মেসির জাদুর অন্তরালে মনমোহনের সম্মোহন

মওদুদ মোমেন মিঠু
Published : 5 Sept 2011, 05:40 PM
Updated : 5 Sept 2011, 05:40 PM

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মনমোহন সিংয়ের বহু প্রতিক্ষিত ঢাকা সফর ৬ তারিখ। হবে আলোচনা সমালোচনার নানা চুক্তি। মনমোহন বাবুরা শুধু নিতে শিখেছেন, শিখেছেন গুলি করতে, শিখেছেন বৈষম্য সৃষ্টি করতে শিখেনি দিতে বা ভালোবাসতে। হয়তো আমাদের কূটনীতিকদের, আমাদের আমলাদের, আমাদের রাজনীতিবিদদের চাওয়ার দক্ষতার ঘাটতিও থাকতে পারে। এবারও যে বরাবরের মত মনমোহন বাবুরা সম্মোহন করে বাকি দাবিটুকু নিতে বা চাইতে ভুলবে না, সে ব্যপারে সন্দেহ নেই। দেখা যাক আমাদের কুটনীতিকেরা ধরা খেতে খেতে কতটা শিখতে পেরেছেন ?

বিএনপি এর আগে মনমোহন বাবু আসার সময় হরতাল দেবার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে তারা দেশের সুনামের দিকে চিন্তা করে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। অবশ্য বিপরীত পক্ষও খুব দক্ষতার সাথে সফরসূচি ঠিক করেছে। ঠিক ঈদের পরপর ছুটিছাটা কাটিয়ে মানুষগুলো যখন ঢাকাতে ফিরবে তখন। যাতে সে ধরনের কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।

আবার সেই একই ৬ তারিখ আর্জেন্টিনার মহাতারকা মেসিদের মাঠের খেলায় চোখ রাখবে বাংলার শিশু, তরুন, তরুণী, যুবক, যুবতী, পৌঢ়, বৃদ্ধরা। খেলা পাগল এ বাংগালীর যেখানে বিশ্বকাপের সময় ক্রীড়া উন্মাদনায় মেতে উঠে, আর সে বিশ্বকাপের তারকা স্বয়ং তাদের মাটিতে খেলবে। ৬ তারিখ অমরা মেতে থাকবো আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া ফুটবল ম্যাচ নিয়ে। ৭ তারিখ সে ম্যাচের গল্প করবো ডানে-বায়ের মানুষ গুলোর সংগে।

পত্রিকার পাতায় এ দুদিন শুধু পড়বো মেসিদের জাদুর গল্প। টেলিভিশনে থাকবে মেসিদের থেকে প্রত্যাশার প্রাপ্তির হিসেব নিকেশ। ওয়েব নিউজ গুলোতেও থাকবে তাদের চোখ ধাঁধাঁনো খেলার রংগিন দৃশ্য। ব্লগ গুলোতে পড়ব মেসিদের জয়গান। ফেসবুকে থাকবে তাদের নিয়ে অনুভুতি।

আর এসবের ভিড়ে সাধারন মানুষের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে যাবে মনমোহন বাবুর চুক্তির আলোচনা। পত্রিকার কাভারেজে কিছুটা ঘাটতি থাকবে চুক্তির বিশ্লেষণে। বিরোধী দলের চুক্তির পর্যালোচনাও ম্লান হয়ে যাবে মহাতারকার জাদুর ভীড়ে। মনমোহনেরা এমনিতেই সবসময় তাদের সম্মোহনী শক্তি দিয়ে আমাদের ফুতুড় করে নিয়ে যায়। আর এবার তো সারা জাতিই সম্মোহিত হয়ে থাকবে ফুটবলের জাদুর সম্মোহনে। এতে করে দাদাদের একটু সুবিধেই হবে দাবির বস্তা ভরে নিতে।

মনমোহন বাবুর সফর বিবরণী :
৬ সেপ্টেম্বর:
সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে মনমোহন সিং এবং ৬৯ জন সাংবাদিক পৌঁছেবেন হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। দুপুর ১২টায় তাকে ১৯ বার তোপধ্বনি দিয়ে অভিবাদন জানানো হবে। তারপর তাকে গার্ড অব আনার দেওয়া হবে।

১২টা ১৫ মিনিটে তিনি বিমান বন্দর থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। দুপুর ১টার দিকে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর সেখানে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করবেন। এরপর তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করবেন।

১টা ২০ মিনিটে তিনি হোটেল সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ১টা ৫০ মিনিটে হোটেলে পৌঁছাবেন। বিকাল ২টায় তিনি হোটেলেই মধ্যহ্নভোজে অংশ নিবেন। তারপর তিনি বিশ্রাম নিবেন।

৪টা ১০ মিনিটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ৪টা ৩০ মিনিটে অর্থমন্ত্রী তার সঙ্গে হোটেলের সুরমা রুমে এসে সাক্ষাত করবেন। ৪টা ৫৫ মিনিটে তিনি হোটেল ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৫টায় পৌঁছাবেন। সেখানে আনুষ্ঠনিক আলোচনা শুরু করবেন ৫টা ৩৫ মিনিটে। আলোচনা করবেন ৭টা পর্যন্ত। ৭টা ১০ মিনিটে তিনি আবার হোটেলে ফিরে আসবেন। রাত ৮টায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন।

৭ সেপ্টেম্বর :
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়ে ১০টা ৫৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছাবেন। ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে 'ইনডিয়া-বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া' শীর্ষক একটি বক্তৃতা দিবেন। এরপর ১১টা ৫০মিনিটে তিনি বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হয়ে ১২ টায় সেখানে পৌঁছাবেন। ১২টা ০৫ মিনিটে তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১২টা ৩৫ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন এবং সেখানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। এরপর তিনি জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখে পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করবেন।

দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি হোটেলের উদ্দেশে রওনা হবেন। ১টা ৩৫ মিনিটে হোটেলে ভারতীয় হাইকমিশনারের দেয়া মধ্যহ্নভোজে অংশ নিবেন। এরপর বিশ্রাম নিবেন। ৫টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে ৫টা ৪৫ পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদায় জানানো হবে।

লক্ষ্য করলে দেখবেন আলোচনা আর চুক্তি গুলো হবে খেলার সময়। আর দ্বিতীয় দিন শুধু বক্তৃতা ও সম্মাননা নেয়ার পালা। মেসীর খেলার জাদুর অন্তরালে ঘটে যাবে আসল খেলা। আর সে খেলায় গোল দেবে মনমোহন। আর সাত তারিখ দুই গোলদাতাই প্রস্থান করবে। প্রশ্ন থেকে যায় আসল খেলাটি কে খেলবে???

সব সন্দেহ দূর করে আমরা যেন কিছু পেতে পারি সে ইচ্ছাই কামনা করছি। তবে প্রাপ্তি ও প্রদানের ভারসাম্যও বিবেচনা করতে হবে। আর স্মরণ করছি ফেলানিদের কথা…

আর স্বাগতম জানাচ্ছি আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া দলকে আমাদের এই সবুজ বাংলাদেশে।