ঘুরে আসুন মেইন-৫ (যাত্রা পথে)

ফকির সেলিম
Published : 15 Nov 2015, 05:59 PM
Updated : 15 Nov 2015, 05:59 PM

হোয়াইটস্টোন ব্রিজে ৬ ডলার টোল। পরে হিসাব করে দেখলাম মেইনের পোর্টল্যান্ড পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ টোল। নিউইয়র্ক থেকে এখানকার দুরত্ব ৩০০ মাইল। সব মিলে টোল ১৫ ডলারের মত। অথচ কি আশ্চর্য নিউইয়র্ক থেকে ২০০ মাইলের পথ ডিসির টোল ৪০ ডলারেরও বেশি। ঘন্টা দেড়েক ড্রাইভ করার পর কানেক্টিকাটের এক সার্ভিস স্টেশনে থেমে গ্যাস নিলাম। দর্পনও থেমেছে। রিশা নেমে এসেছে রেস্টরুম ভিসিট করতে। নতুন নতুন রেস্টরুম দেখা ওর কাছে হবির মতো। এরপর একটানা ড্রাইভ।

আই ৯৫ ধরে ড্রাইভ করছি। আমি ফলো করছি দর্পনকে। মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলছি। দর্পন একটু জোরে চালায়। স্পিড লিমিট যেখানে ৬৫ সেখানে ওর গাডীর গতি ৮৫-৯০। ঘন্টা দেড়েক পর অনেকখানি পেছনে পড়ে গেলাম। এক স্থানে এসে খানিকটা দ্বিধায় পডলাম। দুদিকে দুই রাস্তা চলে গেছে। যে ৯৫ রুটের ওপরে আছি সেটা ডানদিকে আর ৩৯৫ চলে গেছে বামে। বামের রাস্তায় লোখা পোর্টল্যান্ড। কি করবো বুঝতে পারছি না। বামেই মোড় নিলাম। শহীদুলকে কল করলাম। ও বললো ৯৫ এর ওপর থাকো; অথচ ততোক্ষনে আমি আট দশ মাইল চলে এসেছি। জিপিএস অন করলাম। দেখলাম আমি ঠিক রাস্তাতেই আছি।

রাস্তায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৭০ মাইল। হাইওয়েতে সাধারণত নির্ধারিত গতির চেয়ে ২০ মাইল পর্যন্ত বেশী থাকলে পুলিশ মাফ করে দেয়। এর চেয়ে বেশী হলে আর মাফ নেই। আমি ৮০ মাইল গতিবেগ ঠিক করে গ্যাস প্যাডেল অটোপাইলটের কাছে ছেড়ে দিলাম; অর্থাৎ ক্রুজ কন্ট্রোল দিয়ে আলতো করে ষ্টিয়ারিং ধরে রাখলাম। লং রুটে এভাবেই গাডী চালাই। অভ্যাস হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে দুই পা সীটের ওপর তুলে যোগাসনের মতো বসি।

প্রথমবার রামিন যখন আমাকে এ অবস্থায় দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিল। অনেক্ষন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে নিশ্চিত হয়েছিল যে সত্যিই দুই পা তুলে বসেছি কিনা। খানিক্ষন পর জিজ্ঞেস করে 'বাবা পা তুলে কিভাবে গাডি চালাচ্ছো?' বল্লাম অটো পাইলটে চালাচ্ছেরে ব্যাটা। রামিনতো আরো ভড়কে গেলো। 'বলো কি এই গাড়ীতে অটো পালট আছে?' বল্লাম 'হু, এই জন্যেই্যতো এই মডেলটার নাম হন্ডা পাইলট'। খানিক্ষন দম ধরে থেকে রামিন বলে 'নাহ বাবা এটা তোমার লোল'। আমি হোহো করে হেসে উঠে বল্লাম 'হ্যা বাবা লোল'।

লোল আসলে lol ফেসবুকের ব্যাপক ব্যাবহৃত সংক্ষিপ্ত শব্দ ব্যাবহারের একটি রূপ। লোল বা lol হচ্ছে 'laugh out lout' লাফ আউট লাউড বা জোর জোরে হাসো এমন কথা। ফেইসবুকে কেউ কোনো মজার ষ্ট্যাটাস বা কমেন্ট দেয়ার পর অনেকেই লোল লেখেন। রামিন আর আমি লোল নিয়ে কতো বৈঠক তর্ক বিতর্ক যে করেছি। জোরে হাসো না বলে নীরবে হাসো বলিনা কেনো? lol এর স্থলে los বা laugh out silence হলে অসুবিধা কি?

যাহোক আমরা বাপ ব্যাটা লোল বললে জোরে জোরে হাসি। তখন রামিনকে ক্রুজ কন্ট্রোল কি তা বুঝিয়ে বলি।

ঘন্টা দেড়েক পর শহীদুলকে কল করলাম। কোথায় তোমরা? রাগী কন্ঠে বললো পুলিশে ধরেছে পরে ফোন দেই। ফোন কেটে দিল। ভাবলাম দুষ্টামি করছে। আবার কল করতে যাবো অনু বললো দুষ্টামি না, সত্যিই ওদের পুলিশে ধরেছে। অনু ওর ফোনের ফেসবুক বের করে দেখালো পুলিশের দেয়া টিকেটের ছবি। শহীদুল মুহুর্তের মধ্যে ছবি তুলে আপলোড করে দিয়েছে। দেখলাম স্পিডিং টিকেট।

***