প্রসঙ্গ সাগর-রুনি: কথাগুলো যেন অফুরন্ত প্রেরণার মন্ত্র

জাগো বাহে জাগো
Published : 20 April 2012, 11:59 AM
Updated : 20 April 2012, 11:59 AM

গত ২৬শে মার্চ ছবির হাট প্রাঙ্গনে বিডি নিউজ এর কিছু ব্লগার দের একটা দারুন আড্ডা হয়। সেখানে ব্লগাররা ঠিক করেছিলো সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের খুনিদের ধরায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আহুত ৮ ই এপ্রিলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের সাথে অংশ নেবে ব্লগাররাও। ব্লগাররা শুধু কম্পিউটার এর কি-বোর্ড টিপে দুনিয়ার সকল আলোচনা-সমালোচনায় মূখর থাকবে তা নয়, তারাও হাজির হবে প্রতিবাদের মঞ্চে। সে ভাবে প্রস্তুতি চলছিলো সবার।

কিন্তু ৭ তারিখে হঠাৎ ব্লগার সুফিয়ান ভাই এর কাছ থেকে জানলাম নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। শুনে রীতিমতো আমরা হতভম্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া চা-চক্রে গিয়ে ৮ তারিখের কর্মসূচি স্থগিত করেছে নাকি তারা!

আমরা তাৎক্ষণিক হতভম্ব হলেও প্রতিবাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। সাংবাদিকরা বাতিল করলে করুক, আমরা ব্লগাররা প্রতিবাদ করবো। তাই রাজপথে নেমে পড়লাম শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে দিলাম ঢাকার রাজপথ, চলছে লড়াই চলবে …… ব্লগাররা লড়বে। হয়তো সংখ্যায় নগন্য। কিন্তু এ নগন্য ব্লগাররা সৃষ্টি করেছে এক ইতিহাস, বাংলাদেশে ব্লগাররা এই প্রথম রাজপথে নেমে এসেছে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনিয়মের। এখানে ব্লগারদের ভূমিকা ছিলো সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের জন্য যেমন সরব আর সাংবাদিকদের রহস্যজনক পিছুটান নিয়েও প্রতিবাদ মূখর। সে ধারাবাহিকতায় বিডি নিউজ ব্লগ বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয় যা বাংলাদেশের ব্লগিং ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।

১৫ এপ্রিল ২০১২ সকাল ১১:০০টা থেকে দুপুর ১:০০টা পর্যন্ত 'ব্লগ বিরতি' অর্থ্যাৎ 'ব্লগ ব্ল্যাকআউট' পালিত হয়। এই দু'ঘন্টা ব্লগের ইউআরএল (blog.bdnews24.com) ব্রাউজ করলে এর নিয়মিত পাতার বদলে একটি বিশেষ পাতা দেখা যেতো।

১৬ এপ্রিল ২০১২ থেকে ব্লগের হোমপাতা বা ইউআরএল ব্রাউজ করা মাত্র একটি ভাসমান ব্যানার আসছে প্রতিবাদলিপি/বক্তব্য সহকারে। ব্লগে এই ব্যানার প্রদর্শিত হবে আগামী ৫ মে ২০১২ পর্যন্ত।

এছাড়া ধারাবাহিক ভাবে নেয়া ব্লগারদের নেয়া তৃতীয় কর্মসূচী মোতাবেক, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও সাগর-রুনি স্মরণে আজ শুক্রবার, ২০ এপ্রিল ২০১২, সকাল ১০:০০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪:০০টা পর্যন্ত ছবির হাটে(চারুকলা'র বিপরীত পাশে)একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হচ্ছে।

এতে কিছু প্রতিক্রিয়া মূলক বক্তব্য/মন্তব্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বস্তুত এ মন্তব্যগুলো আমাদের চিত্র প্রদর্শনীর প্রাণ। সাগর-রুনি হত্যাকান্ড নিয়ে লেখা ব্লগে যে সমস্ত মন্তব্য পাওয়া গেছে তার থেকে বাঁছাই করা কিছু মন্তব্য এখানে থাকবে। ব্লগার মঞ্জুর মোরশেদ ও আমার কাধে পড়ে অর্থপূর্ণ কিছু মন্তব্য বাছাইয়ের। এ কঠিন কাজে আইরিন আপু আর জাহেদ ভাইয়ের অসামান্য সহযোগিতা পেয়েছি। আর ব্লগার সোহেল মাহমুদ, আবু সুফিয়ানের অবদানও ভুলে যাবার না। তারা এগুলো প্রদর্শনীতে প্রদর্শনের জন্য যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে সমস্ত ব্লগ আমরা পেয়েছি, তা পড়ে এবং তার মন্তব্য পড়ে রীতিমতো অবাক হয়েছি। মানুষ যে কতো স্বতস্ফূর্ত ভাবে তাদের হৃদয়ের আকুতি তুলে ধরেছে, তারা প্রতিবাদ করতে চেয়েছে, সত্য বলার চেষ্টা করেছে ভাবা যায় না।

যেমন, একজন ব্লগার বলেছেন,
প্রতিবাদের নামে বাঙ্গালী স্টাইলের সহিংসতা এড়িয়ে ব্লগাররা উন্নত বিশ্বকে ধারণ করে সভ্য ও অহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই হয়। ব্লগারদের এ নীরব প্রতিবাদ যেন ব্লগ ও রাজপথের সীমানা ছাড়িয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসন, অথর্ব গোয়েন্দা সংস্থা, ক্ষমতাধর আদালত, অসহায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা জনসেবক (!) সরকারের নাক বরাবর গিয়ে পৌঁছে সেটাই এখন সময়ের দাবী।

খুনি ধরতে অপারগ সরকারের অযোগ্যতা নিয়ে একজন বলেছেন, অযোগ্যতার দায়ভার সরকার নেবে কারণ সরকার অযোগ্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, পক্ষাবলম্বন করছে। আমাদের জনগণেরও অনেক দোষ আছে, এবার যদি আওয়ামী লীগকে ভোট দেই তবে আগামীতে বিএনপিকে। এভাবে চলছে আর আমরা চক্রাকারে প্রতারিত হচ্ছি।

সাংবাদিক নেতাদের পিছুটান নিয়ে একজন ব্লগারের বলিষ্ঠ উচ্চারণ, খুনী সনাক্ত ও গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ব্লগাররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। কোন চা এর দাওয়াতে আমরা চুপ হয়ে যাবো না।
ব্লগারদের চলমান দায়িত্ব সম্পর্কে একজন মন্তব্যকারী বলেছেন, এখন ব্লগারদের দায়িত্ব বেড়ে গেলো অনেক। ব্লগাররা সকল যাদুটোনার প্রভাব মুক্ত থাকবে নিঃসন্দেহে। তাদের এগিয়ে আসাটাই এখন বেশি জরুরী। আপনার আমার এ দায়িত্ব তুলে নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে।

কয়েকজন ব্লগারের চমক জাগানো শ্লোগান আমাদের সমস্ত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সহায়ক হবে নিঃসন্দেহে যেমন –
"বিচার এর দাবি আর নয় নিরব
আমরা ব্লগার রা থাকবো সরব"

বা ,
সবুজের মাঝে ঝড়া রক্ত লাল
আর কত কাল-আর কত কাল,
গর্জে উঠুক প্রতিবাদের দীপ্ত কন্ঠ তোমার
সাথে জেগে আছি আমরা প্রতিটি ব্লগার।।

ব্লগারদের নিঃস্বার্থ প্রতিবাদ এবং তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একজন মন্তব্যকারী বলেন, আর একটা ব্যাপার বদ্ধমূল হল যে ব্লগাররা শুধু লিখার মধ্যেই দায়িত্ববোধকে সীমিত রাখতে চান না,আন্দোলন সংগ্রামেও তারা কম যান না। সাংবাদিকদের একটি বিরাট অংশের চরম সুবিধাবাদিতা এবং প্রাপ্তির হিসেব নিকেশের মধ্যেও,ব্লগারদের এ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া আশা জাগায় বৈকি।
কোন কোন ব্লগার আমাদের চলমান আন্দোলনে সশরীরে হাজির হতে পারেননি কিন্তু তার মন্তব্য আমাদেরকে দিয়েছে পথ চলার উদাত্ত আহ্বান। যেমন,

…… ক্রমশ আশাবাদী হয়ে উঠছি এই নিষ্ঠাবান তরূনদের দেখে। কিছুটা কষ্টও কি আছে তাদের সাথে যোগ দিতে না পারার। ৩৩০ কিমি দুরত্ব ঘোচানো'র অসামর্থ্যের উপর দোষ দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপাতত।

সত্য, সুন্দর , ন্যায়ের পথে আমিও সাথে আছি জানিয়ে দিলাম। অনেক শুভকামনা তরুণ সংগ্রামী ব্লগারদের জন্য।

আমি মাত্র কয়েকটি মন্তব্য এখানে তুলে ধরেছি । এরকম অনেক সুন্দর তাৎপর্যময় মন্তব্য(ব্লগ পোষ্ট/মন্তব্যকারীর নাম এবং সময় উল্লেখ সহ)আজ ছবির হাটের চিত্র প্রদর্শনীতে দেখতে পাবেন। এভাবে এক একটি মন্তব্য আমাদের জন্য হয়ে গেছে পথ চলার পাথেয়। এ লেখা গুলো এ মন্তব্যগুলো শুধু আমাদের কিছু কাগুজে আহ্বান বা কম্পিউটারে বন্দী কোন হরফ নয় এগুলো যেন আমাদের নতুন পথের দিশারী। শুধু সাগর-রুনি হত্যাকান্ড রহস্য উদ্ঘাটনই নয়, সকল অনিয়ম আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের এসব অসাধারণ কথাগুলো নিঃসন্দেহে হবে অনন্ত প্রেরণার উৎস।

চলুন আজ ১০:০০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪:০০টা পর্যন্ত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও সাগর-রুনি স্মরণে ছবির হাটে(চারুকলা'র বিপরীত পাশে)যে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে আমরা হাজির হই বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয় স্বজন সহ। আপনার একটু উপস্থিতি আপনাদের বলা কথার মতোই আমাদেরকে দেবে অফুরন্ত প্রেরণার মন্ত্র ।