কপিরাইট আইন সংশোধন ও সংগীতকর্মের স্বত্ব প্রসঙ্গে

মুহম্মদ নূরুল হুদামুহম্মদ নূরুল হুদা
Published : 15 May 2016, 02:36 PM
Updated : 15 May 2016, 02:36 PM

যুগোপযোগীকরণের স্বার্থে স্বাধীন বাংলাদেশে কপিরাইট আইন মূলত একবারই সংশোধিত হয়েছে, ২০০৫ সালে। মাত্র তার ৫ বছর আগে, অর্থাৎ ২০০০ সালে কপিরাইট আইন বাংলা ভাষায় তৈরি হয় এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন সংশোধনী আনার কারণ মূলত দুটি : (১) প্রণীত আইনটি ছিল মূলত ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি ভাষায় লিখিত আইনেরই প্রায়-হুবহু বঙ্গানুবাদ। অনেক বছর ধরে আইনটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অচর্চিত ছিল। ফলে অনেক বিষয় বাংলা ভাষ্যে অষ্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক ও ক্ষেত্রবিশেষে বিরোধাত্মক বলে প্রতিভাত হয়েছে। এগুলো সহজবোধ্য ভাষায় ব্যাখ্য করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। (২) কম্পিউটার, অন-লাইন ও ওয়েবসাইটসহ নতুন কিছু ক্ষেত্র ও বিষয়ের আবির্ভাবের ফলে সেই সব বিষয়ের সংজ্ঞা, তৎসংক্রান্ত বিধিবিধান ও প্রয়োগ-ক্ষেত্র সংযুক্ত করাও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধনী প্রস্তাব ছাড়াও কপিরাইট আইনের ১০৩ ধারার মর্মানুযায়ী আইন প্রয়োগের ব্যবহারিক ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়নের জন্যে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কপিরাইট বিধিমালা ২০০৬ প্রণীত হয় এবং যথাবিধি জারি করা হয়। আপাতত মনে হলো, বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কপিরাইট মোটামুটি যুগোপযোগী হয়েছে। কিন্তু না, বিশ্বব্যাপী নবসৃষ্টি, আবিষ্কার, উদ্ভাবনা ও সৃষ্টিস্বত্বের বাণিজ্যিক ব্যবহারের অকল্পনীয় বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশেও তার ঢেউ এসে পড়ে। বিশেষত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যূরোপসহ উন্নত দেশসমূহ তাদের সৃষ্টিপণ্যের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্যে বিশ্বব্যাপী তাদের উৎপাদিত শিল্পপণ্যের মেধাস্বত্ব রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে।

শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিত্রকলা, স্থাপত্য, কম্পিউটার সামগ্রী, সফটওয়ার ও বিশেষ করে সংগীত মনোরঞ্জন বা বিনোদনের স্তর পেরিয়ে প্রকৃত প্রস্তাবে ব্যক্তিস্রষ্টা, উৎপাদনকারী ও ভোক্তার কাছে খুব দ্রুত অর্থকরী বিষয় হয়ে ওঠে। যোগাযোগ মাধ্যমের অস্বাভাবিক সম্প্রসারণের ফলে এই সব শিল্পপণ্য ও নন্দনদ্রব্যের স্রষ্টা ও তার উৎপাদকের স্বার্থ সনাক্তরণ, সংরক্ষণ, বৈধ ব্যহার ও যথাযথ উপকার বন্টনও জরুরি হয়ে পড়ে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে বিমূর্ত শিল্পও দ্রুতবেগে মূর্ত শিল্পপণ্যে রূপান্তরিত হয়ে মূল ব্যক্তিস্রষ্টার হাত থেকে বিযুক্ত হয়ে অন্য উৎপাদক ও ব্যবহারকারীর দ্বারা অবৈধভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ফলে উত্থাপিত হয় সৃষ্টিস্বত্ব লক্সঘনের অভিযোগ। কপিরাইটের পরিভাষায় এটিকে বলা হলো পাইরেসি, আমরা বাংলায় যাকে বাংলায় বলেছি তাষ্কর্য।

