সর হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুস-এর একগুচ্ছ কবিতা

জয়া চৌধুরী
Published : 22 July 2017, 03:26 AM
Updated : 22 July 2017, 03:26 AM


সরা হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুস কিংবা শুধুই সর হুয়ানা রামিরেস হিসেবে খ্যাত এই কবি মেক্সিকোয় জন্ম নিয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে। স্পেনের সাহিত্যের 'স্বর্ণ যুগ'-এর অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে তাঁকে গণ্য করা হয়। কেননা সেরভান্তেস ও শেক্সপিয়রের উত্তরসূরি এই মহিলা কবি যখন মেক্সিকোয় জন্মান তখন সেটি স্পেন এর অধীনে ছিল। সন্নাসিনী এই কবি সাহসী সময়ের চেয়ে তাঁর অনেক এগিয়ে থাকা মতাদর্শের জন্য জীবদ্দশাতেই বহু নিন্দার সম্মুখীন হন। নারীবাদী সাহিত্য বলে যে ধারাটি প্রচলিত তাঁর প্রবক্তা তিনিই। আজও তাঁর কবিতা সমান প্রাসঙ্গিক। এইভাবেই তিনি দেশ কাল-এর গন্ডী ছাড়িয়ে কালজয়ী হয়ে আছেন। কবিতাগুলো স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ করেছে অনুবাদক জয়া চৌধুরী। বি. স.

অদৃষ্টকে গাল পাড়া

আমার পশ্চাৎ ধাবনে, পৃথিবী, তোমার আগ্রহ কীসের?
তোমার কোনখানে আঘাত দিয়েছি আমি? যখন আমি স্রেফ
আমার বোধগম্যতায় সৌন্দর্য লেপন করতে চাইছি
আমার সৌন্দর্যকে বোধগম্যতায় নয়?

পরিমাপ করি না আমি আমার বৈভব আমার ঐশ্বর্য রাশি
আর এভাবেই, বরাবর তৃপ্তি পেয়ে থাকি বেশি
বরং ঐশ্বর্যকে বোধগম্যতায় আরোপ করি
বোধগম্যতাকে ঐশ্বর্যের মধ্যে নয়।

পরাস্ত রূপরাজির পরিমাপ করি না আমি
যুগ যুগ ধরে সে তো নাগরিক নগ্নিকরণ মাত্র
আমাকে তুষ্ট করে বিশ্বাসহীনতা, নয় ঐশ্বর্য রাশি।

আমার সত্যগুলিকে গ্রহণ করতে করতে
জীবনের অহংগুলিকে ধারণ করতে থাকার চেয়ে
অহং এর ভেতর জীবনকে ধারণ করা ঢের ভাল।
(Quejase de la Suerte)

ন্যায়নিষ্ঠ রায়

পিলেট সই করেন যিনি অন্যদের বিচার করেন
রায়পত্র দেন, এবং এটা তাঁরই, ওহ্‌ জোরালো কেস!
কে বিশ্বাস করবে একথা যিনি সেই অচেনা কোন মৃত্যুর জন্য সই করছেন পরোয়ানায়
তিনি নিজেই সে রায়ে নিজেই অভিযুক্ত কি না?

উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁদের দুজনকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়
যিনি নীচ অন্ধ ভয়ে সাবধান করে দেন না বা
যিনি চাপিয়ে দেন বোঝা সেই ভাগ্যবান অভিযুক্তের ওপর,
একটি অযথার্থ যন্ত্রণার প্রতি যথার্থ রায় যিনি দেন।

পৃথিবীর বিচারকেরা, থামান আপনাদের হাত,
এখনই সই করবেন না। দেখুন অমানবিক ঈর্ষা থেকে
হিংসা সত্যিই আপনারা সরাতে পারবেন কি না।

প্রথমে ফলাফল ভাল করে পরীক্ষা করে দেখুন,
দাঁড়ান সোজাসাপটা এবং সার্বভৌম রায় দেবেন না
দেখে নিন অন্যের জায়গায় আসলে নিজেদের রায়পত্রেই সই করেছেন কিনা।
(La Sentencia del Justo)

পিলেট= পন্টিয়াক পিলেট যীশুর বিচারক ছিলেন

এই বিকেলে হা ভগবান!

এই বিকেলে হা ভগবান! যখন তোমার সঙ্গে কথা বলছিলাম,
তোমার মুখ আর কাজকর্ম যেমন করে বলে দেখছিলাম
শব্দ দিয়ে তোমার মন গলাতে পারছিলাম না
আমার যে মনটা তুমি দেখেছ সে চাইছিল;

আর সোনা, আমার চেষ্টাগুলো তাকে সাহায্য করছিল,
মনে হচ্ছিল যা অসম্ভব তাকে পরাস্ত করছিল সে:
ইয়ে চোখের জলের ভেতরেই, যন্ত্রণা যাকে উপচে দিচ্ছিল,
ভাঙাচোরা মনটাকে শুদ্ধ করে তুলছিল।

ঢের হয়েছে কাঠিন্যের, হা ভগবান, ঢের হয়েছে:
ভয়ংকর অত্যাচারের ঝড় বইয়ো না আর,
এই দূষিত সন্দেহও নয় তোমার উৎকণ্ঠার সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই এর

বোকা ছায়া দিয়ে, নিরর্থক ইঙ্গিত দিয়ে,
তরল হাস্যরস দেখেছ তুমি ছুঁয়েছও
আমার ভাঙাচোরা মন তোমার হাতে ।
(Esta tarde mi bien)

অবৈধতায় আটক ছায়া

অবৈধতায় আটক, আমার দারুণ অসরল ছায়াটি,
মোহিনীরূপের ভাবছায়া যাকে আমি বড্ড ভালবাসি,
এক রমণীয় ভ্রম যার জন্য আমি সুখে মরে যাই,
মধুর সংঘর্ষ তার জন্য তুচ্ছ এ জীবন বাঁচি।

যদি তোমার করুণার আকর্ষণীয়, চুম্বক টান,
আমার ইস্পাতের মত বাধ্য বুক তোমারই সেবায় নিরত থাকে,
কিসের জন্য তুমি ভালবাসো চাটুকার
পরে যদি উপহাসই করতে হয় আমায় হে দ্রুত অপসৃয়মান?

আরো গুণকীর্তন করতে তুমি পারো না, আমি তৃপ্ত,
তোমার স্বৈরাচার থেকে আমি জয়ী হয়ে যাই বলে-
যদিও তোমার চওড়া ফাঁস কে উপহাস করা এখনো রহিত রেখেছ তুমি

যে তোমার সুন্দর গড়নকে লেপটে জড়িয়ে রাখে,
আমার ফ্যান্টাসি যদি তোমার মধ্যে গরাদ খোদাই করে দেয়
হাতদুটো কিংবা বুককে নিয়ে রসিকতা করলে কিঞ্চিৎই যায় আসে।
(Detente Sombra)