জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ও চলচ্চিত্র ভাবনা

ফয়সাল মাহমুদ পল্লব
Published : 6 April 2015, 07:17 PM
Updated : 6 April 2015, 07:17 PM

১৯৫৬ সালে এদেশে 'মুখ ও মুখোশ' নামে প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। সেখান থেকেই শুরু। ইতিমধ্যে বাংলা চলচ্চিত্র পেরিয়ে এসেছে অনেকখানি সময়, অনেকগুলো বছর। এর মাঝে মানচিত্র বদলেছে, ইতিহাস বদলেছে, বদলেছে মানুষের জীবনধারা। চিন্তা-চেতনারও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ৩ এপ্রিল ছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। এ দিবসকে সামনে রেখে অনেক কর্সূচীর আয়োজন করা হয়েছিলো দিনব্যাপী।

চলচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়ে থাকে। একটি দেশের সামাজিক চিত্র, মানুষের জীবন যাত্রার চিত্র ফুটে ওঠে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। আবার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন, রাষ্ট্র পরিবর্তন,  জীবন যাত্রার পরিবর্তনও করা সম্ভব। আমাদের দেশে ৭১'র মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই সময়ের চলচ্চিত্রগুলো দারুণ প্রভাব ফেলে মানুষের ওপরে। সেই চলচ্চিত্রের গান বা সংলাপগুলো মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নি:সন্দেহে। পরবর্তি সময়ের চলচ্চিত্রগুলো নির্মানে চিত্রনাট্য সংলাপের কথা বিবেচনা করে নির্মাতারা নির্মান করতেন তাদের চলচ্চিত্র। ফলে তা দর্শকদের হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতো সাধারণ ভাবেই।

এভাবেই ৭০ দশক থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বেশ চলচ্চিত্রানুরাগী দর্শকও তৈরি হয় আমাদের দেশে। সেই সময় সিনেমা হলগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না বলতে গেলে। বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম চলচ্চিত্র হওয়ায় স্বভাবতই এর দর্শক চাহিদাও ছিলো প্রচুর। কিন্তু এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ২০০২ সালের দিকে বাংলা ছবিতে নগ্ন দৃশ্য সংযোজন শুরু করে কতিপয় অসাধু পরিচালক। যা আমাদের দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে কালো অধ্যায় বলা যেতে পারে। সিনেমা হল বিমুখ হতে শুরু করে মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগ করার কথা বেমালুম ভুলে যেতে শুরু করেন তারা।

ফলে হুমকির মুখে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্র। একের পর এক বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হলগুলো। সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই বেকার হয়ে পরেন। কিন্তু কেন চলচ্চিত্রের উপর এই আঘাত? ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু অসাধু পরিচালক অধিক মুনাফার লোভে চলচ্চিত্রের এই বেহাল অবস্থায় নিয়ে যান।

অবশ্য চলচ্চিত্রের বেহাল দশা দেখে নতুন চলচ্চিত্র নির্মানে উদ্যোগী হয় চ্যানেল আই কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফ্লিমসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। চলচ্চিত্র জগতে আশার আলো নিয়ে আসে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মান করে দর্শকদের আবারো সিনেমা হলে ফেরানোর একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন তারা, কিন্তু ততক্ষণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। সিনেমা হয়ে যায় টেলিভিশন কেন্দ্রীক। সিনেমা হল বিমুখ মানুষ চোখ রাখতে শুরু করে টেলিভিশনের পর্দায়।

নতুন নির্মাতারা নতুন করে তৈরি করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরো কয়েকটি চলচ্চিত্র। এই সময় তৈরি হয় জীবন ভিত্তিক কিছু চলচ্চিত্র।  এখনও নির্মিত হচ্ছে আরো কিছু নতুন ধারার চলচ্চিত্র। কিন্তু বিশ্ব চলচ্চিত্র যে দ্রুত এগিয়ে গেছে তার তুলনায় অনেক অনেক পিছিয়ে আছে বাংলা চলচ্চিত্র। এ থেকে বেড় হয়ে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মানে বাংলাদেশ কতটুকু অগ্রসর হতে পারে তা এখন দেখার বিষয়।