ঘুরে আসুন মেইন-৩

ফকির সেলিম
Published : 2 Nov 2015, 08:22 AM
Updated : 2 Nov 2015, 08:22 AM

খাওয়া শেষ করে লিভিং রুমে বসে নানার কাছে টেক্সাসের গল্প শুনছি। দর্পনের ফোন এলো। বললো জেএফকে এয়ারপোর্টে বৌ বাচ্চাকে তুলে দিতে গেছে। জরুরী কারনে আজই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে যাচ্ছে। বল্লাম মেইনের পরিকল্পনার কি হবে। দর্পন বল্লো ওরা ছাড়াই আমরা ঘুরবো। কি আর করা। সবচেয়ে কষ্ট পেলো অনু রিশা রামিন। দর্পন আর আমার ফ্যামিলি এখানে জুটির সম্পর্কের মতো। দর্পন আর আমার মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব তেমনি অনু আর সীমা, রিশা আর এথিনা এবং রামিন আর সামির মধ্যে বন্ধুত্ব। খবর শুনে ওরা তিনজনই খুব কষ্ট পেলো। তবে এই কষ্ট লাঘব হয় খানিকটা রিপার কারনে। রিপা অনুর খালাতো বোন। ওর জামাই বেলাল আর কন্যা রিহাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে ঢাকা থেকে। মেইন ট্যুরে ওরা থাকছে আমাদের সাথে।
রাত ৯টার দিকে চাচার বাসা থেকে বের হয়ে ইসমাইলের বাসার দিকে রওনা হলাম। মাইল দুয়েকের পথ। ইসমাইল রিপার চাচাতো বোনের জামাই। ওর বাসাতেই উঠেছে রিপারা। ওরা রেডী হয়েই ছিল। ওদেরকে তুলে রওনা হলাম জ্যামাইকার দিকে। সরাসরি দর্পনের বাসায়। ১৯৫-১৪ সাগামোর এভিনিউ হলিস জ্যামাইকা।

এই বাসার সংগেও অনেক স্মৃতি আমাদের। ২০০৬ সালের প্রথম দিকেই বাসাটি কেনে দর্পন। কথা ছিল আমরা শেয়ারে কিনবো। কিন্তু আমি নতুন এসেছি। ক্রেডিট বিল্ড আপ হয়নি তখনো। তাই লোন হবেনা বলে সে চিন্তা বাদ। দর্পনের একার নামেই লোন হলো। তবে বাসা কেনার পর দর্পনের আগেই ওই বাসায় উঠি আমরা। ব্রুকলীন থেকে সেদিন এই বাসায় শিফট করিয়ে দিয়েছিল শাহেদ ভাই। আবু শাহেদ করিম। ডাকনাম মানু। আমার একমাত্র দোস্ত। মাত্র জীবন শুরু করেছি এই দেশে। সংসারে জিনিসপত্র বলতে টুকিটাকি। শাহেদ ভাইয়ের মিনিভ্যানেই হয়ে গেলো।

দর্পনরা তখনো পুকেপসি থাকে। সেখান থেকে প্রতিদিন দুই আড়াই ঘন্টা ড্রাইভ করে অফিস করে। এসটিভি ইউএস। রুজভেল্ট এভিনিউয়ের পাশে নদীর পাড়ে চমৎকার একটি যায়গায় ছিল এসটিভির ষ্টেশন। আমাদের স্বপ্ন তখন এসটিভিকে সবার সেরা টিভি করা। সে স্বপ্ন যদিও আর পূরন হয়নি।  তার পেছনেও অনেক কথা। অন্য একদিন বলবো। বাসায় আমরা মোটামুটি সেট হয়ে যাওয়ার সপ্তাহ তিনেক পর দর্পনরা পুকেপসি ছেড়ে আসে।
রাত ১২টা নাগাদ দর্পনের বাসায় পৌঁছালাম।  সকালে মেইনের উদ্দেশ্যে কখন কিভাবে রওনা হবো সেসব নিয়ে কিছুক্ষন পরামর্শ হলো। শহীদুল বল্লো সকাল ৯টার মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে। রিপাদের রেখে আমরা শহীদুলের বাসায় চলে এলাম। ১৬৯ ষ্ট্রিট জ্যামাইকা। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ঠিক পেছন। এর এক ব্লক দূরে চমৎকার একটি বাসায় বছর দুয়েক ভাড়া ছিলাম আমরা। ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুইটা। শহীদুলের কি বদভ্যাস হয়েছে রাতে ঘুমায় না। সারা রাত কম্পিউটারে খুটখাট করে। শেষ রাতের দিকে ঘুমে ঢলে পড়ে। বহুদিন সিংগেল থাকার কারনেই হয়তো এটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।