মনপোড়ে, মনপুরা!

ফারুক জোয়ার্দ্দার
Published : 11 June 2016, 05:38 AM
Updated : 11 June 2016, 05:38 AM

ফারহান-৪ প্রস্তুতই ছিল। এসি কেবিন বুকিং কনফার্ম। আয়েশে ফিরতে পারতাম ঢাকায়। কিন্তু মাথায় পোকা ঢুকলে যা হয় আরকি! দুপুর দেড়টায় লঞ্চে চড়ে পরদিন সকাল অবধি আঠারো ঘণ্টার নৌযাত্রা মানতে পারছিলাম না। যাওয়ার পথে নদীর স্রোত বারো ঘণ্টায় টেনে নিয়ে যেতে পারে মনপুরায়, সহজেই। ফেরার পথ উজান। তাই মাথায় পোকা কিলবিল করছে হাতিয়া হয়ে ভাঙ্গা পথে ঢাকা ফিরব। দুটো লাভ। এক. ভোরে বেরুলে সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকায়। তাতে রাতের খাবার, ঘুম আর সেহরি বাসায় পৌঁছে আরামে সমাপন হতে পারে। দুই. কলম্বাসের মত নতুন পথের সন্ধান লাভ। সুতরাং চরৈবেতি!

রাত তিনটায় মনপুরা গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সারা রাত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। ডাকবাংলোর নিচের ডোবায় ঝিঁঝিঁর দল চিৎকার করে করে ক্লান্ত প্রায়। আগের মত অসহ্য গরম নেই আজ।

আজ সেহরি খেতে হবে। প্রথম রোজা। এ সময়টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাত বারোটাতেই জেনারেটর বন্ধ করা হয়েছে। মনপুরা বিদ্যুৎবিহীন জনপদ। শহরের বাইরের দিকে বাংলাবাজারে বিশ্বব্যাংক ছোট একটা সোলার কেন্দ্র করে দিয়েছে। অল্প কিছু পরিবার ব্যয়বহুল এ গ্রিডে সংযুক্ত হতে পেরেছে। অন্যদের জন্য প্রশাসনের সান্ধ্যকালীন জেনারেটর ভরসা। মেঘনার দিগন্তে সূর্য অস্ত গেলে জেনারেটর চালু হয়। চলে দেড়টা পর্যন্ত। এ অন্য বাংলাদেশ। অচেনা। শহুরে সাহেবদের কল্পনার বাইরে। আমি কুষ্টিয়ায় বড় হয়েছি। যথেষ্ট অবহেলিত ও প্রত্যন্ত এলাকা, সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানেও বিদ্যুৎ এসেছে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই।

মোবাইলের এ্যালার্মের সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে আসে। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে নিই। ইরেসপো প্রকল্পের এআরডিও হাফিজ মটরসাইকেল নিয়ে নিচে অপেক্ষা করছে। পাঁচ মিনিটেই বাজারে পৌঁছে যাই। ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে জমজমাট সেহেরির আয়োজন। গত দুদিন ভয়ে কেটেছে। এইসব ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টের কল্যাণে কখন জানি পেটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি! একটা সময় ছিল নীলক্ষেতের গভীরে এ ধরনের রেস্টুরেন্টে অনেক দুপুর রাত্রির সেবা গ্রহণ করেছি নিঃসঙ্কোচে। ইমিউনিটি বলে একটা কথা আছে। পরিবেশের মান আর বয়সের সাথে এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে নিশ্চয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ে যারা নিয়মিত তিনবেলা আহার গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন, ইমিউনিটি নিয়ে তাদের চিন্তার কিছু নেই।

মনুপুরার তিনটা রেস্টুরেন্টে দুদিন নানা পদ চেখে দেখেছি। কোথাও ইলিশ নেই। জুন মাসের শুরুতে ভরা মেঘনায় ইলিশ ছাড়া আর কিছু থাকার কথা না। কিন্তু রেস্টুরেন্টে নাই কেন? কে জানে!

বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় নিয়ে ডাকবাংলোয় ফিরি। লঞ্চঘাটার উদ্দেশ্যে বেরুতে হবে। ছ'টায় লঞ্চ। ঐটা মিস করলে আর গতি নাই। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়ারও কোন লক্ষণ দেখছি না। মটসাইকেলের পেছনে বসে যেতে হবে দশ কিলোমিটার পথ। নাহ্, আর দেরি করা যায় না, বেরুতেই হবে, এখনই।

মনপুরায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম কিছু নেই। বেকার যুবকেরা নিজেদের মটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এ ব্যবস্থা জনপ্রিয় বটে। চালকের পেছনে একজন, কখনো দু'জন। উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে লঞ্চঘাটা জনপ্রতি একশ' টাকা। যথেষ্ট ব্যয়বহুল যাত্রা, ঝুঁকিপূর্ণও। বৃষ্টিতে মাথা বাঁচানোর কোন উপায় নেই। পিচ্চিল আরসিসি ঢালাই রাস্তা। ছিটকে পড়লে ভবলীলা সাঙ্গ।

মনপুরা লঞ্চঘাটায় পৌঁছুতে কাকভেজা অবস্থা। এক টং রেস্টুরেন্টে ‍ঢুকে আশ্রয় খুঁজি। বয়-বাবুর্চি টেবিলের উপর ঘুমুচ্ছে। অনেক যাত্রী। নারী-শিশু। নামে লঞ্চঘাট। কোন পল্টুন নেই। নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ভেঙ্গে গেছে। ক'দিন আগের রোয়ানুর চোট দৃশ্যমান চারদিকে। বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত এখনো ঘোলা জলের নিচে।

লঞ্চেএসে থামে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, অন্য একটা ঘাটে। কী যন্ত্রণা! তুমুল বর্ষণ শুরু হয়েছে। পিচ্ছিল কর্দমাক্ত মেঠো পথ। মানুষের স্রোতের সাথে এগিয়ে চলেছি। জুতা হাতে। ছাতা বাতাসের তোড়ে উড়ে উড়ে যেতে চাইছে। সারা শরীর কাদায় মাখামাখি। সবচে বিপদে আছি ডিএসএলআর ব্যাগ নিয়ে। আল্লাহ রক্ষা করো।

অবশেষে লঞ্চে গিয়ে উঠতে পারলাম। গন্তব্য নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ। ঘণ্টাখানেকের পথ। ভরযৌবনা মেঘনা পাড়ি দিতে হবে।

লঞ্চের কোণে নদীর ঘোলা জলে নিজেকে পরিচ্ছন্নের ব্যর্থ চেষ্টা করি। বৃষ্টির তোড় কমে আসছে। চারদিকে থৈ থৈ পানি। বিশুদ্ধ বাতাস। আহ্, কী প্রশান্তি! আমার মত দুর্বল ফুসফুসের লোকের কাছে যেন মর্ত্যের স্বর্গ।

যাত্রীরা বেশিরভাগই মনপুরায় নেমে গেছে। হাতিয়া এর শেষ গন্তব্য। নিচের ডেক প্রায় ফাঁকা। মানুষের চেয়ে মাল বেশি। নানান রঙের জিনিস। পানের ঝুড়ি, বাইসাইকেল, আলুর বস্তা, পানির বোতল, চিপস, স্যালোমেশিন, টিন, কেরোসিনের চুলা। সব ঢাকা থেকে আসছে, হাতিয়ার জনগণের ভোগ্য হতে। আশে পাশে নাম না জানা ছোট দ্বীপ। সবুজ বৃক্ষরাজির অরণ্য। এখানে সেখানে ইলিশ ধরার ফাঁদ পাতা। জেলে নৌকাগুলো জাল টানায় ব্যস্ত।

হাতিয়ার তমরদ্দি লঞ্চঘাটে পৌঁছে যাই দ্রুতই। তমরদ্দি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এখানে ছোট জেটি আছে। নদীর পাড় কনক্রিটের ব্লক দিয়ে সুরক্ষিত। জেটি ছেড়ে দূরে গিয়ে লঞ্চ নোঙ্গর করে। চিকন কাঠের টুকরো নামিয়ে দেয় মাটিতে। বাঁশের টুকরো হাতে দু'জন কর্মী দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নামতে সাহায্য করে। একজন লঞ্চের উপরে, একজন নিচে, মাটিতে। ভাল ব্যবস্থা। যাত্রীরা কাঠের টুকরোর উপর দিয়ে বাঁশে হাত ঠেকিয়ে দুলতে দুলতে কোনক্রমে পাড়ে নেমে যায়।  নিচে কনক্রিটের ব্লক। মেঘনায় ভাটা চলছে। ব্লকের উপর 'ফাইন' কাদার মসৃণ স্তর। পড়ে গেলে খবর।

এখানেও মটরসাইকেল বাহিনী। সংখ্যায় অনেক। চারদিক থেকে ছেকে ধরে। যেখানে যেতে চাই নিয়ে যাবে। মেঘ থমথম করছে আকাশ জুড়ে। ভোরে কাকভেজা হয়েছি একবার। আর ওকাজ করা যাবে না। ঢাকার বহিষ্কৃত থ্রিস্ট্রোক বেবিট্যাক্সির যথেষ্ট দাপট চোখে পড়ে তমরুদ্দিতে। একটাতে চেপে বসি। গন্তব্য হাতিয়ার অপর প্রান্ত, নলছিরি ঘাট। ভাড়া খুবই চড়া, জনপ্রতি একশ' টাকা।

নলছিরি বারো-তেরো কিলোমিটারের রাস্তা। মসৃণ পিচঢালা। আধাঘণ্টায় ঘাটে পৌঁছে যাই। কী ভীষণ সবুজ চারদিকে! চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাণ ভরে ওঠে।

ঘাটে নোয়খালীগামী মানুষের ভীড়। দশটায় সিট্রাক আসবে। তারই অপেক্ষায়। বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার। যাত্রীদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই। দুটো টং দোকানের ঝাঁপের নিচে গাদাগাদি করে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করছে কিছু লোক। ট্রলারওয়ালাদের হাঁকাহাঁকি। একঘণ্টায় নোয়াখালী পৌঁছে দেবে। দুশ' টাকা ভাড়া। জীবনের মায়া বলে একটা জিনিসে খুব বিশ্বাস করি। অঘোরে প্রাণটা বিসর্জন দিতে রাজি নই। কিন্তু দেখি, সকলের ক্ষেত্রে এটা খাটে না। মানুষ হুড়হুড় করে নেমে যাচ্ছে নদীর ঢালে। ট্রলারে গিয়ে উঠছে। স্পিডবোটওয়ালারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাত্রী ধরার। বিশ মিনিটে নামিয়ে দেবে নোয়াখালী। কিন্তু ভাড়া চারশ' টাকা। বাড়াবাড়ি রকমের বেশি। সুতরাং তারা সুবিধা করতে পারে না।

সবে আটটা বাজে। দু'ঘণ্টা বাদে সিট্রাক আসবে। ছাড়বে তারও একঘণ্টা পর। এতক্ষণ অপেক্ষা করা কষ্টকর। আমি স্পিডবোটে চড়ব কিনা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। ভরা মেঘনা সম্মুখে। আবহাওয়া ভাল-মন্দের মাঝামাঝি। যদি স্পিডবোট উল্টে যায়, ভাসতে ভাসতে সোজা বঙ্গোপসাগর। কেউ জানবেও না কোন অতলে তলিয়ে গেছি। বউ-বাচ্চার মুখ মনে পড়ল। সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা পৌঁছুবো বলে উল্টো পথে চলেছি। মেঘনায় তলিয়ে গেলে এ জীবনে আর কখনো সন্ধ্যা ঘনাবে না।

ছাতা মাথায় নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। মানুষের মুখ দেখি। টং দোকানের ঝাঁপের নিচে দাঁড়ানোর ধান্ধা করতে দোষ দেখি না। একটা বেঞ্চে একটুখানি জায়গাও জুটিয়ে নিই। একটা শিশু ঠেলতে ঠেলতে আমাকে প্রায় উঠিয়ে দেবার জোগাড়। গল্প জুড়ে দিই। বাবারে, তোর বয়সে প্যান্ট পরারও দরকার মনে করতাম না। এমন বর্ষার দিনে স্কুল মাঠের পানি দাপিয়ে বেড়াতাম। চোখ দুটো লাল আর হাত-পা সাদা হয়ে উঠলে মা আসতো লাঠি হাতে। তারপর বেদম পিটুনি। চোখ কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে।

বিআইডব্লিউটিসি'র পুরানো আমলের সিট্রাক। আকারে খারাপ না। সময়মতই ঘাটে এসে ভিড়ে। নব্বই টাকার টিকেট, দু'টাকার টোল। টং কাউন্টারের সামনে ছাতা মাথায় মানুষের ভীড় লেগে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। বড় বিরক্তিকর। বিকল্প খুঁজতে থাকি। দেখি ভীড়ের বাইরে একটা ছেলে টিকেট বিক্রি করছে। একশ' টাকার নোট দিই। আট টাকা ফেরত দে ব্যাটা। কে শোনে কার কথা!

