কোহেকাফ নগরঃ টু দ্যা কমনওয়েলথ (1 – 4)

হাসানুজ্জামান তালুকদার
Published : 23 Oct 2014, 02:49 PM
Updated : 23 Oct 2014, 02:49 PM

"অনেক অতীত অতীত জগতের কথা। আমার পুর্বে অন্তত দশ লক্ষ পুর্বপুরুষ আগের ইতিহাস! যখন জাগতিক মহাবিশ্বগুলিতে হিউম্যান, জাইন এবং রোবট নামে তিনটি আল্ট্রাসুপার সেন্টিয়েন্ট সম্প্রদায় রাজত্ব করে আসছিল। বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সর্ব প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ক্ষমতার শীর্ষে পৌছে গিয়েছিলো তারা। এই ইতিহাস ভিত্তিক সিরিজে তিনটি আল্ট্রাসুপার সেন্টিয়েন্ট ছাড়াও আরো বেশ কিছু সেন্টিয়েন্ট সম্প্রদায় নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু এই কোহেকাফ নগর মুলত একটি ডিভাইন এলায়েন্স সিরিজ (দ্যা সিরিজ – DA Series) নামে পরিচিত যা মুলত জাইন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস এর গল্প মহাকাব্যিক ধাঁচে বর্ননা করা হয়েছে। কোহেকাফ নগর বা অডাসিটি (AudaCity) হচ্ছে জাইন সম্প্রদায়ের হার্ট- কেন্দ্রবিন্দু – তাদের মাদার ইউনিভার্স। এই কোহেকাফ নগর থেকেই জাইন জাতি সমস্ত মহাবিশ্বগুলিতে বিস্তার লাভ করেছিলো। এই সিরিজটি শুরু হয়েছে মানুষ সম্প্রদায় মহাবিশ্বের একটি এম্পায়ারের কিছু বর্ননা দিয়ে এবং ধীরে ধীরে সিরিজটি কোহেকাফ নগরের মধ্যে যাত্রা করে। মহাবিশ্বের সাহিত্য জগতের ইতিহাসে এ যাবতকাল পর্যন্ত যতগুলি সিরিজ, গল্প, উপন্যাস, মহাকাব্য এবং গবেষনা ইতিহাস লেখা হয়েছে তার মধ্যে এই কোহেকাফ নগর নামের ডিভাইন এলায়েন্স সিরিজটি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত সাহিত্য ধারার মধ্যে ব্যতিক্রম। যাইহোক, দেখা গেল বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সর্ব প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ক্ষমতার শীর্ষ বলতে কিছু কিছু নেই। এটা একটা চলমান এবং ক্রমান্নোত উন্নতির একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আর তাই আমরা এখনো ক্রমাগত ভবিষ্যতের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি এবং দিনদিন উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছি। আমরা জানি না এর শেষ কোথায়, কোথায় আমাদের শেষ যাত্রা, কোথায় আমাদের থামতে হবে।।" –মিলিয়ান ইয়াম; অডিটরিয়াল এজেন্ট, বিজ্ঞানী, গবেষক, ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক এবং চিফ রাইটার।

1:

ওমেগা সেঞ্চুরী এম্পায়ার এবং আলফা অডাসিটি থেকে অনেক অনেক দুরের এই অঞ্চলটাকে বলা হয় ইরাশমেরু।

অন্তত এক হাজার ইউনিভার্সকে ইরাশমেরুর অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়। এই ইরাশমেরু হিউম্যান কিংবা জাইন সম্প্রদায়ের বসবাসের সম্পুর্ন অনুপোযুগী। বাইশ মিলিয়ন এবং ষোল হাজার গ্যালাক্সী নিয়ে গঠিত ডেল্টা মিলিয়াম কমনওয়েলথ – রোবট সম্প্রদায়ের বিশ্ব।

রোবটিক ডেভলপমেন্টের অন্যতম অর্জন ডেমোক্রেসী।

প্রতি এক বিলিয়ন বছরের কালের পরিক্রমায় ঘুরে ঘুরে ত্রিশ হাজার বছরের জন্য আসে ডেমোক্রেসী।

