জঙ্গিবাদ, জিহাদ, আল কোরআন এবং আমরা

ড. কাজী আব্দুল মান্নান
Published : 2 August 2016, 07:51 AM
Updated : 2 August 2016, 07:51 AM

গত লেখায় বলেছিলাম জিহাদ সম্পর্কে কিছু লিখবো, তার ধারাবাহিকতার কারণেই আজকের এই লিখা । তবে আগেই বলে নিচ্ছি, জিহাদ সম্পর্কে আমার নিজের কোনো লিখা নাই এবং কি আমি কারো লিখার রেফারেন্স ও নিচ্ছি না । শুধু মাত্ৰ পবিত্র কোরআন শরীফের কতগুলো জায়গায় জিহাদ সম্পর্কে সরাসরি এবং ভিন্ন ভাৱে বলা হয়েছে, তার একটি ছক (টেবিল-১: পবিত্র কোরআন শরীফের যে সকল জায়গায় জিহাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে) আকারে উপস্থাপন করা হলো । কারণ এই সম্পর্কে আমাদের কথা বলার পূর্বে খুব সহজে একবার আয়াত গুলির উপর চোখ বুলিয়ে  নিতে পারি । আর দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গগন একটু গভীর ভাবে স্টাডি করে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি । কারণ এই রেফারেন্স গুলো হচ্ছে পবিত্র কোরআন, যা কারো পক্ষে পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন করা কোনো ভাবেই করা যাবে না ।

টেবিল ১: পবিত্র কোরআন শরীফের যে সকল জায়গায় জিহাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে

ক্রমিক নংসূরা নংআয়াত নং
১.১৯০১৯৪২১৬২১৮২৭৯        
২.১৪২             
৩.৭৫৭৭৮৪৯৪৯৫         
৪.৩৫৫৪            
৫.৬০৭২৭৪৭৫          
৬.১৬১৯0২৪৩৮৪১৪৩৪৫৮৯৬০৮১৮৬৮৮৯১৯২১১ ১২০১২৩
৭.১৬১১০             
৮.১৭৭৬             
৯.২২৭৮              
১০.২৫ ৫২             
১১.২৯৬৯             
১২.৩৩২৩             
১৩.৪৭0৩১           
১৪. ৪৮১৩            
১৫. ৪৯১৫             
১৬. ৬০             
১৭. ৬১১১            
১৮.৬৬             

তথ্য সূত্ৰ:  http://quran.gov.bd/

হালনাগাদ আমাদের দেশে যে ধরণের জঙ্গিবাদের উদ্ভব হয়েছে, তা যদি প্রেরণাদানকারী ফ্যাক্টর হয় জিহাদ (দায়িত্বশীল  ব্যাক্তিবর্গগনে মতে) ।  তা হলে, এর উৎস হচ্ছে ইসলাম, যার লিখিত সংবিধান হচ্ছে পবিত্র আল কোরআন ।  উপরের টেবিলটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পবিত্র কোরআন শরীফের মোট ১৮টি সূরার ৫৬টির বেশি আয়াতে, এই জিহাদ সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে বলা হয়েছে ।  তাই আমি বলবো আমরা যত সহজে এই জিহাদ সম্পর্কে মন্তব্য করি, তার বেশির ভাগ না বুঝেই কথা বলি । আমি আরো বেশি অবাক হই, যখন দেখি বিশেষ করে, সরকারের অতি উচ্চ আসনের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গগন তামাশার ছলে কথা বলেন । ব্যাপারটি সত্যিকার অর্থে তা কখনো মনে হবে না, যদি আমরা একটু মনোযোগ সহকারে পড়ি এবং নিজের বিবেক বুদ্ধি  দিয়েই  চিন্তা  করি । আমার কাছেও অনেক আয়াতের কথাগুলো অনেক সময় নির্মম মনে হয়, তা  হউক সেকাল অথবা একাল । আর উপরের আয়াতগুলো নিয়ে কার কত গবেষণা আছে,  তা আমার জানা নাই, কারণ আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই বিষয়ের গবেষক নই । তবে একজন গবেষক হিসাবে এতটুকু জ্ঞান আছে, যেহেতু আমাদের দেশ সহ, পৃথিবীতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে সরাসরি ইসলামিক স্টাডিজ সহ বিভিন্ন নামে পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা  হয় । সেইহেতু অবশ্যই এরকম একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গবেষণার অভাব হবে না ।