দেখা গেলো, এই পাইরেসির বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে উন্নত বিশ্ব। কেননা তারা বিশ্বব্যাপী তাদের সনাতন পণ্য ও নবোদ্ভাবিত পণ্যের মালিকানা সংরক্ষণ করতে চায়। এটা যে কতো লাভজনক তা তারা খুব ভালো করেই জানে। আর তারই পাশাপাশি সচেতন হয়ে উঠলো বিশ্বের সর্বপ্রান্তের ব্যক্তিস্রষ্টা, যারা যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও অধিকার-বঞ্চিত ছিলেন। কপিরাইটের আওতাভুক্ত যে ক্ষেত্রটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত হলো, তার নাম সংগীত ও তজ্জাত সৃষ্টিপণ্য, যা অতীতে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিশ্বের এ-প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। এতো দ্রুত ছড়ানোর জন্য মূল বাহকের কাজটি করলো ও করছে কম্পিউটার সফটওয়্যার, অনলাইন মিডিয়া, ওয়েবসাইট তথা ডিজিটাল দুনিয়া। বিষয়টি এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো যে সৃষ্টিস্বত্ব বা মেধাস্বত্ব বা কপিরাইটের দাবিদার অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র জাপান তাদের জাতীয় সম্পদসৃষ্টি ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সৃষ্ট ও উদ্ভাবিত পণ্যের মালিকানা সুরক্ষা প্রদানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করলো। সেহেতু জাতীয় ও অন্তর্জাতিক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করার জন্যে তারা তাদের কপিরাইট আইনকে প্রতি বছর হালনাগাদ ও নবায়ন করতে শুরু করলো। আর তাষ্কর্য বা লক্সঘন দমনের জন্যে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তারা আইপি কোর্ট পরিচালনা করলো। জাপানসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত রাষ্ট্রে কপিরাইট সুরক্ষার জন্যে কপিরাইট আইন হালতককরণ থেকে শুরু করে অধিকার আদায়ের জন্যে কপিরাইট সমিতিও গঠিত হলো। এই সামষ্টিক ও ব্যক্তিক মেধাস্বত্ব সুরক্ষার ঢেউ বাংলদেশেও সম্প্রসারিত হলো। এই সুরক্ষার খুঁটিনাটি বিষয়াদি আনুপূর্বিকভাবে যৌক্তিক করার স্বার্থে বিদ্যমান আইনটি আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রায়োগিক করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করলেন, মেধাস্বত্ব লক্সঘন ঠেকাবার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করলেন এবং আইন সংশোধনের জন্য স্টোকহোল্ডারদের নিয়ে সেমিনার, গ্রুপ আলোচনার পাশাপাশি সংশোধনী কমিটি গঠন করলেন। বিশেষত সংগীত, লোকসৃষ্টিজাত সম্পদ, সফট-ওয়ার, অনলাইন, ই-বুক, চুক্তিপত্র সম্পাদন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকৃত স্বত্বাধিকারী নির্ধারণের জন্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের উপর গুরুত্ব দেয়া হলো। বলা যেতে পারে ২০০৮ সাল থেকে এই নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হলো।

আজ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেকহোলডার বিভিন্ন সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন, যা বাস্তবায়িত হয়নি। বাস্তব ক্ষেত্রে সংগীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, শিল্পী ও প্রযোজকদের মধ্যে এই তর্কটা বেশি চলছে। এ নিয়ে বেশ কিছু আইনী মামলারও উদ্ভব হয়েছে। ফলে পুরো বিষয়টি জরুরিভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। এ যাবৎ প্রাপ্ত সমূদয় প্রস্তাব সমন্বিত করে অনতিবিলম্বে সংশোধিত কপিরাইট আইন অনুমোদনপূর্বক জারি করা যেতে পারে। আমাদের জানা মতে, প্রাপ্ত সমূদয় প্রস্তাবের ভিত্তিতে আইনটি সংশোধিত হলে দেশে বিদ্যমান বিবাদ বহুলাংশে নিরসন হবে। কেননা এই প্রস্তাবনায় সংগীত ও সফটওয়ারের সুরক্ষার পাশাপাশি ফোকলোর তথা লোকসৃষ্টির মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা হবে। তাহলে দেশের তৃণমূলীয় স্তরেও সংগীত, সাহিত্য, লোকশিল্প ও অন্যান্য সৃষ্টিকলার মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ক্ষেত্র তৈরি হবে। প্রদত্ত সংশোধনীতে 'লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষা' নামে একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় প্রস্তাবিত হয়েছে।

