ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র-৩য় পর্ব

গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফজলুল হক
Published : 23 July 2011, 02:55 AM
Updated : 23 July 2011, 02:55 AM

যে কোন প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতা এক কেন্দ্রে বা এক পদে কেন্দ্রীভূত হলে প্রতিষ্ঠান উক্ত পদের অধিকারী ব্যক্তির একক নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তদুপরি উক্ত ব্যক্তি যদি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার নিয়ম ও আইন প্রণয়নের অধিকারী হন; তাহলে প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি-ইচ্ছায় পরিচালিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর উক্ত ক্ষমতাধারী ব্যক্তিকে যদি কারও কাছে জবাবদিহি করতে না হয়; প্রতিষ্ঠানটিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমাজে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ব্যক্তির উপযুক্ততা ও চারিত্রিক গুণাবলী ভাল না হলে যেমন প্রতিষ্ঠান চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়; তেমনি প্রতিষ্ঠান উত্তম ও উপযোগী না হলে সে প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না। অর্থাৎ গাড়ী এবং ড্রাইভার উভয়ই ত্রুটিমুক্ত না হলে উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানো যায় না। তাই শুধু ব্যক্তি নয়; প্রতিষ্ঠান ও যাতে উপযুক্ত হয় সে চিন্তা করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সর্বদা ও সর্বত্র ব্যক্তির প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধি( এম পি, মন্ত্রী ইত্যাদি), অফিস আদালত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির খোঁজ করা হয়। কিন্তু যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ব্যক্তি সমূহ কাজ করেন; সে সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না সেটার দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয় না। ফলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আমাদের সকল ভাল মন্দ ব্যক্তি নির্ভর ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক। আমরা সর্বত্র ভাল মানুষের খোঁজে দিশেহারা। ধর্মে, কর্মে ও রাজনীতিতে আমরা ব্যক্তি সমালোচনা ও ব্যক্তি পূজায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে (সমাজ ও রাষ্ট্র) আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি না যেন ব্যক্তি অন্যায় করতে না পারে। অথবা অন্যায় করতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিস্টেমে তার প্রতিরোধ হয় সে ধরণের গণতান্ত্রিক কোন ব্যবস্থা স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে না। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যা আছে তা হলো অন্যায় করা হয়ে গেলে বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা। কিন্তু অন্যায়ের কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। আমাদের পুলিশী ও বিচার ব্যবস্থা– অন্যায় হয়ে গেলে সক্রিয় করা হয়; যা অন্যায় প্রতিরোধে কার্যকরী নয়। তা ছাড়া এগুলো আমলাতান্ত্রিক হওয়ায় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়।

নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, সরকার ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ যারা রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট তারা যাতে উপযুক্ত ও সৎ গুণাবলী সম্পন্ন হয়ে কাজ করেন তার জন্য জনগণের নিয়ন্ত্রিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। শুধু সামান্য সংখ্যক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া সব সমাধান নয়। বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে জনগণের প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহনে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়াই শেষ কথা।