মজলুম না জালিম – কার পক্ষে জাতিসংঘ এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ?

আশফাক আবীর হাসিব
Published : 11 April 2015, 07:23 AM
Updated : 11 April 2015, 07:23 AM

জাতিসংঘ এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে গোটা বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং রায় বাস্তবায়ন নিয়ে এই সংস্থা দুটির আচরন রহস্যজনক। কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের সময়েও তারা রায় কার্যকরের বিরোধিতা করেছিল। এখন যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের রায়ের বিষয়েও একই কথা বলছেন তারা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। নজির বিহীনভাবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইনগত সকল অধিকার তারা ভোগ করেছেন। তথাপিও এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ?

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সবসময় দুর্বলতম দেশগুলোর ব্যাপারে নাক গলাতে পারে। সবলদের বিষয়ে বরাবরই নিশ্চুপ। মধ্যপ্রাচ্যের একের পর এক দেশ ধ্বংস, এশিয়া, ইউরোপ সহ গোটা বিশ্বের শান্তি রক্ষার নাম করে যারা শান্তি বিনষ্ট করছেন তাদের বিষয়ে কিছুই বলছে না এই সংস্থাগুলো। ইসরাইল যখন ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়ে মুসলিমদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতরের দিনকে গন জানাযার দিনে পরিনত করেছিল তখন উল্লেখিত সংস্থা থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। পক্ষান্তরে ঠিক সেই সময়েই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক পরিচালক বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছিল মানবাধিকার সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লংঘিত হয় নাই, হয় বাংলাদেশে! নাকি ফিলিস্তিনি জনগন হিউম্যান এর সংজ্ঞায় পরে না!

বহুদিন পূর্ব থেকেই মায়ানমারের জান্তা সরকার এবং সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে আরাকানের রোহিঙ্গারা শরনার্থী হয়ে পলায়নপর। এ ব্যাপারেও তারা আমাদেরকে মানবাধিকারের কথা স্মরন করিয়ে আশ্রয় দেয়ার আহবান করেছিল। কিন্তু মায়ানমারে মুসলিমদের উপর অত্যাচার থামাতে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মায়ানমার সরকারের প্রতি কোন আহবান করেনি বা থামাতে পারেনি।

শক্তি এবং আর্থিক ক্ষমতাশীলদের ব্যাপারে তারা বরাবরই নিশ্চুপ। নিয়ম, আইন সব দুর্বলদের উপর। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সব মাথাব্যথা বাংলাদেশের সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে। যুদ্ধাপরাধের বিচার করাই যেন মানবাধিকারের বিরাট লংঘন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনই সকল আইন প্রয়োগের মূল লক্ষ হাওয়া উচিত। তারা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাসির সমালোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব সহ প্রভাবশালী দেশগুলোতে ফাসি/কতল প্রচলিত রয়েছে। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কিচ্ছু করার নাই। সব নিয়ম বাংলাদেশের জন্য।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে মাফিয়া এবং সম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা নাকি তাদের আয়-ব্যায়ের কোন হিসাব কখনও প্রকাশ করে না। এই অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান জামায়াতের কাছ থেকেও যে আর্থিকভাবে লাভবান হয় না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অনুসারে একথা বলাই যায় যে, জাতিসংঘ হচ্ছে ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার। আর মানবাধিকার সংস্থাগুলো সম্রাজ্যবাদীদের একপেশে চাটুকার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। এরা শোষিতের নয় শোষকের, মজলুমের নয় জালিমের, অত্যাচারিতদের নয় অত্যাচারীদের, মানবের অধিকারের পক্ষে নয়, ক্ষমতা ও অর্থের পক্ষে স্বার্থের বিনিমিয়ে কাজ করে। বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার একটি অস্ত্রের নাম। এটি কোন মারনাস্ত্র নয়, কিন্তু সকল প্রকার মারনাস্ত্র প্রয়োগের এক রহস্যময় শাব্দিক অস্ত্র। কেননা মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলেই ধ্বংস করা হয়েছে বিভিন্ন সভ্যতা। মানবাধিকার শব্দটির মাধমে সকল হামলা জায়েজ করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কুকর্ম আমাদের ইতিহাসের জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায়।

উপরের ছবিটা '৭১ সালে বিধবাদের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সোহাগপুরের নির্যাতিত নারীদের। তারা জানেন কামারুজ্জামান কি ছিলেন। সোহাগপুরের সোহাগিদের কষ্ট ঐ সংস্থাগুলো বুঝবে কিভাবে? আজ জালিম কামারুজ্জামানের পক্ষে যখন এই মানবাধিকার সংস্থা কথা বলে তখন মজলুমরা ধিক্কার জানায়।

সাংগঠনিক ভাবেই জামায়াত তাদের দলের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিষ্ট নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু বিপরীতে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাস, কূটনৈতিকবৃন্দ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, তারা কি করছেন? অবশ্যই তাদের ভূমিকা বাড়ানো দরকার এবং দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করা দরকার। বহির্বিশ্বের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াত নেতাদের ভূমিকা তুলে ধরা অবশ্য কর্তব্য। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের স্বরূপ বিশ্ববাসী জানে, তাই তাদের কূটনৈতিক চাপ অথবা আহবান সবই আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। সরকারের অবিচল অবস্থানই এসব কিছু পেছনে ফেলে অভিষ্ট লক্ষে পৌছে দিতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের কৃত কর্ম বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কলঙ্কিত অধ্যায়। যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় বাস্তবায়ন করে কলঙ্ক থেকে এ জাতিকে, এ মাটিকে রেহাই দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরই।