অরোরা টাউন থেকে মিসড কল

Published : 22 Feb 2017, 05:10 AM
Updated : 22 Feb 2017, 05:10 AM

ঢাকায় থাকলেও ব্যাস্ততার কারণে প্রতি বছর বই মেলায় যাওয়া হয়ে ওঠেনা। আর এখন চাইলেও শরীর সাড়া দেয় না অনেক সময়। এবারের বই মেলায় যাবই – নিজের ভেতর এরকম একটা জেদ অনুভব করছিলাম। শেষ পর্যন্ত রওয়ানা হলাম। সাথে আমার মেয়ে। গাড়িতে করে ফার্মগেট গিয়ে সেখানে আত্মীয়র বাসার গাড়ি রেখে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে বাপ-বেটি শাহবাগ নামলাম। যানজটের কারণে মোড়ের অনেক আগেই নেমে পড়লাম। এরপর পায়ে হেঁটে, রিক্সায় করে পৌঁছালাম টিএসসি গেটে। পথে যেতে যেতে মেয়েকে রাস্তা এবং আশে পাশের সব গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা চিনিয়ে নিচ্ছিলাম। কলেজে পড়ে কিন্তু ঢাকার কোন রাস্তা ঘাটই সে চিনে না। হোটেল শেরাটন থেকে চেনানোর শুরু। এরপর বাংলাদেশ বেতার, বারডেম, পিজি হাসপাতাল, জাতীয় যাদুঘর, চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে টিএসসি পর্যন্ত চলতে থাকে আমার পরিচয় করানো পর্ব। জানি দুদিন পরেই সে এগুলো মেমরি থেকে ডিলিট করে দিবে। কিন্তু আমি আমার চেষ্টা করে গেলাম।

বই মেলায় ঢুকতে গিয়ে খেয়াল করলাম ছোট ছোট লাইন ধরে এগুচ্ছে সবাই আর আমাদেরকেও কোন একটা লাইন ধরতে হবে। তাই আবার পিছাতে হল। এদিকে যতই পেছনে যাই, মুহুর্তের মধ্যে লাইন ততই বড় হতে থাকে। আমি দৌড়ে গিয়ে একটা লাইনের পেছনে জায়গা নিলাম, মেয়ে এসে পরে যোগ দিল। লাইন আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। রেসকোর্সের ময়দানে স্থাপিত মূল ফটকে আসার পর পুরুষ মহিলাদেরকে আলাদা করে দেয়া হলো, আলাদা লাইন ধরে ঢুকতে হবে। তল্লাশির নামে যা হচ্ছিল সেটা মস্করা ছাড়া আর কিছু নয়। মেয়ে আগেই ঢুকে আমার জন্য হতবিহবল কিংবা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি কিছুক্ষন দূর থেকে দাঁড়িয়ে তার শারিরীক ভাষাটা বোঝার চেষ্টা করলাম। বুঝলাম, এই মেয়ে এখনো রাস্তা-ঘাটে একা বের হবার উপযুক্ত হয় নি। আমাকে দেখে তার মুখে লম্বা হাসি আর স্বস্তি। হাত ধরে এবার এগুতে থাকলাম। তার হাতে একটা ছোট একটা লিষ্ট ছিল। কোথায় কোন ষ্টলে গেলে তার লিষ্টের বই পাওয়া যাবে এরকম একটা ধারণা পাবার আশায় আমি ওর কাছ থেকে চেয়ে একবার লিষ্টটা দেখে নিলাম । কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পর কোথাও কোন সংকেত বা সাইনবোর্ড নেই। কোথা হতে ষ্টলগুলো শুরু অথবা শেষ বোঝার কোন উপায় নেই। গেলাম তথ্যানুসন্ধানে। সেখানে গিয়ে কাংখিত সেবাটি পেলাম না। তাই এবার নিজেদের উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে এগুতে লাগলাম। অল্প সময় পরেই একটা ষ্টলে মেয়ের কাংখিত বইয়ের দুটি পেলাম। পথের পাঁচালী, শরৎ গল্প সমগ্র ছিল তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এরপরের তালিকায় বিষাদ সিন্ধু, রবীন্দ্র গল্প সংকলন আর একটা বিশেষ বই 'ক্রাচের কর্নেল'। এই বইটা সম্ভবত কর্নেল তাহেরকে নিয়ে লেখা হবে। অনেক খুঁজেও পেলাম না। আমি নিজের জন্য কিনলাম সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে – বিদেশে'।

এরপর এ পথ, ও পথ ঘুরে পেলাম শিখা প্রকাশনীর ষ্টল। ষ্টল নাম্বার ৬১২-৬১৫। এখানে আসার মূল আকর্ষণ আমার একজন প্রিয় ব্লগার নুরুন নাহার লিলিয়ানের লেখা 'অরোরা টাউন'। প্রথমে আমি টেবিলের ওপর বিছিয়ে রাখা সারি সারি বইয়ের মাঝে 'অরোরা টাউন' -কে খুঁজে দেখলাম। নেই। এরপর পেছনে একটা পোস্টারের দিকে তাকালাম – যেখানে শিখা প্রকাশনীর সব নতুন (প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য) বইয়ের তালিকা ঝুলছে। সেখানেও 'অরোরা টাউন' -এর নাম নেই। একটু হতাশ হলাম বৈকি। এরপর কাউন্টারে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম ঐ বইটা আছে কিনা । সে খুব নির্লিপ্ত ভাবে জানাল – নেই। এবার আমি একটু বামে সরে গিয়ে ষ্টলের হর্তা-কর্তা গোছের মাঝ বয়সী একজন ভদ্রলোককে (?) পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। তিনি এমনভাব করলেন –যেন এই বইটির নামই শোনেননি। আমি ভাবলাম হয়তো আমার ভুল হচ্ছে। বাসা থেকে বের হবার আগে, ব্লগার লিলিয়ানের সুনির্দিষ্ট ব্লগটি পড়ে সেখা থেকে ষ্টলের নাম – ঠিকানা জেনেই বের হয়েছিলাম সন্দেহ দূর করতে আবারো মোবাইলের ডাটা অন করে দেখে নিলাম। সবই ঠিক আছে, কিন্তু ষ্টলের কেউই এই বইটি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছে না।

ব্লগের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী গত ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারির (কিছুতেই সঠিক বানানটা টাইপ করতে পারছি না) মধ্যে বইটা ষ্টলে চলে আসার কথা। গতকাল ২১ তারিখেও যখন নেই, আর ব্লগারও আপডেট বন্ধ করে দিয়েছেন তখন মনে হল – নিশ্চয়ই এটা একটা মিসড কল ছিল।