প্রিয় উৎপল চক্রবর্তীর জন্য শোকগাথা

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 20 May 2017, 05:45 PM
Updated : 20 May 2017, 05:45 PM


ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কমের গভীর শোকের দিন আজ। নাগরিক সাংবাদিকতার এই প্ল্যাটফর্মের আষ্টেপৃষ্ঠে আজ দারুণ বিষাদ। কারুণ্য সর্বান্তকরণে আমাদের। লেখক উৎপল চক্রবর্তী বড় অকালে আমাদের ফাঁকি দিয়ে গেলেন। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র আজ ঈশ্বরেরই সকাশে। তাইতো ব্লগ পরিবার আজ সমস্বরে গাইছে –

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥

নিশিদিন আলোক শিখা জ্বালিয়ে রাখবার জন্য জীবনদেবতা তার দেবালয়ের প্রদীপ করলেন আমাদের ভাই, বন্ধু, সুহৃদ, স্বজন এবং মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার দুর্দান্ত মেধাবী লেখক উৎপল দাকে। কিন্তু কিভাবে এতোটা অসময়ে আমাদের ছেড়ে যেতে পারলেন তিনি? বিশ্বাস করেন দাদা, আপনাকে জীবনভর মাথার মুকুট করেই রাখব। জানি এই অকাল বিয়োগ ব্যথা কস্মিনকালেও ভুলবার নয়। তবু ঈশ্বর আমাদেরকে এবং আপনার পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দিন। আপনি অনেক ভালো থাকুন দাদা!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ২০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন ব্লগার উৎপল চক্রবর্তী। আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পেশায় প্রকৌশলী উৎপল চক্রবর্ত্তী গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকার পেছনে একটি বহুতল ভবনের নিচতলায় নিজের অফিসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে আহত হন। গতকাল পর্যন্তও তাঁর অবস্থা ভালো ছিল। আজ তিনি জীবনে আসা আচমকা ঝড়ের ভার আর বইতে পারলেন না। আমাদের ব্লগ পরিবারে প্রথম ভাঙ্গনের রূপরেখা হয়ে গেলেন আমাদের সুহৃদ-সতীর্থ ও রূপকতা আর চন্দ্রকথার প্রিয় বাবা।

পেশায় প্রকৌশলী হলেও ক্ষুরধার লেখনীতেও ছিলেন সমান সিদ্ধহস্ত। ব্লগে তার ৫০তম লেখা ছিল মেডিকেল ভর্তি কোচিং বাণিজ্য নিয়ে 'এইচএসসি পরীক্ষা শেষের সাথে সাথেই হতে পারে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা' শিরোনামে। যা ছিল রীতিমতো গবেষণালব্ধ লেখা। এবারের ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবসে 'গণহত্যা ও নির্যাতন: গল্প উপন্যাসে নয়, লেখা আছে যুদ্ধ দলিলে' শীর্ষক একটি আর্টিকেলে তিনি জানান দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি কতটা সরব ছিলেন। এমন একজন লেখক যদি শুধুমাত্র 'কুমিল্লার 'মাতৃ ভাণ্ডার' রসমালাই, একটি বিশ্বরেকর্ড এবং জিআই নিবন্ধন' শিরোনামের এই একটি লেখাই লিখতেন তবু বাংলা ব্লগের ইতিহাসে নিজের নাম লিখে রাখতে পারতেন। তার এই লেখাটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের রসমালাইয়ের জিআই নিবন্ধন বিষয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণেও বাধ্য করে।

গেল দুই বছর ধরে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের ব্লগে সমাজ-সংসারের নানা বিষয় নিয়ে নিরলস লেখালেখি করে গেছেন। সানন্দে অংশ নিয়েছেন ব্লগ আড্ডা বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে। আর আমরা মুগ্ধ পাঠক হয়ে, গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উৎপল দা'র চিন্তা ও দর্শনের সারথি হয়েছি।

মাত্র ৪৫ বছরের স্বল্প জীবন। প্রিয় উৎপল দা আপনি জানবেন, আপনার প্রয়াণ মানে চির প্রস্থান নয়। মুক্তচিন্তার বাতিঘরে যে মশাল আপনি জ্বালিয়ে গেলেন সেই দীপশিখা চির অনির্বাণ। যে আলো আপনি বিলিয়ে গেলেন তা চির অফুরান। প্রজ্ঞাবানের বিনাশ নেই। তাই আপনি ছিলেন, আছেন এবং সগৌরবে থাকবেন। এই ব্লগের সবার আত্মার আত্মীয় আপনি। মুক্তদর্শনের যে বীজ আপনি বপন করে গেলেন তা একদিন মহীরুহ হবেই। সকল ঘোর অমানিশা কেটে গিয়ে জেগে দেখা আপনার স্বপ্নের এক নতুন প্রভাত আসবেই এই ভূমিতে এই জনপদে।

আমরা আর সর্বোপরি আপনার আত্মজা রূপকথা ও চন্দ্রকথা উৎপল চক্রবর্ত্তী নামের এক নিপাট সাধুজনকে বুকে ধারণ করেই আলোর মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাবে জানবেন। আজকের এই বিষাদবেলায় অমরত্বের শোকসংগীত হোক আমাদের সমস্বর সকরুণ সুর। আপনার অবিনাশী আত্মার জয় হোক প্রিয় লেখক উৎপল চক্রবর্ত্তী।
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় সারথি, প্রিয় ব্লগার।

লেখকঃ সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টেলিভিশন
২০ মে ২০১৭