এই প্রস্তাবনায় স্রষ্টার সৃষ্টিস্বত্ব ও বাণজ্যিক স্বত্বের পাশাপাশি 'নৈতিক' ও 'সাংস্কৃতিক' স্বত্বের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রাখা জরুরি। কেননা বাণিজ্যিক স্বত্ব কাল-সীমায় আবদ্ধ থাকলে 'নৈতিক' ও 'সাংস্কৃতিক' স্বত্ব অসীম ও কালাতীত।

প্রাপ্ত প্রস্তাবের আলোকে সংশোধনীসমূহ অনুমোদনপূর্বক জারি করার পরও সংশোধনী কমিটি অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তারা সর্বক্ষণ পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নতুন সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারবেন এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর তা অনধিক দুবছর মেয়াদে গৃহীত হতে পারে। অর্থাৎ প্রতি দুবছর পর পর আইনটি যুগোপযোগীভাবে সংশোধন করা যেতে পারে।

সংশোধনী প্রস্তাব ছাড়াও যে সব বিবদমান বিষয়ে আদালতের রায় পাওয়া যাবে ও কার্যকরী হবে, সেগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক। বিবাদ মীমাংসা ও কপিরাইট অফিসকে আরো কর্মক্ষম করার লক্ষ্যে বর্তমান কপিরাইট বোর্ডকে আরো শক্তিশালী করে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পরিষদ রূপে তাদেরকে প্রয়োজনীয় নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মর্যাদা আরো উন্নীত করা যেতে পারে। উপরন্তু, এই বোর্ডকেই আইন সংশোধনের জন্য সর্বক্ষণ নজরদারির দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
কপিরাইটের অধিকার আদায়ের জন্য কপিরাইট সমিতির কার্যকারিতা এখন প্রায় সব স্টেকহোলডারই উপলব্ধি করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সীমিত। কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও বিশৃংখলা কমানোর স্বার্থে একটি ক্ষেত্রে একটিমাত্র সমিতি সীমিত রাখা যেতে পারে। আইনে এই বিধানটি থাকা বাঞ্চনীয়।

তবে কোনো ক্ষেত্রে কপিরাইট সমিতি না থাকলে কিংবা কোনো কপিরাইট সমিতি ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে কপিরাইট অফিস সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কপিরাইট সমিতি হিসাবে কাজ করতে পারে। আইনে এই বিধানটি রেখে কপিরাইট অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি করে একটি নতুন শাখা ও নতুন হিসাব খোলা যেতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের অংশীজনদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। এক্ষেত্রে কপিরাইট অফিস সংশ্লিষ্ট সকল স্রষ্টার রয়্যালটি আদায় ও বিতরণের পাশাপাশি প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ (ধরা যাক ২০%) সার্ভিস চার্জ হিসেবে রাখতে পারে। এই অর্থ অফিস পরিচালনা ও, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতিক অনুদানের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
মোদ্দা কথা, কপিরাইট আইন যুগোপযোগী করার জন্যে আইন হালতককরণ প্রক্রিয়া একটি অব্যাহত কর্ম হিসেবে গ্রহণ করে কপিরাইট অফিসের বর্তমান কর্মপরিধিকেও যৌক্তিকভাবে বৃ্দ্ধি করতে হবে।


