হাওরে দুর্ভোগের সাথে ঈদ

গৌতম বুদ্ধ পাল
Published : 3 July 2017, 08:43 AM
Updated : 3 July 2017, 08:43 AM

বাবা- মা, শ্বশুর- শ্বাশুরী মারা গেছিলেন কিন্তু জীবনে এতটা দুর্ভোগ আসেনি, সারা জীবন ঈদে নিজে নতুন কাপড় চোপড় পড়েছি, দান করে কত গরিবকে কিন্তু সেই আমাকেই লাইনে দাড়িয়ে রিরিফের চাল নিতে হচ্ছে।

এই ঈদের দিনে আপনি আমার বাড়ি আসছেন কিন্তু আপনাকে কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করার মতো সার্মথ্য নেই আমার। এতোটা খারাপ ভাবে কখনই ঈদ কাটাইনি, আমাদের বাবা-মা দের জীবনেও এতো দুর্ভোগ মনে হয় কখনই আসেনি। সাংবাদিককে এভাবেই দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের এক কৃষাণী।

আমার বাবা বয়স ৭৯ বছর, কিন্তু তিনি বলেছেন এতো বছর বয়স হয়েছে হাওরের মানুষের এতো দুর্ভোগ তিনি কখনই দেখেনি আর নিজের পরিবারেও আসেনি। আকাল বন্যা না হলে এবৎসর আমি তিন হাজার মণ ধান তুলতে পারতাম। বলছিলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা'র এক কৃষক।

আমার সব গেল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে। এই কর্মকর্তাদের কারণে হাওরের প্রত্যেক পরিবার আজ পথে বসেছে, এলাকার পোলাপানরা এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধানে গেছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ঈদের আগে সিলেটে এক রিক্সার চালকের সাথে কথা হচ্ছিল, মামা পাঁচ টাকা বাড়াইয়া দিয়েন….
কেন? মামা পাঁচ বেশি কেন দেব? কি বলব মামা, আমি রিক্সা চালাইনা। বন্যায় হাওরের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে আমি কমছে কম এক হাজার মণ ধান তুলতাম সেখানে এবছর ধান তুলছি মাত্র আশি মণ ধান। বউ বাইচ্চা নিয়া কেমনে ঈদ করমু আমার মাথায় ধরতেছে না। অনেক টাকা ঋণ হইয়া গেছে, ঈদ পালন করমু কেমনে, আর ঋণ মারমু কেমনে। জীবনে এতো দুর্ভোগ আসছে যে, আমায় কৃষক থেকে রিক্সা চালক হইতে হইছে।

মামা এনজিও থেকে কি টাকা তুলছিলা, হ মামা হ কিছু টাকা তুলছিলাম। তারা কি তোমায় টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে? – না মামা না বলছে কিছু কিছু করে যেন দিয়ে দেই।

হাওরের তিন লক্ষ কৃষকের মনে নেই ঈদের আনন্দ, প্রত্যেকের জীবনে এক একটা চাপা গল্প আছে। হাজার বছরেও সেই গল্প গুলোর দুঃখ গোছানো সম্ভব হবেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নিজেরদের পকেট ভরার জন্য দেশের ১৬ মানুষের পেটে লাথি মেরেছেন। সরকার চালের বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষের পক্ষে এতো দাম নিয়ে চাল কিনে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যেখানে গত বছর সরকার বলছিলো, আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, চাল আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে। এক বছর পেরোতে না পেরোতেই আমাদের বিদেশ থেকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে!