ভুটানে মন টানে

জামাইল বশীর (জেবি)
Published : 3 April 2017, 08:10 PM
Updated : 3 April 2017, 08:10 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী আমরা সাবেক শিক্ষার্থীরা নিয়োমিত ক্যাম্পাসে আড্ডা দিই। সেই ধারাবহিকতায় মাস ছয়েক আগে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আমাদের ৩৩ ব্যাচের "ভূগোলের গোল আড্ডা"-য় বন্ধু মহি প্রস্তাব দিলো একটা ট্যুর আয়োজন করার। আর অন্য একদিন বন্ধু শিমুল বলেছিল ফ্যামিলি সার্ক ট্যুর আয়োজন করতে। মহি ও শিমুল দু'জনের প্রস্তাবই মাথায় ছিলো। কয়েকমাস বয়সি শিশু পুত্রের কারণে শিমুল না যেতে পারলেও মহি লেগে ছিলো…. বিশেষ করে বিয়ের পর স্ত্রী সাঞ্জু'কে (বাংলা, ৩৭ ব্যাচ) নিয়ে তার বাইরে যাওয়া হয়নি। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক নানা বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমি আর মহি সিদ্ধান্ত নিলাম দু'জনেই স্বস্ত্রীক দার্জিলিং যাব। ততক্ষণে আরো দুই জোড়া বন্ধু দম্পত্তি নিশান-জুয়েনা আর রিপন-আইভি তাদের সন্তানসহ আমাদের টিমে যোগ দেয়ায় দুই শিশু সদস্যসহ আমাদের টিম মেম্বার এখন দশ। শিশুদুটি ছাড়া আমরা সবাই জাহাঙ্গীরনগরীয়ান…আর একটু নির্দিষ্ট করলে সাঞ্জু (বাংলা ৩৭), পাপিয়া (ভুগোল ও পরিবেশ ৩৬) ছাড়া আমি, মহি, নিশান-জুয়েনা, রিপন-আইভি সবাই ভুগোল ও পরিবেশ ৩৩ ব্যাচের।

ট্যুরের জন্য ভিসা প্রসেসিং, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ, পরিকল্পনা, বাজেট, যাতায়াত, থাকা ও খাওয়ায় যাবতীয় সবকিছু ব্যবস্থার দায়িত্ব পড়ল আমার কাঁধে। বিসমিল্লায় গলদ বাধল ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসায়। সেই ই-টোকেনের ঝক্কি ঝামেলা আর না হয় শ্যামলী'র ভারতীয় ভিসা সেন্টারে গভীর রাতে লাইন দিতে হবে। আমি যখন ই-টোকেন না গভীর রাতের লাইন ধরার দুঃচিন্তায় মরিয়া তারমাঝে মহি বলল ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি কাজে লাগাতে। স্বাধীনতা দিবস মনে হতেই ভুটানে'র কথা মাথায় আসল।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশ ভুটান (যদিও বিতর্ক আছে ….. ভুটান না ভারত)। ভারতের অনেক জায়গায় ঘোরা হলেও ভুটানে যাওয়া হয়নি। পড়ালেখা, ডকুমেন্টারী আর ভুটান ফেরত মানুষের কাছ যা জেনেছি তা হল…. পুরোটায় পাহাড়ী ভুটান খুবই শান্তিপ্রিয়। সেই ভুটান দেখার বাসনা দীর্ঘদিনের। আরে আমরাতো ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা নিয়ে ভুটান যেতে পারি আর আসা যাওয়ার মাঝে ভিসায় যে তিন দিনের সময় থাকে সেই সময়ে দার্জিলিংও যেতে পারি।

সবাই একপায়ে রাজি। এরপর ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ বিশেষ করে বর্ডার পর্যন্ত বাসের রিটার্ন টিকিটসহ ভারতীয় ভিসা সেন্টারে সাবমিট করা হলে কয়েক দফায় যাত্রার একদিন আগে সবগুলি পাসপোর্ট ফেরত পেলাম….. কাঙ্খিত ভিসাসহ। যাত্রাশুরুর কয়েক ঘন্টা আগে আর এক বিপত্তি, পাপিয়া'র ১০৩ ডিগ্রী জ্বর। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে সে অনেক শক্ত।

সেই গা-পোড়া জ্বর নিয়েই ২৪শে মার্চ শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় টেকনিক্যাল থেকে বাসে উঠে শনিবার সকালে বুড়িমারী সীমান্ত পার হয়ে ওপারে চেংড়াবান্ধা। সেখান থেকে টাটা সুমো গাড়ীতে দুইঘন্টা পর ভারত-ভুটান সীমান্তের এপার জয়গাঁওতে। ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট সিল নিয়ে ওপারে ভুটানের ফুয়েন্টশলিং। পারো ও থিম্ফু'র জন্য এন্ট্রি পারমিট নিয়ে সেইদিনই সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে পারো'র উদ্দেশ্যে যাত্রা। অন্ধকার হিমশীতল পরিবেশে পাহাড়ী আঁকা বাঁকা পথে রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষে রাত একটায় পারো'তে পৌছানো। পরদিন সী-লেভেল থেকে চার কিলোমিটার উপরে চেলালা ভ্রমন, সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে রাশি রাশি বরফের শুভ্র শীতল পরশের সুযোগ, সন্ধ্যায় শান্ত ও পরদিন সকালে স্নিগ্ধ পারো ভ্রমন শেষে থিম্ফু যাত্রা। থিম্ফু থেকে পুনাখা'র এন্ট্রি পারমিট নিয়ে বিকেলে পুনাখা জং ও সাসপেনশন ব্রিজ দেখা।

পরদিন মঙ্গবার সকালে থিম্ফু ভ্রমন শেষে সোজা ফুয়েন্টশলিং, সেখানেই রাত্রিযাপন… কিন্তু খাওয়া দাওয়া, কেনা কাটা সব ভারতীয় জয়গাঁওতে…. সীমান্ত পার হয়ে যখন তখন আসা যাওয়া করা যায়। পরদিন বুধবার সকালে ভুটানের এক্সিট ও ভারতীয় দ্বিতীয় এন্ট্রি সিল নিয়ে সোজা দার্জিলিং। পরদিন দার্জিলিং-এ, জাপানী পিস প্যাগোডা, বাতাশীয়া লুপ, টাইগার হিল, দার্জিলিং রেল স্টেশন, রক গার্ডেন। সন্ধ্যায় মল এলাকায় কেনা কাটা ও ঘোরাঘুরি। পরদিন শুক্রবার সকালে নেপাল বর্ডার সংযুক্ত রাস্তাধরে মিরিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা। পথে নেপালে পশুপতি বাজার দর্শণ করে মিরিক পৌছানো। পাহাড়ঘেরা মিরিক লেকের শান্ত জলে পা ভিজিয়ে দুপুরে শিলিগুড়ি পৌছে গাড়ী বদল করে চেংড়াবান্ধা যাত্রাপথে সুপার কুইক শপিং ও বিকেলে দু'দেশের ইমিগ্রেশন পার হয়ে সন্ধ্যার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা।

মাঝে সপ্তাহ খানেক অন্য জগতে থাকলেও শনিবার ভোরে ঢাকা পৌছেই সেই চিরচেনা নাগরিক ব্যস্ততা, দৌড়াদৌড়ি, কোলাহল, ট্রাফিক জ্যাম, মশার কামড়……. কিন্তু তার পরেও এই আমার বাংলাদেশ… প্রিয় বাংলাদেশ !!!!!

(বিস্তারিত গল্প আসছে …..)