে তারুণ্য জেগে উঠেছে। এখন তাদের চুপ করিয়ে রাখা কঠিন: তারা নিজেদেরকে আগুনে সমর্পণ করেছে, তারা বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গে নিজেদের পুড়িয়ে নিয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করিনা যে, লাঠিপেটা কিংবা থানায় দীর্ঘরাত আটকে রাখা, তাদের মনে ভয় ধরাতে পারবে।

দুই সপ্তাহ ধরে তিউনিশিয়ার নেট নাগরিক এবং আম্মার নামে পরিচিত তিউনিশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত সেন্সরশীপ পদ্ধতির মাঝে ইদুর বিড়ার খেলা এবং প্রকৃত এক "সাইবার যুদ্ধ" চলছে। ব্লগার আস্ট্রুবাল এর গোপন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করছে।

তিউনিশিয়ার ব্লগাররা অনেক লম্বা সময় ধরে ফেসবুক এবং সেন্সরকৃত পোস্ট, ভিডিও, ছবি এবং তাজা সংবাদ (যেমন এক সাংবাদিককে প্রহার করার সংবাদ) বিদেশের মূল তিউনিশিয়ার ব্লগি প্লাটফর্ম এবং ইনফরমেশন গেটওয়ে বা তথ্য প্রযুক্তির এক ভিন্ন মাধ্যমে এবং টুইটারে অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন শব্দ যেমন #সিদিবোউজিদের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য বিকল্প সফ্টওয়ার ব্যবহার করছে।

এখনো মনে হচ্ছে আম্মার সামাজিক প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে:

bharmoez Facebook est complètement coupé à Redaïef !!!! on est coupééééé ! twitter pas encore. j'ai l'impression que ca ne va pas tarder..#sidibouzid

রেডআইফ থেকে ফেসবুক সরিয়ে ফেলা হয়েছে!!! আমরা এই ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। এখন পর্যন্ত টুইটারকে বিচ্ছিন্ন করা হয়নি, কিন্তু আমি মনে করি আর বেশিদিন তা আমাদের এখানকার ইন্টারনেটে দেখা যাবে না…#সিদিবোউজিদ।

তিউনিশিয়ান নিউমেরিক নিশ্চিত করেছে যে, তিউনিশিয়া ফেসবুকের উপস্থিতিকে আম্মার তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

les internautes tunisiens-la communauté la plus connectée au Facebook dans l'Afrique du Nord- se trouvait depuis l'après midi du 30 décembre 2010.face à une erreur technique lors de l'upload de n'importe quelle photo ou vidéo.

তিউনিশিয়ার নেটিজেন, যারা উত্তর আফ্রিকায় পরস্পরের সাথে যুক্ত অন্যতম এক সম্প্রদায়- তারা ৩০ ডিসেম্বরের বিকেলের পর থেকে ফেসবুকে আর কোন ছবি বা ভিডিও আপলোড করতে পারছে না।

ফেলিসিয়ে জানাচ্ছে,(ফরাসী ভাষায়) ৩১ ডিসেম্বর তিউনিশিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখ হয়:

coupure de l'internet sur Tunis, les médias disent que la situation est stable mais les manif continue dans toutes les régions #sidibouzid

তিউনিশিয়া কোন ইন্টারনেট কাজ করছে না, কিন্তু প্রচার মাধ্যম বলছে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ চলছেই #সিদিবোউজিদ।

রিপোটার্স সঁ ফ্রন্টিয়ার্স বা সীমান্তবিহীন সাংবাদিকের দল নামক সংগঠন সুসংগঠিত ভাবে তথ্য প্রদান বন্ধ রাখার (ফরাসী ভাষায়) ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা দেশটির সকল সমস্যাকে যুক্ত করে। প্রতি বছর "ইন্টারনেট শত্রু রাষ্ট্রের" যে বার্ষিক তালিকা হয়, তাতে দীর্ঘ সময় ধরে তিউনিশিয়ার নাম উল্লেখ রয়েছে।

#সিদিবোউজিদ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্যারিস, মিউনিখ এবং বৈরুতে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। মূল ধারার সব আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রদর্শন না করা এবং পশ্চিমা কূটনীতি, এর সাথে স্থানীয় সব সেন্সরশীপ, এগুলো অনেক তিউনিশিয় এক্টিভিস্টের জন্য এক তিক্ত বিষয়।

আইফিকরা, ভণ্ড পশ্চিমাদের বলছেন যে, ইরানের সংবাদ সপ্তাহ পর সপ্তাহ ধরে সংবাদে শিরোনাম হয়ে থাকে, আর #তিউনিশিয়া বর্তমানে দুই সপ্তাহ ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে #সিদিবোউজিদ।

নাওয়াত ইংরেজভাষী সংবাদ মাধ্যমসমূহকে অভিবাদন জানাচ্ছে:

La presse anglo-saxonne – contrairement à la presse française – a été particulièrement intéressée par les émeutes sociales en Tunisie. Le modèle économique et politique tunisien est décortiqué avec vigueur.

