কোথায় যাচ্ছি আমরা?

ফায়জান নাবিল
Published : 12 April 2017, 03:50 AM
Updated : 12 April 2017, 03:50 AM

মধ্য আয়ের দেশ থেকে ক্রমাগত উত্তরণের পথের যখন খুব কাছাকাছি তখনি অন্য ভাবনাগুলো সহজে ভুলে যাবার নয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এ বিপর্যয়ে ভবিষ্যতের কর্ণধারদের কালো অধ্যায় মোচন করার দায়িত্ব কার? আমার, আপনার, সরকারের না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে যখন একটি ছেলে বা মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে পদার্পণ করে তখন পেছনের বিষণ্ণতার গ্লানি তাদের সামনের নতুন কিছু শেখার বা জানার আগ্রহ বোধটাকেও নষ্ট করে দেয়। এর প্রধান কারন হিসেবে দাবি করা যেতে পারে স্কুল কলেজের ফাঁকিবাজি পড়ালেখা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার অভাব।

একটু পেছনে ফিরে গেলেই আমরা দেখতে পাবো স্কুল কলেজগুলোর পড়ালেখার মান। বেশিরভাগ স্কুল কলেজগুলোতে চলে পড়ালেখার নামে ব্যাবসা। যখন সময় তরুণদের হাতে করে গড়ে তোলার  তখনই যদি চলে গরিমসি তাহলে ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে একটু ভাবুন। পাশ্চাত্যদেশে তরুন রা যখন নতুনত্ব বিষয়ে নিজেদেরকে প্রমান করে চলেছে সেখানে উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে আমাদের দেশের তরুনরা নতুন কিছুতো দূরেই থাক বরং নিজেদের থেলে দিচ্ছে ভয়ংকর রাজ্যের এক কালো ধোঁয়ার পরিবেশে। যেখানে শিক্ষক সমাজ তাদের কর্তব্য যথাযথ পালনে অক্ষম সেখানে তরুণ সমাজের চেতনা কতখানি উদয় হবে তা নিয়ে আর কিছু নাই বলি।

ফিরে যাই উন্মুক্ত পরিবেশ আবার কেউ কেউ যাকে বলে থাকেন জ্ঞানের উন্মুক্ত ভান্ডার, তবে সেই ভাণ্ডারে আজ কতটুকু জ্ঞান অবশিষ্ট আছে বা সেই জ্ঞান আহরণের জন্য জনবল ও আজ আছে কিনা তা নিয়ে আজ সন্দিহান। আমি আর কিছুই না বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি। এ বিষয়ে বলার আগে একটা মজার ঘটনা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর এক বড়ভাই জিজ্ঞাসা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞা বল। আমি আমার মত একটা সংজ্ঞা তার সামনে তুলে ধরলাম, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বি আর সংজ্ঞা জানিস না। তিনি আমাকে শেখালেন শোন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যেমন চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে গালি দিতে পারে তেমনি কোনো ফাইভ স্টার হোটেল এ গিয়ে বক্তৃতা ও দিতে পারে। ভাইয়ের কথাগুলো ওই সময় শোনার পর নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছিলো যে আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিন্তু আজ সে কথাগুলো মনে পরলে মনে হয় প্রচ্ছন্ন অর্থে রাস্তার গালির মধ্যে আমাদের ধ্যানধারনা আজ সীমাবদ্ধ, নতুনকে জানা এবং নতুন কিছু করার মধ্যে নেই কোনো লোভ বা নেই কোনো লালসা।

আমি দোষ সে সমস্ত শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি না বরং আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গতানুগতিক সিলেবাস আর রুটিনমাফিক পড়ালেখার চর্বিত চর্বণ যেনো তাদের শেখার সীমিত চেষ্টাটাকেও নষ্ট করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একই সিলেবাসের রুটিন মাফিক পড়ালেখা আর যথোপযুক্ত পাঠ্যদানের অভাবে কেউ যাচ্ছে সচেষ্টায় এগিয়ে আবার কেউবা গা মিলিয়ে দিচ্ছে ধুসর প্রান্তরে। যদিওবা একটা না একটা সময় তাদের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তখন আর কিছুই করার থাকেনা। এবার আসি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দিকে। পড়ালেখা করে ভাল রেজাল্ট করে বের হয় ঠিকই কিন্তু একটা সময় বাস্তব জগতে পারি দেবার পর মনে হয় জীবনের পেছনের সময় গুলো ছিলো কিছুটা মিথ্যার মতো যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যখন দুই নৌকার মাঝখানে ডুবে যাবার পরিক্রমা ঘটে। এখানে দুই নৌকা বলার অর্থ হলো সমাজের তিরস্কার আর নিজের ভেতরকার চক্ষুলজ্জা।

এবার আসি আমাদের কাজের জগতে। আজকাল কার জব সেক্টর চায় রেডিমেড দক্ষ তরুণ। বাস্তবিক অর্থে এটা তাদের দোষ না। কেনো তারা চাইবে শুধু শুধু একজন অদক্ষ তরুন নিয়ে তাকে আবার নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কার্যপরিচালনা করতে। অর্থনীতি পরার সময় একটা টার্ম প্রায় পরতাম, আজ তার বাস্তব উধাহরন দেখছি। আর সেটা হল (কস্ট মিনিমাইজেশন অ্যান্ড প্রফিট মেক্সিমাইজেশন) যার বাংলা পরিভাষা হলো খরচের পরিমাণ কমিয়ে লাভের অংশটুকু বাড়িয়ে তোলা।

আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই আছে যথাযথ পাঠদানের অভাব। তাই জব সেক্টরে কাজের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আছে দক্ষ জনশক্তি জোগানের অভাব। চিনের দিকে আমরা তাকিয়ে দেখতে পারি তাদের দেশে রয়েছে কর্মমুখী শিক্ষা। অন্তত পড়ালেখা শেষ করে একখানা সার্টিফিকেট তো পায় যেটা দ্বারা তারা নিজেদেরকে প্রমান করতে পারে অন্য দিকে আমাদের দেশে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে আগে দেখা হয় অভিজ্ঞতা; আরে বাবা আমার কথা হলো আগে চাকরিটা দাও তানা হলে অভিজ্ঞতা কি আকাশ থেকে পরবে।

এ বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। যদিওবা তার পক্ষে একা কাজটি করা কখনো সম্ভব না তার জন্য দরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর বোধোদয় যার মাধ্যমে তারা উপহার দিবে একটি নতুন জাতি ও একটি নতুন ভবিষ্যৎ। সুশীল সমাজের সুশীল নাগরিক হিসেবে তাই আমাদের সবার দায়িত্ব সুশিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করে কাজের পরিবেশে তাদেরকে আলোড়িত করা এবং বিকশিত করা। একমাত্র তখনি বেকারত্বের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলতে পারবো উন্নত বিশ্বের সাথে।