নিতাই বাবুঃ তোমার দৃষ্টি ছোঁবে অসীম আকাশ

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 31 Oct 2016, 06:44 PM
Updated : 31 Oct 2016, 06:44 PM

মাঝবয়সী একজন নিখাদ মানুষ নিতাই বাবু; মন যার চির তরুণ। আমাদের বন্ধু, ভাই ও সুহৃদ। আমাদের ফোরামে ০৩ মার্চ ২০১৫ সালে ব্লগার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। মাত্র এক বছর সাত মাস সময়ে বিচিত্র বিষয়ে ব্লগ.বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কমে লেখালেখি করে নাগরিক সাংবাদিকতার আইকনরূপে হাজির হয়েছেন। কর্মব্যস্ত জীবনের সামান্য অবসরে স্মার্টফোনের কীবোর্ডে আঙ্গুল চালনার মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো বিষয়ে তাঁর লেখায় উঠে আসে নাগরিক জীবনের নানা বাঁকবদল কিংবা সুখ দুঃখের কাব্য। তাঁর যথার্থ প্রাপ্যতা বলেই আমরা বিমুগ্ধ পাঠক হয়ে নিতাই বন্দনায় মাতি। এই নিতাই বাবুকে ঢাকার রমনা পার্কের কৃষ্ণচূড়া আড্ডা বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারী আড্ডারুরা ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন জানেন। সম্প্রতি আমাদের নির্মিত 'দ্য রাইজ অব সিটিজেন জার্নালিজম' ডকুমেন্টারিতেও তাঁর সরব উপস্থিতি রয়েছে।

গেল ২৬ অক্টোবরে 'শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ড' শিরোনামে সর্বশেষ জনগুরুত্বসম্পন্ন একটি রচনা উপহার দিয়েছেন নিতাই বাবু। কিন্তু আমাদের এই সজীব, সচল ও প্রাণোচ্ছ্বল নিতাই বাবু শরীরের প্রতি অযত্ন আর অবহেলায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যে চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখেন, মানুষের মুখ দেখেন আর মুঠোফোনের অক্ষর দেখেন, সেই দৃষ্টিতে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই ঝাপসা দেখছেন। ডাক্তারি পরামর্শে চোখের ছানির সমস্যা ধরা পড়েছে। এবং ডাক্তারের কাঁচিই যার সর্বশেষ নিদান। নারায়ণগঞ্জ খানপুর সরকারী হাসপাতালে আগামী ০৬ নভেম্বর সকালে প্রথমে বাম চোখ এবং এর পনের দিন পর ডান চোখে অপারেশন করবেন চক্ষু সার্জন। এমনকি শরীরের নিম্নাংশে ব্যথাজাতীয় সমস্যায় স্বাভাবিক হাঁটাচলাতে বেশ বেগ পোহাচ্ছেন নিতাই বাবু।


৫৪ বছর বয়সী নিতাই বাবু বিরামহীন শ্রম দিয়ে যান নিজের হাতে গড়ে তোলা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ি এলাকার 'রসুলবাগ সততা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডে'র দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞে। ব্যাংকের মতই কাজ। সদস্যদের প্রয়োজনে টাকা দেন আবার সময় হলে ফেরৎ নেন। নির্দিষ্ট অফিস আওয়ার বলতে কিছু নেই। এরমধ্যেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে লিখে চলেন ব্লগ, মতামত দেন সতীর্থ লেখকদের লেখনিতে। সকল ঘটন-অঘটন, আনন্দ-বেদনার ভিডিও জমা রাখেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে। মনের টানে পেশাগত কাজের পাশাপাশি লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজ করে যান তিনি। লেখালেখিকে তিনি তাঁর সামাজিক দায়িত্বপালনের অংশ করে নিয়েছেন। নিজের এলাকার ওয়াজ মাহফিল, ধর্মসভা, ঈদ উৎসব, রাজনৈতিক সভা ও পূজা-পার্বণসহ সকল কৃত্য ও কর্মে এই অসাম্প্রদায়িক মানুষটির প্রাণবন্ত উপস্থিতি থাকে। মানুষের পাশে থাকবার এই যে ব্রত -এটাই তাঁকে আর সবার চেয়ে আলাদা পরিচয় দিয়েছে। আর এসব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমেই ভুলে থাকেন তাঁর অকাল প্রয়াত একমাত্র পুত্র তপনের মুখ। ভুলে থাকেন গোপালগঞ্জে স্বামী, সংসার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকা প্রিয় কন্যা অনিতার বিরহব্যথা।

দিনে পঞ্চাশ কাপ চা আর অনিয়ন্ত্রিত সিগারেটের ধুয়ায় শোক ভুলবার অনিয়ম শরীর আর বইতে পারে কতোটা? এখন মহাশয় শরীরই জানান দিচ্ছে, এবার মানুষের যাপিতজীবনের কবি তুমি তোমার শরীর বাঁচাও আগে তারপর নাহয় যা হারিয়ে গেছে সেই দুঃসময়ের দুঃখ ভুলবার অসাধ্য সাধন করো।

আমরা বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করি, শৃঙ্খলাটা এবার তোমার সখা হয়ে উঠবে নোয়াখালীর চৌমুহনীর মাহতাবপুর গ্রামের প্রিয় নিতাই বাবু।
আমাদেরকে ভালোবাসা দেবার অথবা নেবার বেলা যে কেবল শুরু। এখনো অনেক কথা জানাবার বাকি। দেখাবার বাকি মানুষ ও বিশ্বের বিস্ময়।
আমাদের প্রাণান্ত প্রার্থনায় ফিরুক তোমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। নয়নে ফুটুক হাজার তারার ফুল। কলমে ফুটুক নগর ও মানুষের গান। নিতাই বাবু তোমার দৃষ্টি ছোঁবেই অসীম আকাশ।

লেখকঃ সাংবাদিক, মাছরাঙা টেলিভিশন
৩১ অক্টোবর ২০১৬