ইংরেজভাষী সংবাদ মাধ্যম, ফরাসীভাষী সংবাদ মাধ্যমের ঠিক বিপরীত কাজ করেছে- তিউনিশিয়ায় যে সামাজিক দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতি কৌতুহল প্রদর্শন করেছে। তারা গভীরভাবে তিউনিশিয়ার অর্থনৈতিক মডেলের বিশ্লেষণ করে।

বর্তমান ঘটনার উপর আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের গুরুত্বের ব্যাপারে; আল বাব তারপরেও সতর্ক:

একটা পর্যায় পর্যন্ত, আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের সংবাদ হয়ে আসা- বা এর অনুপস্থিতি- অবশ্যই একটা বিষয়? যদি সারা বিশ্বের লোক জানতে পারে যে, তিউনিশিয়া কি ঘটছে তাহলে অবশ্যই তা ভালো, কিন্তু কি ভাবে তা দেশের ভেতরে চলতে থাকা সমস্যায় কাজে লাগবে? এই লড়াইয়ের উদ্দেশ্য নিজেদের ছবি নিউ ইয়র্ক টাইমসে তুলে ধরা নয়, এটা বেন আলীর বিরুদ্ধে লড়াই।

এই বিষয়ে মূল ধারার সব ফরাসী প্রচার মাধ্যম সতর্কতার সাথে সংবাদ প্রদান এবং সরকারের নিরবতার ক্ষেত্রে আন্দ্রে, লে মন্ড নামক পত্রিকার মন্তব্য বিভাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, এখানে বলা হয়েছে তিউনিশিয়া এমন একটি দেশ যেখানে [ফরাসী ভাষায়]:

…où de nombreuses entreprises françaises ont délocalisé leur production. Si au plan économique on trouve pire , au plan du respect des droits de l'homme, on ne peut pas en dire autant.A l'inverse de la Côte d'Ivoire, on entend beaucoup moins les défenseurs de la démocratie quand il s'agit de la Tunisie. Sous prétexte de barrer la route aux islamistes intégristes, on ferme les yeux sur toutes les mesures dignes plus d'une dictature que d'une démocratie.Politique du deux poids deux mesures.

অনেক ফরাসী কোম্পানী তাদের পণ্য উৎপাদান করে। যদি কেউ অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে খারাপ কিছু ঘটায়, একজন মানবাধিকার কর্মীর দৃষ্টিতে তা এক নয়। এখনকার অভিজ্ঞতা আইভরি কোস্টের সমস্যার ঠিক বিপরীত, যখন তা তিউনিশয়ার বেলায় ঘটল, তখন আমরা মানবাধিকার কর্মীদের তেমন আওয়াজ পাচ্ছি না। কারণ আমরা ইসলামী মৌলবাদীদের ক্ষমতায় আসা থেকে বিরত রাখতে চাই। এ কারণে যাদের কাজকর্মে গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার চেযে স্বৈরাচারী মনোভাব দৃশ্যমান, আমরা তাদের বেলায় চুপ করে থাকি। এটা পরিষ্কার এক দ্বৈত নীতি।

মরোক্কো, আলজেরিয়া এবং মিশরের ব্লগাররা তিউনিশিয়ার ঘটনা খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

Boubled Chez nous #SidiBouzid c'est chaque jour et partout ,dans chaque recoin d'Algérie .

এখানে আলজেরিয়ায়, প্রতিদিন এ দেশের প্রতিটি কোনায় #সিদিবোউজিদের মত ঘটনা ঘটে চলেছে।

ব্লগার ইসমাইল যিনি ফ্রান্সে বাস করেন, তিনি নীচের বিষয়টি অনুমান করছেন (ফরাসী ভাষায়):

Sidi Bouzid est le tragique témoignage, encore une fois, d'un ras-le-bol généralisé de la jeunesse des pays en voie de développement, plus particulièrement de la zone Nord-Afrique Moyen-Orient, le même désespoir, la même rage et les mêmes réponses répressives de la part des Gouvernements, ça c'est déjà passé en Iran, aujourd'hui c'est en Tunisie demain ça sera l'Algérie ou le Maroc.

এক উন্নয়নশীল দেশের তারুণ্যের আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনার স্বাক্ষী হচ্ছে সিদি বোউজিদের ঘটনা, বিশেষ করা মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফিকা নামে পরিচিত মিনা অঞ্চলেরেএক করুণ কাহিনী, যা ক্লান্তিকার ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। এটা সেই একই হতাশা, ক্ষোভ এবং সরকারের একই রকম দমন নিপিড়নের কাহিনী; যে রকমটা আগে ইরানে ঘটন, আজ তা তিউনিশিয়া ঘটছে এবং আগামীতে তা আলজেরিয়া বা মরোক্কোতে ঘটবে।

তিনি এর সাথে যোগ করেছেন, সম্প্রতি এই প্রবন্ধটি তিউনিশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তিনি লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছেন যেন তারা এই প্রবন্ধটি অন্যকে পড়তে বলে।

লেখাটি গ্লোবাল ভয়েস থেকে পুনঃপ্রকাশিত। মূল লেখাটি পাওয়া যাবে এখানে