বাসা-বাড়িতে গ্যাস নয়, মানতে কষ্ট হয়

এস এম শারফুদ্দিন শাওন
Published : 14 August 2016, 05:22 PM
Updated : 14 August 2016, 05:22 PM

বাসা-বাড়িতে পাইপ লাইনে আর কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না, মাননীয় অর্থ মন্ত্রীর এরুপ বক্তব্যে আমরা সাধারন মানুষ হিসাবে তীব্র প্রতিবাদ না জানালে বিবেকের কাছে লজ্জিত হব। তাই জ্বালানী ও অর্থ মন্ত্রীর একই সুরে বক্তব্যের পর পর জনমনে দেখা দিয়েছে চরম হতাসা আর সন্দেহ। বলতে দ্বিধা নেই কোন গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষার জন্যই কি আজ বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে আর গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেছেন, গ্যাস অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। রান্নাবান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার অপচয়। তাই রান্নার কাজে পাইপলাইনে আর গ্যাস ব্যবহার চলবে না। পাশাপাশি বিদ্যমান গ্যাস সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হবে। এ নিয়ে আন্দোলন-চিৎকার করে কোনো লাভ হবে না। গতকাল শনিবার পেট্রোবাংলা মিলনায়তনে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বার বার উচ্চারন করেছেন গ্যাস শিল্প- কারখানায় ব্যবহার করা হবে। এটা এত মূল্যবান যে এইটা দিয়ে ভাত, ডাল রান্না একেবারেই একটা অপচয়। ঘরের রান্না-বান্নার সামগ্রী হিসেবে এটার ব্যবহার চলবে না। এটা একদম বাদ দিয়ে দিতে হবে। তার বিকল্প উপায় আছে। সিলিন্ডার, আমরা এটিকে একদম সহজ করে দেব।' : অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহারে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। এলপিজি ব্যবসা মনোপলি হতে দেয়া হবে না। এলএনজি সরকার আমদানি করতে যাচ্ছে। এ গ্যাস শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হবে। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তরল গ্যাস এলএনজি আমদানি এবং সমুদ্র ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করার তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে বাসাবাড়িতে ব্যবহার হয় মাত্র ১২ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ পায়। গ্যাসের মজুদ সীমিত হয়ে আসছে এবং শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হলে অর্থনৈতিকভাবে তা বেশি লাভজনক, এই বিবেচনায় এরই মধ্যে বাসাবাড়ির নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় বাসাবাড়ির বিদ্যমান গ্যাস সংযোগ থেকেও সরে আসার আভাস দেয়।

এহেন অবস্থায় মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ জাতির জন্য সাধারন বেতনে চাকুরিজীবীদেরর জন্য, ঘাম ঝড়ানো খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য অন্তত একবারও কি ভেবে দেখেছেন তাদের মাসে কত টাকা খরচ করতে হবে? যেখানে ভাতের যোগার করতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে বিকল্প প্রস্তাব মরার উপর খড়ার গাঁয়ের মত চেপে বসা বলে আমি মনে করি। হ্যা মন্ত্রী মহোদয়ের প্রম্তাব আমরা গ্রহন করব যদি বিকল্প পথে রান্নার খরচ কম হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্নরকম।

এলএনজি বা এলপি গ্যাসের ব্যবহার গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক জনগোষ্ঠির কিছু অংশ চা গড়ম বা বাচ্চার দুধ গড়মের কাজে কম বেশী ব্যবহার করে আসছে।তাদের সমীক্ষা মতে ভাত- তরকারী রান্না করার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রতিমাসে খরচ পরবে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এখন প্রশ্ন মাসিাক আট হাজার টাকা মাইনে পাওয়া চাকুরীজীবির যদি তিন হাজার টাকা গ্যাস বাবদ চলে যায় বাকী পাঁচ হাজার টাকায় বাচ্চাদের পড়াশোনা, কোচিং ফি খাবার ও চিকিৎসা করা কি সম্ভব? সম্ভব না।তাহলে বিনীত অনুরোধ জনগনকে ক্ষেপিয়ে আরাম কেদারায় বসে থাকা যাবে না।টেনে হ্যাছরে মাটিতে নামিয়ে আনলে তখন কুঝবে কত ধানে কত চাল।

দেশের বিভাগীয় শহর,  জেলা শহর ও কিছু কিছু থানা শহরে প্রাকৃতিক গ্যাসের নির্ভরতা প্রবল। তবুও বলছি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও আপনার গাণিতিক হিসাব বন্ধ করুন। নতুবা জনতার অন্তর দহনে আপনিও জ্বলে তৈরি হতে পারে রান্না-বারার কাজ।