আজকের শিশুরাও ভয়াল নিপীড়ক!

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 19 June 2017, 07:15 AM
Updated : 19 June 2017, 07:15 AM

.

বাংলাদেশটাকে যে শেষ করে দেয়া হয়েছে, মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধে বন্ধুদের হাতে সুমন আলী নামের রাজশাহীর তানোরের এক শিশুর নির্মম হত্যাই তা প্রমাণ করে! শিশুদের জন্য কী অসভ্য জগৎ তৈরি করে দিয়েছি আমরা যে, শিশুরা তাদের বন্ধুকে কান কাটে, নাক কাটে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দাঁত ও বুকের পাজর ভেঙ্গে দেয়! অথচ আজকের দিনের শিশুরাই আগামি দিনে বিভিন্নভাবে দেশটাকে নেতৃত্ব দেবে!

এইসময়ের শিশুরা চায় থ্রিলিং, এডভেঞ্চার। স্ট্যান্ডার্ড টু-থ্রিতে উঠেই খোলা অন্তর্জাল ঘেটে জেনে ফেলে নারী-পুরুষের শরীরবৃত্তীয় ইতিহাস। নেটের গেটওয়েতে ফিল্টারিং করবার কথা কারো মোটা মাথাতেই আসে না। ইতোমধ্যে গুগল ও ইউটিউবকে পঁচিয়ে ছেড়েছে বাঙালি কাপুরুষেরা। সার্চ বাটনে গিয়ে 'চ' চাপলেই দেখায় 'চটি'! 'মা' চাপলে দেখায় '…গী'! জানতে চাইলে 'সততা' দেখায় শিশুর জন্য বিপর্যয়কর '…ক্স'! স্মার্টফোন আর নেটতো এখন মায়ের হাতের মোয়া। খানিকটা চোখের আড়ালে যাও, যা খুশি তাই দেখো, যা খুশি তাই শেখো।

বঙ্গভূমি'র নোংরা নেটকেই আদর্শ মেনেছে শিশুরা। তার সামনে না আছে আদর্শবান শিক্ষক, না আছে ভাই, না আছে অভিভাবক। ওরা চারপাশের মানুষের চারিত্রিক চরম অবক্ষয় ও নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকান্ড দেখে দেখেই বড় হচ্ছে।

সমাজে অগণন অপরাধ ঘটছে কিন্তু বিচার না শাস্তি দেখা যাচ্ছে না। বিচারহীনতার অদ্ভুত সংস্কৃতি শিশুদেরও প্রভাবিত করছে নাতো?

খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কোনো সংযোগ নেই বেশিরভাগ শিশুর। আনন্দপাঠ নয় বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ এর স্পর্শধন্য করতে আবাল্যেই পরীক্ষায় বসিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের। বাবা-মা এত ব্যস্ত যে, সন্তানকে আদর করবার, কাছে বসিয়ে দু'কথা বলবার সময় কোথায় তাদের?

খুব স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মূল্যবোধ, গুড অ্যাটিচ্যুড, বিনয় বা ভালোবাসা কী শিশুরা তা জানে না। কোনো শিশুই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিকতা তাকে অপরাধী করে তোলে। ভালোবাসা ও স্নেহের বঞ্চনা শিশুমনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তার প্রভাব বয়ে বেড়াতে হয় জীবনভর। দারিদ্রের কষাঘাত, পরিচর্যার অভাব ও পারিবারিক বন্ধনচ্যুত হওয়া শিশুদের অপরাধ প্রবণতা প্রবল। তাদের বিকশিত করবার, যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবার দায়িত্বটা কি এই রাষ্ট্র পালন করতে পারছে?

কাজেই আমাদের শিশুরা দুর্ধর্ষ অপরাধী হয়ে ওঠবে, চোর-ছ্যাঁচড়-খুনি হবে, দুনিয়া কাপানো নিপীড়ক হবে, নির্মমতার আইকনরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে এটাই আমাদের উত্তরপ্রজন্মের ট্রাজিক নিয়তি।

সুমনের শিশু নির্যাতকদের অপরাধ জাস্টিফিকেশনের আগে নিজের মুখটা যখন আয়নায় দেখি নিজেকেই বড় অপরাধী লাগে। এই পোড়া দেশের সন্তান হিসেবে সুমনের খুনি আসলে আমরাই। শিশুদের সামনে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আমরা এঁকে দিতে পারছি না। সত্য ও সুন্দরের সাধনার পথ বাতলাতে পারছি না। আমরা বয়সে বড় হয়েছি বটে আক্কেল আর ঔদার্যে রয়ে গেছি বড়ই ক্ষুদ্রকায়। এমনতর নীচ ও ক্ষুদ্ররা শিশুদের কী আদবকেতা শিক্ষা দেবে?

অতএব দেশটা হায়েনাদের হাতে দিয়ে দেশের সব সরল সুমনেরা ছুড়ি বা হাতুড়ির আঘাতে কান-নাক-দাঁত খুইয়ে এভাবেই নিঃশেষ হয়ে যা!

আর সুবোধ তুই এখনি আত্মহত্যা কর!

ফারদিন ফেরদৌস
সুখেরছায়া
১৭ জুন ২০১৭।