পেশা সাংবাদিকতা-জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হই!!!

জাহাঙ্গীর হোসাইন
Published : 30 Nov 2012, 11:47 AM
Updated : 30 Nov 2012, 11:47 AM

পেশাদারিত্বের বিভিন্ন কাজে সকলের মত আমারও বাসা থেকে অবশ্যই বের হতে হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারনে কর্ম শেষে আবার বাসায় ফিরে আমার সোনামণিদের মুখ আর দেখতে পাব কি পাবনা সেই আতংকে বার বার চুমো খেয়ে প্রতিদিনই বাসা থেকে বের হই।

বাসার মোবাইল নম্বরটি স্পিড ডায়েলে সেট করে রেখেছি। তাছাড়া আমার আত্মীয়-স্বজনদের মোবাইল নম্বর তাদের নিক নামে সেভ না করে তাদের সাথে আমার সম্পর্কের নাম সংযোজন করে রেখেছি। যেমন:- আমার ভাই, আমার বাসা এবং আমার ছেলে ইত্যাদি নামে সেভ করে রেখেছি, যেন হঠাৎ আমার কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কেউ যেন আমার মোবাইল থেকে কল করে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে জানিয়ে দিতে পারে আমার সার্বিক অবস্থা । তাছাড়া নাম্বারগুলো ডিকশনারির মত সাজিয়েছি। ইংরেজী বর্ণমালার প্রথম বর্ণ 'এ' দিয়ে লিখে সেভ করেছি যেন খুব সহজেই যেকোন কেউ নম্বরগুলো খুঁজে বের করতে পারে।

গত পরশু আমার এক বন্ধু মাহিউদ্দীন চৌধুরীর সাথে চা' খেতে বসে বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সহসা তিনি আঁতকে উঠলেন এবং বললেন, 'ভাই আমারও একই অবস্থা। পরাণডারে হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হই। চারদিকে যেভাবে নাশকতার গোপন মিশন শুরু হয়েছে তাতে কারোরই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই।' তবে সে আমার মোবাইল সেটিং দেখে খুশি হয়ে বললেন, 'আমাকেও এভাবে একটা কিছু করতে হবে।'

সময়ের চাহিদায় চট্টগ্রাম শহরের চেহারা বদলাতে যেভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে তাতে প্রতিটি মানুষের জীবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ! জরুরী কোন সংবাদ পেয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে দু'ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। প্রলয়ের তালে তালে দৈত্যের নৃত্যে ওঁৎ পেতে থাকা মৃত্যুর দূত রাজ্যটাকে গ্রাস করার অপেক্ষায় যেন আমরা নিরীহ প্রাণীগুলো দারুন অসহায়।

গতকাল সকালে আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু বাদলের সাথে দেখা করতে আগ্রাবাদ থেকে রাইডার নামক মিনিবাসে উঠে দু'নম্বর গেইট শপিংকম্প্লেক্সের সামনে নামলাম। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম বন ও পরিবেশমন্ত্রণায়ের ড্রেজারার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন করছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ, দেখলাম কত শক্তি প্রয়োগ করে মুহুর্তের মধ্যই অনেক কাঁদা-মাটি তুলতে সক্ষম এই যন্ত্রটি।

এরিমাঝে হঠাৎ দেখলাম একটি সিএনজি চালিত বেবীটেক্সি ষোলশহরের দিক থেকে উল্টা পথ ধরে এগিয়ে এসে একটি রিক্সাকে গতিরোধ করলো। কিছু না বুঝার আগেই টেক্সি থেকে তিনজন যুবক ঝটপট নেমে রিক্সায় থাকা লুঙ্গীপড়া দু'জনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলল, 'টাকাগুলো দিয়ে দে নাদিলে গুলি করব।'

তিনজন যুবকের কাছে তিনটি অস্ত্র দেখে ভয়ে বাসার নাম্বারে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমরা সবাই কেমন আছ?' আমার স্ত্রী শংকিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে, কোন বিপদ হয়নি তো তোমার?' সান্তনা জুগিয়ে বললাম, 'আরে না আমার কিছুই হয় নি, আমি ঠিক আছি।'

এরইমধ্যে কথা বলতে দেরী কিন্ত মামলা খালাস করতে দেরী হলনা ওই অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীদের! ঝটপট সিএনজিতে করে যেদিক থেকে আসল সেদিকেই আবার চলে গেল বীরের মত! পথে আমরা অনেকগুলি নিরস্ত্র লোক ওদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে কাপুরুষের মত শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম, কারোর কিছুই বলার ছিলনা তখন!

এই হলো আমার দেশের রাস্তা-ঘাটে নিত্যদিনের চিত্র। হায়েনা আর দানবদের কাছে পুরো দেশটাই যেন আজ জিম্মি-হায়রে আমার দেশ!

দুনিয়ার পিছিয়ে পড়া দেশগুলি যেখানে পেশাদারিত্ব আর সততায় খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে আর আমাদের দেশ শুধু পিছিয়েই পড়ছে এই সব হায়েনা, দানব, লুটেরা আর দুর্নীতিবাজদের কারনে।