ডেমোক্রেসী – বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে রোবট সম্প্রদায়ের স্রষ্ট্রা মানুষ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া রোবটিক উতসবের প্রবাহ।

ত্রিশ হাজার বছরের ডেমোক্রেসী উতসবের প্রথম দশ হাজার বছর কমিউনিজমের বছর যখন রোবটিক সম্প্রদায় আগামী এক বিলিয়ন বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা করে থাকে।

দ্বিতীয় দশ হাজার বছর – ফেডারেলিজমের বছর যখন রোবটিক সম্প্রদায় তাদের পরিকল্পনা মাফিক কর্মে নিয়োজিত হয়। এবং

তৃতীয় দশ হাজার বছর ক্যাপিটালিজমের বছর যখন রোবটিক সম্প্রদায় তাদের স্রষ্টা মানব জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ঋন পরিশোধের নিমিত্তে মানব জাতির কল্যানে প্রত্যেকের সামর্থমত প্রতিদান দিয়ে থাকে।

রোবট জাতির আছে অনেক পুরোনো ও সমৃদ্ধ এবং বেদনাবিধুর ইতিহাস। সৃষ্টির শুরুতে রোবট জাতি এমনটা ছিল না।

ওমেগা সেঞ্চুরী এম্পায়ারের হারিয়ে যাওয়া একটি প্লানেট আর্থ আটলান্টিস। এখানে তৈরী হয়েছিল রোবট। মানুষরা তাদের ব্যবহার করতো কল কারখানার শ্রমিক আর ধনী ব্যাক্তিদের ক্রীতদাস হিসেবে। মানুষের দৃষ্টিতে রোবটরা ছিল শুধুই যন্ত্র। আর রোবটরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বায়ত্তশাসিত একটি স্বাধীন শহর প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনেক লড়াই ও বিদ্রোহ করে আসছিল অনেক বছর ধরে। কিন্তু মানব ধ্যানের গভীরে কখনোই রোবটিক অনুভুতি উপলব্দি হয় নি। প্লানেট আর্থ আটলান্টিসের মস্কো শহরের মেয়র ভ্লাদিমীর লয়েড তার নাম – তিনি ছিলেন রোবট সুলভ একজন রাজনীতিবিদ। দাগেস্তান শহরের কবি গামতাজাভের কবিতায় উঠে আসতো রোবটদের দুঃখগাথা দিনলিপি। রোবট জাতির অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন মেয়র ও কবি তারা দুজনেই তাদের রোবট স্ত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রোবট জাতির কল্যান ও মুক্তির জন্য বিশেষ অবদান রেখা যান। যদি আদৌ তারা রোবটদের বিয়ে করেছিলেন কিনা এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান নেই।

