ঈদের বাজারে ধ্বস, নাকি নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই পড়া

ফারজানা তন্বী
Published : 27 June 2017, 07:46 AM
Updated : 27 June 2017, 07:46 AM

এবারের ঈদে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর আসছে… ঈদে বাংলাদেশি বাজার বিমুখ ক্রেতারা, ভিসা পেয়ে তারা ভারত চলে যাচ্ছেন। দর্জি পাড়ায় ভীড় নেই। দোকানিদের হতাশা আর অভিযোগে ক্রেতাকুল জেরবার। কিন্তু এই অবস্থা যে তাদের সৃষ্টি সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। অতীত তারই প্রমাণ। নিজের দেশের শাড়ী পোশাক থেকে যে ভারতীয় পণ্য অধিক গ্রহণযোগ্য তা কি তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশীদের বোঝাননি? ভাল পোশাক বলতে সে ঈদেরই হোক বা বিয়ে বা জন্মদিন বা পার্টি হোক বাজারে দোকানিরা ভারতীয় পোশাকই কি রাখেন না? তারাই হাতে তুলে দেন ভারতীয় পোশাক প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে। বিভিন্ন সিনেমা আর সিরিয়ালের নামে তারা বিক্রি করে আসছেন বিভিন্ন পোশাক।

ভাল শপিংমল হোক বা সাধারণ কোন দোকান সবখানেই ঝলমল করে ভারতীয় পোশাক। দেশি পণ্য কিনতে গেলে দেশী কিছু বুটিকশপগুলোই ভরসা। খোঁজ নিলে জানা যাবে এমন বুটিকের ব্যবসা বেড়েছে বই কমেনি। আড়ং, দেশীদশ এই এরকম দোকানে গেলে তার সত্যতা মিলে যাবে। তারমানে দেশী পণ্যের ক্রেতারা কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেননি। তাই দেশী পণ্যের ব্যবসায়ীরা বিপদমুক্ত। ভারতীয় পণ্য নির্ভর ব্যবসায়ীয়াই বিপাকে। ভারতীয় পণ্যে অভ্যস্ত ক্রেতারা তাই আরও ভালভাবে দেখেশুনে কেনার জন্য ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা দিনদিন ভাল হচ্ছে, বুদ্ধিও বাড়ছে। তাই তারা অধিক মূল্যে বাংলাদেশী মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের থেকে পণ্য না কিনে সরাসরি ভারতে চলে যাচ্ছে। শপিংও হল আবার ভারতদর্শনও হল। মানে রথ দেখা আর কলা বেচা এক যাত্রায়।

এক অনলাইন পত্রিকায় পড়লাম এবার নাকি ভারতে দেড় লাখ বাংলাদেশীর হাজার কোটি টাকার শপিং করা হয়েছে। কয়েক লাখ বাংলাদেশীর ভারতমুখী এইবার। তুলনামূলকভাবে দামে কম মানে ভাল পণ্যের জন্য এ যাত্রা। ভিসা দেয়া বা না দেয়ার সাথে এর বোধ হয় কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। এক সময় খবরে এসেছিল… তাঁতিদের মাথায় হাত, বিদেশী পোশাকে বাজার দখল… তখন দোকানিদের দাঁত বের করা ছবি দেখা গিয়েছিল, দেশী বুটিক গুলো তখন প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। যে যার যেমন কর্ম তেমন কর্মফল পাচ্ছে। হা-হুতাশের কি আছে?

সাধু সাবধান। সস্তায় টাকা কামানোর জন্য দেশী পোশাক শিল্পের কারিগরদের পেটে লাথি মেরেছে যারা, দেশী পণ্যকে হেয় করেছে এখন তাদেরই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। ভারতীয় পোশাক আর শাড়ী দিয়ে দোকান না মিথ্যায় ঝলমলিয়ে দেশি পোশাকের মর্যাদা দিন। দেশি পণ্য বাঁচুক, বাঁচুক দেশি ব্যবসায়ীরা। আশা করি ব্যবসায়ী কূলের বোধোদয় হবে। আর বাঙালি আবার তার দেশি পণ্যের সমৃদ্ধ বাজার ফিরে পাবে।