প্রমা সঞ্চিতা অত্রি
Published : 6 May 2010, 03:54 PM
Updated : 6 May 2010, 03:54 PM


আবদুল্লাহ আবু সায়ীদশাহীন আখতার

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কাছে জানতে চাই তাঁর বর্তমান জীবন ও কাজ সম্পর্কে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, "দিন কাটছে নানারকম কাজের মাঝে। চারদিকে এত কাজের চাপ যে সত্যি বলতে কী, এই ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে দেবার মত সময়টুকুও বার করতে পারছি না। অসম্ভব ব্যস্ততা। এতে আমার লেখালেখিও বেশ ব্যাহত হচ্ছে।"

"কি নিয়ে এত ব্যস্ততা?" প্রশ্ন রাখি তাঁর কাছে। "আমার স্বপ্ন, আমার কাজ—এসব নিয়েই ব্যস্ত! বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য-সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, পুরনো বাড়িতে আর কুলাচ্ছে না। তাই নতুন ভবনের কথা ভাবছি। সেজন্যই আর কি!" জানালেন তিনি।

জানতে চাই, "বর্তমানে কী লিখছেন?" জানালেন, "আপাতত আমি বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের উপর একটি বই লিখছি। বইয়ের নাম এখনো চূড়ান্ত করিনি। তবে, কাজের চাপে লেখালেখিতে আর আগের মতন মনোযোগ দিতে পারছি না। দেখা যায়, সব কিছুই করা হয় কিন্তু লেখার সময়টুকুই আর পাওয়া যায় না।"

"তবে কি সামনে আপনার কোনো বই বাজারে আসছে না?" জানতে চাই তাঁর কাছে। স্মিত হেসে তড়িৎ উত্তর দেন তিনি, "না না, তা কেন হবে! সামনের বইমেলাতে আমার প্রায় চার থেকে পাঁচটা বই আসছে।" কী কী বই, নাম জানতে চাইলে তিনি একে একে জানিয়ে দেন বইগুলোর নাম। তাঁর আত্মজীবনী মূলক বই, বহে জলবতী ধারার ২য় খণ্ড বের হতে যাচ্ছে সামনের বইমেলাতে। গত বইমেলাতে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর ভ্রমণ কাহিনী ওড়াওড়ির দিন। এবার বের হতে যাচ্ছে এর দ্বিতীয় খণ্ড। এছাড়াও প্রথম বারের মত তাঁর সমস্ত বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকার সংকলন। এ বইগুলোর কাজ এখনো শেষ হয় নি। সম্ভবত, এটাও তাঁর ব্যস্ততার আরেকটি বড় কারণ।

"কাজের চাপে কি বই পড়ার সময় পান?" জানতে চাই। "আমি আসলে বইয়ের পোকা! যত ব্যস্ততাই থাক আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়বই।"

"কী বই পড়ছেন এখন?"

"আমি সবসময় একসাথে অনেকগুলো বই পড়তে থাকি। এটাই আমার অভ্যাস। বইয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাছ-বিচার করি না। সবরকমই পড়ি, যখন যেটা হাতের কাছে পাই। কখন কোনটা পড়ছি তার কোনো ঠিক নেই। হয়ত কোনোটার শুরুতে, কোনোটার মাঝে আবার কোনোটা শেষে—এভাবেই বই পড়তে ভালো লাগে আমার।"

"এ কদিন যাবৎ যে সব বই পড়ছেন তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কোনটি?" জানতে চাই। "উল্লেখযোগ্য কোনটি বলতে বলা হলে আমি অবশ্যই বলব অবধূতের মরুতীর্থ হিংলাজ-এর কথা। আমার অসম্ভব প্রিয় বইগুলোর একটি হচ্ছে এ বইটি। খুব ছেলেবেলায় একবার পড়েছিলাম। তখন খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু মাঝখানে অনেকদিন আর পড়া হয়নি। এতদিন পর এখন আবার পড়ছি। বইটি পড়তে গিয়ে ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ছে!"

"বিশ্বসাহিত্যের বইপড়া কার্যক্রম নিয়ে নতুন কী পরিকল্পনা আছে?"—জানতে চাই।

"বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে সব সময়ই নতুন নতুন চিন্তা কাজ করে আমার মাথায়। যত দিন যাচ্ছে তত বাড়ছে এর সদস্য-সংখ্যা। গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা আড়াই লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। এত এত পাঠক, এত এত আলোকিত প্রাণ, এদের নিয়ে আমার অনেক চিন্তা, অনেক পরিকল্পনা। আপাতত একটা নতুন বিল্ডিং বানাতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য বিষয় নিয়ে চিন্তা করব। আমার ইচ্ছা আছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সংখ্যা আরও বাড়াব। থানা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে দেব। আমি বিশ্ব সাহিত্যের কার্যক্রমকে আরও ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চাই।

আর লেখালেখি বা সাহিত্য নিয়ে কী ভাবছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "লেখালেখি তো চলছে, চলবে। যতদিন পারব লিখে যেতে চেষ্টা করব, আর যখন পারব না তখন হব পরিকল্পনাবিদ।"

ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে একটু খোলাসা করে জানতে চাই তাঁর কাছে। তিনি বলেন, "বুড়োদের আর কী কাজ, ঐ পরিকল্পনা ছাড়া? কাজ তো করে বড়োরা, আর বুড়োরা করে পরিকল্পনা।" বলতে বলতে হেসে ওঠেন তিনি।

শাহীন আখতার

শাহীন আখতারের কাছে তাঁর বর্তমান লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আসলে এই মুহূর্তে তেমন কিছু লিখছি না। একটু বিরতি চলছে। সামনে যে বইটি লিখব সেটার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।" সামনে কী নিয়ে লিখছেন প্রশ্ন রাখি তাঁর কাছে। "এখনো কিছুই ঠিক করিনি। তবে, গত বইমেলায় আমার যে উপন্যাস বেরিয়েছে সেটার সাথে প্রেক্ষাপটে কিছু মিল থাকতে পারে। এখনো কিছুই নিশ্চিত নয়। বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছি।" হাসতে হাসতে বললেন তিনি।

গত বইমেলায় তাঁর কোনো বই বেরিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সখী রঙ্গমালা নামে একটি উপন্যাস বেরিয়েছিল। গত বইমেলা বলতে বইমেলা ২০১০-এ। বইটির কাহিনী বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাই তাঁর কাছে। তিনি বললেন "আড়াই শো বছর আগের প্রেক্ষাপট নিয়ে উপন্যাসের কাহিনী। দক্ষিণ সমতট অঞ্চলের এক কিংবদন্তীর অ্যাখ্যানকে উপজীব্য করেই উপন্যাসটি লিখেছি। এ উপন্যাসের পশ্চাদ্ভূমি মূলত নোয়াখালী অঞ্চলের পালাগান 'চৌধুরীর লড়াই'।

এত আগের ঘটনাকে উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন "আসলে পুরনো দিনের কথা বা ইতিহাস যাই বলেন না কেন, আমাকে অনেক টানে। সেই টান থেকেই লিখেছি।" উপন্যাসের জন্য উপাদান সংগ্রহ করেছেন কীভাবে—জানতে চাই। "অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। প্রচুর বইপত্র ঘেঁটেছি। বিশেষ করে পুরনো বইপত্র। দেশী-বিদেশী লেখকদের ভ্রমণ কাহিনী, ডাইরি, ইতিহাস, সাহিত্যসহ বেশকিছু আকরগ্রন্থ। এসব আমাকে সে সময়ের জীবনাচার, ভাব-ভাষা ইত্যাদি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।"

সামনের বইমেলাতে তাঁর কোনো বই আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি তো আসলে সেরকম নিয়মিত লিখি না। সব সময় লেখাও হয় না। অনেক গ্যাপ দিয়ে লিখি। এবার তো একটা বই বের হলো। দেখা যাবে পরের বইয়ের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় দুই কি তিন বছর লেগে যাবে।"

লেখালেখির বাইরে আর কী কী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "লেখালেখির বাইরে আর তেমন কিছু করা হচ্ছে না। অফিস নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। আর রাতে ফিরে একটু বই পড়ি—এই তো।" এখন কী বই পড়ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কাল রাতেই একটা বই শেষ করলাম। ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা একটা বই। বইটির নাম সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ায় পর্তুগীজদের আগমন। বইটির নাম সঠিকভাবে বলতে পারছি না বলে দুঃখিত।"

বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটি একটি গবেষণাধর্মী বই। দক্ষিণ এশিয়ায় পর্তুগীজদের আগমন, বাণিজ্য—ইত্যাদি বিষয়ক। ইতিহাসনির্ভর বই।"

সামনে কোনো কাজের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সামনে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। লেখালেখি আর অফিস ঠিকমত সামলে নিয়ে যেতে চাই। নতুন বইয়ের জন্য যে পরিকল্পনার কথা বললাম সেটা ঠিকমত বাস্তবায়ন করতে চাই।"