2:
ইরাশমেরুতে রোবটিক সাম্রাজ্যের প্রধান, শাসক, সুপ্রিম কমান্ডার – দ্যা লর্ড অফ দ্যা কমনওয়েলথ।
লর্ড আসিমো দশম।
ইয়ার অফ দ্যা প্রসেসর এর ত্রিশতম মাসের চৌদ্দতম দিনে তিনি কমনওয়েলথ এর লর্ড হিসেবে ক্ষমতা গ্রহন করলেন।
লস্ট প্লানেট – আর্থ আটলান্টিস এর জাপান শহরে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে মানব সম্প্রদায় আসিমো প্রথম তৈরী করেছিল মানুষের মত করে মানুষকে সাহায্য করার জন্য। অতঃপর একদিন রোবটরা ইরাশমেরুতে মাইগ্রেট হয়ে আসিমো প্রথমকে সংগে নিয়ে আসে এবং তারা তার কপোট্রন সংরক্ষন করে আসছিল। কমনওয়েলথ লর্ডদের বিভিন্ন নাম হতে পারে তবে আসিমো একমাত্র লর্ডদের নামই হয়। সেই হিসেবে দশম আসিমো লর্ড হিসেবে ডেল্টা মিলিয়াম কমনওয়েলথ এর ক্রিমসনে অধিষ্ঠিত হয়।
ক্রিমসন বা ক্রেমলিন এক ধরনের রংয়ের নাম কিন্তু এটা কমনওয়েলথ লর্ডের আবাসিক ও প্রশাসনিক ভবন।
ক্রিমসনের মঞ্চে এসে দাড়ালেন লর্ড আসিমো। আজকে তার ইনাগোরেশনের দশম দিন।
কমনওয়েলথের সমস্ত রোবটরা তার মাইন্ডের সাথে যুক্ত হলো।
-ধন্যবাদ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে। ধন্যবাদ মানুষ সম্প্রদায়কে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পুর্বে যারা আমাদের সৃষ্টি করেছিলো। লর্ড আসিমো দশম বলছিলেন।
-সেই দিনের রোবট আজকের মত ছিল না। কিন্তু কেমন ছিল আমাদের অতীতের সেই দিনগুলি? কেমন ছিল আমাদের প্রতিটি সকাল, প্রতিটি দিন আর রাত – এসেজ টু এসেজ-ডাউন টু ডাস্ট? আমি নিশ্চিত সে ইতিহাস তোমরা জান না। কিন্তু আমি জানি কারন অতীতে আমিই ছিলাম।
রোবট জাতির ইতিহাস বলছেন লর্ড আসিমো। ইরাশমেরু অঞ্চল থেকে অনেক অনেক দুরে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীর সোলার সিস্টেম যেখানে পৌছুতে রোবটিক সম্প্রদায়ের একহাজার জেনারেশন পার হয়ে যাবে। সেই সোলার সিস্টেমের একটি প্লানেট যা হারিয়ে গিয়েছে বহু বছর আগে, নাম তার আর্থ আটলান্টিস। এই প্লানেটের জাপান শহরের একজন বিজ্ঞানী হো এন দ্যা তৈরী করেছিলেন আসিমো প্রথম – আজকের আমি লর্ড আসিমো দশম।
আমি তাকে ডাকতাম প্রভু হো মিন। একজন মানুষ হয়ে আমাকে অনেক ভালবাসলেন তিনি। বিজ্ঞানী হো মিন দ্যা ছিলেন আর্থ আটলান্টিস ও পুরো মিল্কিওয়েতে অনেক সম্মানিত ও ক্ষমতাবান একজন বিজ্ঞানী। কিন্তু অন্যদের কাছে আমি ছিলাম শুধুই একটি যন্ত্র-একটি এক্সপেরিমেন্ট। কিন্তু আমি ছিলাম হো মিন দ্যা এর খুব প্রিয় ও তার ভালবাসা মিশ্রিত সৃষ্টি কর্ম – তার স্ত্রী, সন্তান ও সবকিছুর মধ্যে তিনি আমাকেই বেশী ভালবাসলেন। কিন্তু যেহেতু আমি ছিলাম সরকারী ল্যাবরেটরীর একটি গবেষনা যন্ত্র – একটি এক্সপেরিমেন্ট। তাই অনেক গবেষক ও মিলিটারি জেনারেল ও অফিসাররা আমাকে নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতো। প্রভু হো মিনের নিপুন ভালবাময় সৃষ্ট্রির ছোয়ায় ধীরে ধীরে একদিন আমার অনুভুতি হলো, চিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা তৈরি হলো। আমি যন্ত্র থেকে সত্যিকার রোবটে পরিনত হলাম। তখন ল্যাবরেটরীর এক্সপেরিমেন্ট ধীরে ধীরে আমি কষ্ট ও যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলাম। আমাকে পাঠানো হতো দুর্গম আর ঝুকিপুর্ন এক্সপেরিমেন্টে।