আগেই উল্লেখ করেছি, এদেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সঙ্গীতকর্ম : সৃষ্টি, প্রযোজনা, অধিকার বন্টন ও অধিকার আদায়। আর এ-ক্ষেত্রে মূল বাধা হচ্ছে সংজ্ঞার অস্পষ্টতা, বৈধচুক্তিপত্রের অনুপস্থিতি ও অধিকারের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণাহীনতা। দেখা যাচ্ছে, ইতিপূবের্ সম্পাদিত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সুষ্পষ্ট কোনো চুক্তিপত্র নেই। আবার থাকলেও সেই চুক্তিপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ, বা নৈতিক অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রুটিপূর্ণ। এর দায় কিন্তু কম-বেশি উভয় পক্ষের। কাজেই সমাধানও উভয় পক্ষের ওপর বর্তায়। সমাধানের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত পর্যায়সমূহ চিহ্নিত করা যেতে পারে: (১) যেখানে চুক্তি নেই, সেখানে নতুন চুক্তি করা। (২) পুরনো চুক্তি থাকলে তা বৈধভাবে নবায়িত করা। (৩) সমঝোতার ভিত্তিতে প্রাক্তন লেনদেন নিষ্পত্তি করা। (৪) নতুন চুক্তি বা নবায়ন বা দেনা-পাওনার ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ দেখা গেলে কপিরাইট বোর্ডের মধ্যস্থতায় তা সমাধান করা। (৫) সংগীতকর্মের জন্য স্বত্ব সুনির্দিষ্ট করা, যেমন : বাণীর জন্যে গীতিকার; সুরের জন্যে সুরকার; সম্পাদন বা পরিবেশনার জন্য শিল্পী; আর প্রযোজনার জন্য প্রযোজক। (৬) সব ধরনের অধিকার আদায়ের জন্যে একটিমাত্র কপিরাইট সমিতি গঠন, যেখানে সব গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও প্রযোজক সমানুপাতিক হারে থাকতে পারেন। (৭) যতদিন এ-ধরনের সমিতি না হবে, ততদিন কপিরাইট অফিস এই দায়িত্ব সাময়িকভাবে (অনধিক দুবছরের জন্য) গ্রহণ করতে পারে। (৮) সংগীত যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌথসৃষ্টি সেহেতু প্রাপ্ত লভ্যাংশ গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, প্রযোজক ও কপিরাইট সমিতি/ কপিরাইট অফিসের (সার্ভিস চার্জ) সমানভাবে ভাগ করে বণ্টন করা যেতে পারে। অর্থাৎ লভ্যাংশ প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ ২০% হারে পেতে পারেন। প্রযোজক তাঁর লগ্নীকৃত অর্থ সবটুকু আদায় করবেন। পাশাপাশি তিনি অন্য সকলের সঙ্গে লভ্যাংশের শেয়ার পাবেন। এই বন্টনের একটি গ্রহণযোগ্য পূর্ব-পরিকল্পনা থাকবে। প্রতিটি সংগীত বিক্রিযোগ্য শিল্পপণ্য হিসেবে তৈরি ও বাজারজাত করার আগেই এই পরিকল্পনা করা হবে। (৯) যে কোনো বিরোধ কপিরাইট বোর্ডের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হবে। (১০) যদি কেউ একই সঙ্গে একাধিক ভূমিকা গ্রহণ করেন (যেমন গীতিকার, সুরকার, গায়ক ইত্যাদি), তবে তিনি সব ভূমিকার জন্য আনুপাতিক হারে লভ্যাংশ পাবেন। (১১) তবে কোনো গীতিকার বা সুরকার বা শিল্পী যদি এককালীন অর্থ গ্রহণ করে তার অংশ প্রযোজকের কাছে সমর্পণ করেন, তবে তিনি তা বৈধ চুক্তি অনুযায়ী করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নৈতক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে, কেননা তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। (১২) বিদ্যমান লোকসঙ্গীতের প্রযোজনার জন্যে সংশ্লিষ্ট লোকসমাজ বা কম্যুনিটির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। কম্যুনিটি না থাকলে সরকারের পক্ষে কপিরাইট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। (১৩) আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব আর্থিক বৎসর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। (১৪) পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বৎসরে অন্তত একবার সকল অংশীজন পর্যালোচনা সভায় মিলিত হতে পারেন। (১৫) কপিরাইট সমিতি যথাসময়ে সকলের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠন করতে পারে।

আপাতত এই সংক্ষিপ্ত জল্পনা এখানেই সমাপ্ত করা যাক। কেননা যে কোনো আইন ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে সমধিক প্রয়োজন শুভবুদ্ধি, সদিচ্ছা ও ন্যূনতম ত্যাগ স্বীকারের প্রবণতা। আশা করি, শেষ পর্যন্ত আমরা ব্যর্থ হবো না।
১১.০৫.২০১৬