মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা

দেলোয়ার জাহিদ
Published : 11 Jan 2017, 04:42 AM
Updated : 11 Jan 2017, 04:42 AM

বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা, ইউনেস্কো ঘোষিত মানবতার স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় (২০১৬/ ১১.কম) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গত বছর নভেম্বর মাসে। এ অন্তর্ভুক্তি বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবরণের আনন্দমুখর দিন, একটি উপলক্ষ্য। জীবনের নতুন স্বপ্নে ভবিষ্যতকে সাজানোর দিন। যেদিন জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করে। নববর্ষের এ দিনটিতে সবকিছু যেন আবার নতুন করে দেখা দেয়, স্বদেশে, বিদেশে সর্বত্র। বাঙালির জীবনে হাজার বছরের পুরনো এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে গ্রথিত। এরই স্বীকৃতি মিললো ইউনেস্কো ঘোষণার মাধ্যমে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা, একটি উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ ও জনসাধারণের জন্য আয়োজিত পহেলা বৈশাখ (নববর্ষের দিন) উদযাপন করা হয় এ উৎসবের মাধ্যমে। চৌদ্দ এপ্রিল ১৯৮৯ সালে যখন বাঙ্গালি সামরিক শাসনের অধীনে পিষ্ট, যখন ছাত্রজনতা প্রতিবাদের ভাষা খুজতে ব্যস্ত। তখন সুন্দর ও ভাল ভবিষ্যত গড়ার জন্য এ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ উত্সবকে সামনে রেখে আনতে চেয়েছিল পরিবর্তন, সে পরিবর্তন প্রতিকী ভাষায়- মন্দ, সাহস, শক্তি এবং শান্তির লোক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বা প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা।

বাংলাদেশ লোক ঐতিহ্যের উপর পেইন্টিং উৎস হিসাবে, জনগণ ও তাদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সেইসাথে তাদের শক্তি, সাহস এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার হিম্মত, সত্য ও ন্যায়ের নজির কে প্রতীকায়িত করা। সংহতি ও গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি ভাগ- ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান নিয়ে এগিয়ে আসা। সম্প্রদায়ের মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা ও একতা সৃষ্টির ছাত্র-শিক্ষকদের প্রচেষ্টাকে সমুন্নত করা।

বাঙালির মনন ও চেতনার রঙে রঙিন হয়ে থাকা মঙ্গল শোভাযাত্রা হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে গ্রথিত। এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলার আগাম প্রস্তুতি চলছে কানাডা, আমেরিকা সহ নানা দেশে। বাংলাদেশে শান্তি, সহনশীলতা এবং সংস্কৃতির চর্চা করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সময় ও সুযোগ এসেছে, শান্তি-সংস্কৃতি, রক্ষায় বৈশ্বিক আন্দোলনে আমাদের ইতিহাস, ঐতির্য্য ও সমৃদ্ধ-সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্বে বাংলাদেশের মাতৃভাষার জন্য লড়াই, রক্তদান ও ভাষা দিবস বাস্তবায়নের গুরুত্বকে তুলে ধরার সুযোগ তৈরী হয়েছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন আরো এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক নববর্ষ উদযাপনকে অধিকতর অর্থবহ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে সমন্বিত এবং ঐক্যবদ্ব প্রয়াস প্রয়োজন। আলবার্টার এডমোনটন সিটিতে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমোনটন, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বাংলাদেশ ষ্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, মাহিনূর জাহিদ মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব আলবার্টা।

মঙ্গল শোভাযাত্রা, এখন একটি ইউনেস্কো সংস্কৃতির অংশ অর্থাৎ বাঙালিদের ঐতিহ্যগত এ কুচকাওয়াজকে বাংলা নববর্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়া একটি ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। দেশের গণমাধ্যম এ অর্জনের জন্য অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ইথিওপিয়ার রাজধানীতে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর আন্তঃসরকারী কমিটির ১১ তম অধিবেশনে গৃহীত এ সিদ্ধান্তটি বিশ্বে বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিকাশে পথিকৃৎ হয়ে থাকবে।

লেখক দেলোয়ার জাহিদ: বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা ও বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট কমান্ডের নির্বাহী সদস্য (দূরালাপনী: ৭৮০-২০০ ৩৫৯২)।

সংযুক্ত ছবিতে: আলবার্টার এডমোনটন সিটিতে বিভিন্ন সংগঠনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমালার চিত্র।