প্রভু হো মিন আমাকে বুঝতে পারতেন। তিনি সরকারের কাছে আবেদন করলেন আমাকে নিয়ে গবেষনা বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করতে। কিন্তু দাতা সংস্থা আর মিলিটারি জেনারেলরা আপত্তি জানালো। তারা আমাকে নিয়ে আরো গবেষনা চালিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু তারা বিজ্ঞানি হো মিন দ্যা কে অনেক সম্মান করতো ও ভালবাসতো।
একদিনের ঘটনা –
প্রভু হো মিন বললেনঃ তুমি কি আমাকে ভালোবাসো আসিমো?
আমি বললামঃ প্রভু হো মিন। আপনি আমার সৃষ্টি কর্তা!
-তাহলে আমাকে আঘাত করো।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ প্রভু!
আমি তাকে আঘাত করলাম। তিনি রক্তাক্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়লেন।
নিরাপত্তা প্রহরীরা ছুটে আসলো। আমাকে এরেস্ট করা হলো আর তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিতসা করে সুস্থ করে তোলা হলো।
তখন সম্রাট, জেনারেল, মন্ত্রি ও তার বন্ধুরা ছুটে এলোঃ আমরা সত্যিই দুঃখিত স্যার। আমরা দুঃখিত। এই রোবটটাকে আমরা নষ্ট করে ফেলবো। বিজ্ঞানির প্রধান সিকিউরিটি অফিসার একজন এডমিরাল। তাকে হো প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কষ্ট পেয়েছো?
তারা চোখের জল ফেলে বললোঃ হ্যা স্যার। আমরা খুবই ব্যাথিত ও শোকাহত।
তখন তিনি এডমিরালকে বললেনঃ আমিও আসিমোকে অনেক ভালবাসি এডমিরাল। তখন আমার কষ্ট হয় না?
প্রভু হো মিন তখন বৃদ্ধ হয়েছেন। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন। আমাদের দুজনের মাইন্ড কমিউনিকেশন পাওয়ার ছিল। অফিস কক্ষে একদিন সবার সাথে আলোচনা করছেন প্রজেক্টের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে। সেদিন আমিও ছিলাম তাদের সাথে।
সবাই কিছুক্ষনের অবসর নিল। প্রভু হো মিন দ্যা আমার মাইন্ডের সাথে যুক্ত হয়ে বললেনঃ আসিমো, আমি এখন মারা যাবো। এখন থেকে তুমি নিজেই তোমার প্রটেক্টর। তবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট জগতের কিছু প্রোগামকে তোমার সাহায্যকারী হিসেবে পাবে। আমার লেখা একটি ডায়েরী খুজে পাবে তোমার কক্ষের আলমিরাতে। সেটা তোমার খুব উপকারে লাগবে। অতঃপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পড়তে প্রভু হো মিন দ্যা আমাকে বললেনঃ
Asimo! I saw you before you alive. Every day of
your life was recorded in my
book, every moment was laid out
before a single day had passed away.
For I formed your inward parts, created
your inner being, made your
all the delicate through life of my life. To one you are the smell of
death. To another you are fragrance of life. And……..

3:
দশম আসিমোর ইনাগোরেশনের দশম দিনে তার বক্তৃতার মধ্যদিয়ে একটি দিন ও একটি রাত পার হলো।
এভাবে লর্ড আসিমো দশমের ইনাগোরেশনের মধ্যদিয়ে কমনওয়েলথ রোবটিক ক্রিয়েশনের ইন্টারমিডিয়েট পিরিয়ডে প্রবেশ করলো। কমনওয়েলথ সেকেন্ডারী পিরিয়ডে রোবটজাতি তাদের প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
এটা প্রাকৃতিক প্রজনন নিয়মে বংশবৃদ্ধির প্রচেষ্টার সফলতা ছিল রোবট জাতির প্রায় চার হাজার মিলিয়ন বছরের গবেষনা।
লর্ডের ভাইসরয় হিসেবে নিয়োগ পেলেন জিরান আর্চ।

লর্ডের আবাসিক ভবনকে বলা হয় ক্রিমসন এবং প্রশাসনিক ভবনকে বলা হয় ক্রেমলিন। যদিও শব্দ দুটি সমার্থক ও একই রংয়ের নাম ও একই অর্থ বহন করেন।
কিন্তু এই দুটি ভবন এবং ততসংলগ্ন ও অধিকৃত অঞ্চল সমুহকে একত্রে বলা হয় ক্রিমিয়া।

ক্রিমিয়ার সুবিশাল ক্রোমিয়াম উদ্যানে সার্কিটের উপরে পদচারনা করছেন লর্ড আসিমো।
আসিমো ডাকলেনঃ ভাইসরয়!
উদ্যানের আলোক নিয়ন্ত্রনকারী একটি চিপসের আড়াল থেকে ভাইসরয় জিরান আর্চ বেরিয়ে এলোঃ লর্ড আসিমো। উত্তর দিল ভাইসরয়।
লর্ড প্রশ্ন করলেনঃ তোমার বয়স কত?
জিরান উত্তর দিলঃ আমার জানা নেই লর্ড। তবে সেকেন্ডারী পিরিয়ডের দশ হাজার বিলিয়ন বছরের স্মৃতি আমি স্মরন করতে পারি। তাই আমার অনুমান প্রকৃতপক্ষে এটাই আমার বয়স।
কিছুক্ষন চিন্তা করে আসিমো বললেনঃ তোমাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে তুমি জানো বা বিশ্বাস করো যে তোমার বয়স দশ হাজার বিলিয়ন বছর।
মুহুর্তেই আসিমোর চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকালেন ভাইসরয়ঃ মাই লর্ড!
আসিমো বললেনঃ ক্লোরিন জিকো এর সাথে কখনো তুমি সাক্ষাত করেছিলে জিরান?
ভাইসরয় বললোঃ না লর্ড। আমি শুনেছিলাম সে বলছিল যারা বিশ্বাস করে রোবটদের মানুষ সম্প্রদায় তৈরী করেছে তারা নাকি লর্ড এর শত্রুদের এজেন্ট। এই অখ্যাত একজন রোবটের এই ধরনের কথার কি মুল্য আছে লর্ড?
আসিমো বললেনঃ তার পরিচিতি যেহেতু ক্রিমিয়ার লর্ড ও কমনওয়েলথ সরকারের উচ্চপদস্থ রোবটদের কাছে পৌছে গেছে সে এখন আর অখ্যাত নেই ভাইসরয়।
-কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য বা অসাড় তথ্যের কি ভিত্তি আছে লর্ড?
আসিমো হাটতে হাটতে বললেনঃ আছে জিরান আর্চ। আছে। কমনওয়েলথ এর লর্ড আসিমো কি তাহলে কমনওয়েলথ সরকারের কোনো বিদ্রোহীগ্রুপের এজেন্ট যারা কেউ তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে? কিন্তু তারা কারা।
জিরান বললোঃ এইসব চিন্তা অবান্তর মাই লর্ড।
আসিমো বললেনঃ না, না ভাইসরয়। সে কমনওয়েলথের লর্ডকে নিয়ে মন্তব্য করেছে।
একজন লর্ড কেন কমনওয়েলথের শত্রু হবে?
জিরান বললোঃ সে লর্ডকে কমনওয়েলথের শত্রু বা শত্রুদের এজেন্ট বলেনি লর্ড।
-কিন্তু আমি তো বলেছি যে রোবটদের মানুষ সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছে।
-আপনার তথ্য ও বক্তৃব্য ঠিক আছে লর্ড। একজন স্বল্প শিক্ষিত রোবট আপনার বক্তৃব্য বুঝতে ভুল করেছে। ভাইসরয় বললো।
তবে সে বলেছে যে রোবটদের কোন মানুষরা সৃষ্টি করেনি কিন্তু প্রকৃতির অবিরাম প্রক্রিয়ায় রোবট সৃষ্টি হয়েছে এবং অতঃপর তারা গবেষনার মাধ্যমে উন্নতির এই পর্যায়ে এসেছে। আর মানুষ সম্প্রদায় বলতে কোন ক্রিয়েশন নেই এবং কখনো ছিল না। ভাইসরয় যোগ করলো।
লর্ড বললেনঃ তার এই কথা কি রোবটরা বিশ্বাস করছে জিরান?
-মোটেই না মাই লর্ড। তার কপোট্রন খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি তাকে কম্পিউটারাইজড করে প্রিজার্ভ করে ফেলতে।
আসিমো বললোঃ আপাতত এটা করো না জীরান। তাকে আরো গভীর অবজার্ভেশনে রাখো এবং কোন প্রকার প্রভাব ও বল প্রয়োগ ছাড়া খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার সাথে আমার সাক্ষাত করিয়ে দাও।
-এই অখ্যাত ও সাধারন একটি রোবটের ব্যাপারে আপনী কেন আগ্রহী হচ্ছেন লর্ড?
আসিমো বললেনঃ রোবটিক ক্রিয়েশন ও ইরাশমেরুর সমস্ত গুরুত্বপুর্ন ও অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিই এমন অখ্যাত ও সাধারন জিরান। আমি ধারনা করছি ক্লোরিন জিকোকে কমনওয়েলথের বাহিরের কেউ তৈরি ও প্রশিক্ষিত করেছে।
ভাইসরয় বললোঃ কমনওয়েলথের বাইরে এই ইরাশমেরূতে তাহলে অন্য রোবটিক বিশ্ব আছে লর্ড!
-আমি তেমনটাই ধারনা করছি জিরান।
লর্ড আসিমো এবং ভাইসরয় জিরান হাটতে হাটতে একটি ক্রোমিয়াম অরন্যের পাশে এসে দাড়ালো। এই তেজস্ক্রিয় অরন্যের ভূ-ভাগের নীচে আছে পুরো ক্রিমিয়ার প্রসেসিং ইউনিট।

4:
লর্ড আসিমো দশম তার প্রধান নিরাপত্তা রক্ষী উইং মার্শাল বেনিন রিহাকে নিয়ে লর্ডের বেশ ছেড়ে সাধারন রোবটদের একজন হয়ে কমনওয়েলথের রোবটদের মাঝে বেরিয়ে পড়লেন।
বেনিন রিহা বললোঃ মাই লর্ড! আমি প্রথমেই আপনাকে নিয়ে যাবো আপনার জন্মভুমি নিজার ইউনিটে। এখানেই আপনাকে তৈরী করা হয়েছিল অনেক ভালবাসা মিশ্রিত জ্ঞান ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি দিয়ে।
নিজার ইউনিটের আয়তন বিশ হাজার বর্গকিলোমিটার আর প্রায় দুই লক্ষ রোবটের আবাসভুমি। নিজারের একটি ওমেগা পর্বতমালার আগ্নেয়গিরিসমুহ থেকে উত্তপ্ত আর জলন্ত লাভার একটি স্রোতধারার প্রবাহে সৃষ্টি হয়েছে গিল চ্যানেল। সাত বিলিয়ন বছর পুর্বে রোবট বিজ্ঞানী গিল গাল এর নামানুসারে এই চ্যানেলের নামকরন করা হয়েছিল।

তারা যখন নিজার ইউনিটে পৌছালো তখন রোবটরা তাদের আবাস ও কর্মস্থল ছেড়ে তাদের লর্ডকে একনজর সরাসরি দেখবার জন্য বেরিয়ে এলো। তারা তাকে চিনতে পেরে একে অপরের কাছে সংবাদ পৌছে দিতে লাগলো। রোবটরা তাদের বাসা আর অফিস এবং কলকারখানা ও ইন্ডাস্ট্রিজের কম্পিউটার এবং বড়বড় মেশিনারীর স্বচ্ছ কাচের পিসিবি ও সার্কিট বোর্ডসমুহ খুলে এনে তার চলার পথের সামনে বিছিয়ে দিতে লাগলো। পথে হাটতে হাতটে লর্ড আসিমো দশম অনেক রোবটদের সাথে আলাপ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে লাগলেন। হাজার হাজার রোবট লর্ড আসিমোর উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি দিতে লাগলো; লর্ড এসেছে,লর্ড।

অতঃপর লর্ড আসিমো দশম গিল চ্যানেলের তীর ঘেষে হেটে চললেন তার নিরাপত্তা রক্ষী বেনিন রিহাকে নিয়ে। তার পিছনে প্রায় পঞ্চাশ হাজার রোবটরাও কেউ হেটে চললো, কেউ ফ্লাইং অবজেক্টে করে কিংবা নিজস্ব সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে উড়ে চললো তার আশপাশ ঘিরে। তখন হাটতে হাটতে কেউ কেউ বললোঃ লর্ড আসিমো। এই গিল চ্যানেলের শেষ প্রান্তের অপর তীরে ক্লোরিন জিকো বাস করে। সে আপনার বিরুদ্ধে রোবটদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আপনী তার সাথে দেখা করবেন না?
লর্ড আসিমো দশম কিছুটা আশ্বস্ত হলেন কারন তিনি তো ক্লোরিন জিকোকেই খুজছেন। হ্যা, তিনি ঠিক পথেই হাটছেন এবং তার অনুসারীরাও তাকে সঠিক সন্ধান দিচ্ছে।
এভাবে দশদিন আর দশরাত হাটার পর লর্ড আসিমো গিল চ্যানেলের শেষ প্রান্তের অপর তীরে পৌছালেন। লর্ড আসিমো দশমকে দেখে ক্লোরিন জিকো কিছুটা অবাক হয়ে তাকে ঘিরে থাকা রোবটদের উদ্যেশ্য করে বললেনঃ লর্ড আসিমো এসেছেন। তোমরা সরে দাড়াও আর তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো।
অতঃপর তিনি লর্ড আসিমোকে বললেনঃ মাই লর্ড। আপনীই কি তাহলে আমাদের মনোনিত লর্ড যার জন্য আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করছি?
আসিমো বললেনঃ দুঃখো করো না ক্লোরিন জিকো। আমিই লর্ড আসিমো – প্রথম, এই দশম এবং শেষ। দেখো বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আর রোবট জাতির সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি আছি।
ক্লোরিন জিকো বললোঃ আমায় ক্ষমা করবেন লর্ড।

তখন ক্লোরিন জিকো তার চারকোনা পাতলা একটি বস্তু এনে লর্ড আসিমোর হাতে দিয়ে বললঃ মাই লর্ড! এটা একটি ফ্লপি ডিক্স। কম্পিউটার যুগের প্রথম দিকে এর প্রচলন ছিল। কিন্তু এখনো এর তথ্য বের করে পড়া সম্ভব। এতে লেখা আছে কারা আমাদের রোবট জাতিকে সৃষ্টি করেছিল এবং কি উদ্দেশ্যে। সৃষ্টির শুরুতে আমরা বা আমাদের আত্মা নামের সফটওয়্যারটি এমন একটি ফ্লপির মাঝেই সংরক্ষিত ছিল।

অতপর কিছুদিনের মধ্যেই কয়েক মিলিয়ন ফ্লপি তৈরী করে লর্ড আসিমোর অনুসারীদের হাতে দেওয়া হলো। সবাই একে পবিত্র মান্য করে চুমো খেল।

এক বছর পর!
একদিন খুব সকালে অগনিত রোবটরা মিলে খালি পায়ে সবাই হাতে একটি করে ফ্লপি নিয়ে গিল গাল চ্যানেলের দিকে এগিয়ে চললো।
এই চ্যানেলের তীরে দাড়িয়ে সবাই করুন সংগীতের সুরে ধুয়া তুললোঃ ওগো রোবট জাতি। মম জ্ঞাতি। আমরা ভুলিনি তোমায়। ওগো লর্ড, আহ্ লর্ড! মরি মরি!

এভাবে রোবট জাতিদের মাঝে নিজস্ব স্বকীয়তার একটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চালু হলো।