নলছিরি ঘাটের আসলেই কোন ছিরি নাই। পাড় থেকে নদীর কিনার অনেক গভীরে। ঢালু। বৃষ্টি কাদায় মাখামাখি অবস্থা। সিট্রাকে উঠার জন্য যে কাঠের টুকরো দেয়া হয়েছে যাত্রীদের পায়ের কাদায় সেটা লেপ্টে আছে। ভয়ঙ্কর পিচ্ছিল। বৃদ্ধ নারী শিশুরা হেলতে দুলতে উঠে যাচ্ছে ওর উপর দিয়েই। ব্যাগ হাতে, ক্যামেরা পিঠে, ট্রাইপড বগলে আর ছাতা মাথায় আমি হা করে দাঁড়িয়ে আছি। কিভাবে উঠবো। পা পিছলে গেলে সাধের ক্যামেরা নদীর ঘোলা জলে গোসল সেরে নেবে। সিট্রাকের কর্মীরা তাড়া দেয়। ওই মিয়া, দাঁড়ায়া কি দেখো! একজন দয়া পরবশ হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। ব্যাগ তার হাতে চালান করে দিয়ে কোনক্রমে মিনি পুলসিরাত পেরিয়ে যেতে পারি।

সিট্রাকের ভেতরে সারি সারি বেঞ্চ। সংখ্যায় কম নয়। কিন্তু ততক্ষণে সব বুকড্। ডেকের স্টিলের ফ্লোর কাদায় ঢেকে গেছে। গা গুলিয়ে গুলিয়ে উঠছে। কোনক্রমে একটা বেঞ্চের কোণে ব্যাগ-ট্রাইপড রেখে দোতলায় উঠে আসি। এখানে ভীড় কম। ভেজা বেঞ্চে বসে পড়ি। মাথায় ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। সবকিছু ভিজে যায় যাক। সমস্যা নাই।

সিট্রাক চলতে শুরু করেছে। পাশের দুই হুজুর তাবলিগের ইজাজত নিয়ে গভীর আলোচনায় মশগুল। সাধারণতঃ এক লাইনের দুই পণ্ডিত একত্রে আলোচনায় বসলে দু'জনেই নিজ নিজ পণ্ডিতি জাহির করতে চেষ্টা করে। এরা ব্যতিক্রম। দু'জনই দু'জনকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়। আমি কান খাড়া করে শুনতে থাকি। সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের এই যে নিঃশর্ত বিশ্বাস, এই যে নিরঙ্কুশ আত্মসমর্পণ, আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। আমি অসহায় বোধ করি।

মেঘনার এদিকটায় নদী অনেক ব্যস্ত। বড় বড় সামুদ্রিক জাহাজ পেরিয়ে যাচ্ছে। ট্রলার, স্পিডবোট, জেলে নৌকার আনাগোনা চারদিকে। মাছ ধরার জালগুলো এখানে সেখানে ভীষণ বিপজ্জনকভাবে পেতে রাখা। সিট্রাকের প্রোপেলার জালে আটকে গেলে বিপদ হতে পারে। এ কারণে জাল পার হবার সময় সিট্রাকের কর্মীরা অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে উঠছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত মেঘনার রূপ উপভোগ করতে থাকি।

চেয়ারম্যান ঘাটে এসে পৌঁছাতে দুপুর একটা। এটাও হাতিয়া উপজেলার মধ্যে। এখান থেকে নোয়াখালী শহর চল্লিশ কিলোমিটার। মাঝে সুবর্ণচর উপজেলা পড়েছে। চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার জনগণকে সরকারি সেবার প্রয়োজনে মেঘনা পাড়ি দিয়ে হাতিয়া যেতে হয়। সিরাজগঞ্চের চৌহালীতেও এ অবস্থা দেখেছি। এনায়েতপুরের মানুষ যমুনা পাড়ি দিয়ে চৌহালীতে উপজেলা পরিষদের সেবা নিতে যায়। জানি না কেন এই অসঙ্গতি এত বছর ধরে চলে আসছে।

এবারের বাহন সিএনজি বেবিট্যাক্সি। ভাড়া জনপ্রতি একশ' টাকা। দীর্ঘ রাস্তা। সংস্কার কাজ চলছে। ঝাঁকুনি খেতে খেতে উড়াল দেয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি সিটের মধ্যে।

আড়াইটা বেজে যায় মাইজদি পৌঁছাতে। এটাই নোয়াখালী শহর। একুশে পরিবহনের এসি বাস সাড়ে তিনটায়। ঝুপড়ি কাউন্টারে বসে ঝিমুতে থাকি। শরীরে আর কোন শক্তি অবশেষ নাই। বউ বাচ্চার সাথে ইফতার করার আশা দূর করেছি। কলম্বাস সাজার সাধও মিটে গেছে চিরতরে।

একসময় কাউন্টারের ছেলেটা কাঁধে হাত দিয়ে আমাকে জাগাতে চেষ্টা করে, 'ভাই, ঢাকার বাস এসে গেছে।'