আয়াতগুলো সাধারণ ভাবে পড়লেও চলমান ঘটনার যুবকদের মধ্যে এর প্রভাব থাকাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয় । আর যদি সত্যি সত্যি তাই হয়, তবে বিষয়টি মোটেও সহজ নয় । কারণ এই মতবাদ কারবালার প্রান্তর হতে ঘুরেফিরে ১৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে দুনিয়ার কোথাও না কোথাও লালিত পালিত হচ্ছে । আর পূর্বেই বলেছি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ খুবই ধর্মভীরু এবং এ ব্যাপারে উগ্রতাও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। তার উপর যারা আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে তথাকথিত জিহাদও ডেকেছিল । তাদের নিয়ে আজ প্রশ্ন হচ্ছে রাজনৈতিক দল হিসাবে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা ? অথচ বিচার হওয়া উচিত, যারা এদের রাজনৈতিক দল হিসাবে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে । যদিও আমি নিজে বিশ্বাস করি না, তাদের মতো দল এ ধরণের সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে পারে । কিন্তু ষড়যন্ত্র অবশ্যই করতে পারে, কারণ না আছে তাদের দেশ প্রেম, না আছে ধর্ম ।

আমি মনে  করি আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, যে কথাটি বার বার বলেছি, আমরা ধর্মভীরু জাতি, তাই এমন কোনো কথা বা কাজ করতে পারব না, যা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের বিপক্ষে যায় । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে যেটুকু মনে করি, এ ধরণের ঘটনা যাকে আমরা আরব বসন্ত নাম দিয়েছি, তার প্রভাব হতে পারে । ইরাক যখন আক্রমণ হয়, তখন এদেশে জন্ম নেয়া অনেক ছেলের নাম সাদ্দাম রাখা হয়েছে । ওসামা বিন লাদেনের যে সকল ছবি মিডিয়ার বদৌলতে এসেছে, তারও যথেচ্ট প্রভাব আমাদের সমাজে আছে । আমরা যদি রাশিয়ার কম্যুনিজম এর আজও ভক্ত হতে পারি, পাকিস্তান জামাতের জন্য জীবন দিতে পারি । তা হলে সাদ্দাম, লাদেন ও গাদ্দাফির অনুসারী থাকবে না কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি ?

গুলশানের হামলার কারন সম্পর্কে তথাকথিত আই এস যে মন্তব্য করছে, তারা এ দেশে শুধু তাদের উপস্থিতি জানানো এবং বিশ্বাস করানোর জন্যই করেছে । আমরা দেশের স্বার্থে ওই ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি বিশ্বাস না-ই করলাম, তবে তাদের মতবাদের অনুসারী নাই, এ কথাটি ভুল করেও কখনো মাথায় নেওয়া যাবে না । আমরা সবাই জানি যে, একটি শক্তিশালী মতবাদ দুনিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে । যা  প্রতিরোধ করা যায় না, তবে তার জন্য প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ করেই সহজ সমাধান করা যায় । আমার শুধু ভয় দেশকে নিয়ে নয়, গোটা জাতিকে নিয়ে । কারণ সিঙ্গাপুর ও আমেরিকার ডিপোর্ট যেমন উদ্ৰেকজনক, তেমনি মালয়েশিয়ার বিশবিদ্যালয়ের ছাত্রের সম্পৃক্তিও গভীর চিন্তার বিষয় । আমাদের এক কোটির উপর তরুণ ও যুব সমাজ সারা দুনিয়া জুড়ে কাজ-কর্ম করছে, যাদের অনেকেরই আবার বৈধ কাগজপত্রও নেই । আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ।।।