ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতার প্রত্যক্ষ মদদে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জের সাঁওতাল-অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামে পুলিশ-র্যাব-সন্ত্রাসীর অতর্কিত হামলায় ভিটে মাটি ছাড়া হয়েছে উক্ত গ্রামের শতাধিক আদিবাসী কৃষক। পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে দুইজন আদিবাসী সাঁওতাল। আহত হয়ে পুলিশের ভয়ে চিকিৎসা নিতেও পারছে না অন্ততপক্ষে জনা ত্রিশেক নৃতাত্বিক সংখ্যালঘু আদিবাসী সাঁওতাল। শুধু আদিবাসী পুরুষদের গুলি করে হত্যা ও আহত করায় নয়, সাঁওতাল গ্রামটিতে চালানো হয়েছে লুটপাট, মারধর করা হয়েছে সাঁওতাল নারী ও শিশুকেও।
আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িঘর- আসবাবপত্র- জিনিসপত্রে। সাঁওতাল পুরুষেরা তাঁদের এলাকায় ফিরতে পারছেন না। তাঁরা নিরুপায় ও দুর্বল বলে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে মহিলাদের উপর। এমন কি হত্যার শিকার আদিবাসী সাঁওতালের লাশ পরে আছে উম্মুক্ত মাঠে। কেউ নেই তাদের দাহ করার।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার রংপুর সুগারমিলের কাঁচামাল ইক্ষু চাষের জন্য আদিবাসি ও বাংগালী কৃষকদের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি অ্যাকুয়ার করে। ফলে ১৫টি আদিবাসী গ্রাম এবং ৫ টি বাংগালী গ্রাম তাদের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়। সরকারের অ্যাকুয়ার চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যদি কখনো সরকার রংপুর সুগার মিল বন্ধ করে দেয় বা উক্ত জমিগুলোতে ইক্ষু ব্যতীত অন্য কোন ফসল চাষাবাদ করা হয় তবে সরকার জমিগুলো তার আসল মালিককে ফিরিয়ে দিবে।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় ২০০৪ সালে সরকার উক্ত সুগার মিল দুর্নীতির কারনে বন্ধ ঘোষনা করলেও আকুয়ারকৃত জমিগুলো তাদের আসল মালিককে ফেরত না দিয়ে এলাকার ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নিকট ইজাড়া প্রদান করে। তখন থেকেই সেখানকার আদিবাসীসহ প্রান্তিক বাঙ্গালি কৃষক'রা তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফিরে পাবার জন্য বরাবরই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। কিন্তু রাষ্ট্র ও প্রশাসন কখনই তাদের এ ন্যায্য দাবি আমলে নেয়নি। বরং গায়ের জোরে বারংবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফলে প্রতিরোধ হয়েছে সংঘর্ষ হয়েছে। পরিষেষে গত ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ পুলিশ প্রশাসন মিলকতৃপক্ষ ইক্ষু কাটার নামে আদিবাসীদের বাড়ি-ঘরে, বিদ্যালয়ে আগুন লাগিয়ে উচ্ছেদ করতে গেলে এই সংঘর্ষ বাধে।
এত বড় ঘটনা অথচ দু'-একটি মিডিয়ায় সংক্ষিপ্ত খবর ছাড়া জাতীয় পর্যায়ের অধিকাংশ মিডিয়ায় তার ফলাও করে প্রচার নেই। এমনকি দেশের সুশীল সমাজেরও নেই তেমন কোন উচ্চ কণ্ঠ। তবে কি আমরা সবাই প্রতিবাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি?