চপস্টিক কিভাবে ব্যবহার করবেন?

জামাল হোসেন সেলিম
Published : 21 June 2015, 06:32 PM
Updated : 21 June 2015, 06:32 PM

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কিভাবে ব্যবহার করবো সেকথা পরে। আমরা এই অদ্ভুত জিনিস ব্যবহার করতে যাবো কেন? এ তো বিদেশী সংস্কৃতির অনুকরণ! ওসব ফালতু প্যাচাল দূরে রাখেন।

আমাদের সংস্কৃতিকে অবশ্যই সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং মনে মননে আমরা তা লালন করবো। আমি যদি আমার নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভুলে যাই তার অর্থ দাঁড়াবে আমি আমাকেও ভুলে যেতে পারি যে কোন সময়। আমি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি অনুসরণের কথা বলছি না।
আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার যতই সমৃদ্ধ হোক, তার পরও আমাদের আরো জানার থাকতে পারে। এবং যার জ্ঞানের ভাণ্ডার যত সমৃদ্ধ তাঁর জ্ঞানের ক্ষুধা তত বেশী থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক।

শুধু মাত্র সেই জানার আগ্রহটুকু থেকেও আমরা এই বিষয়টি জেনে নিতে পারি। তাছাড়া বিদেশী কোন কিছু হলেই তা যেমন খারাপ না তেমনি বিদেশী যে কোন কিছু দেখলেই তা একেবারে লুফে নিতে হবে তাও ঠিক না। ফুলপ্যান্ট যেমন বিদেশী সংস্কৃতি হলেও আমরা একে গ্রহণ করেছি। আবার এর সাথেই বিয়ার শ্যাম্পেনটাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এ আমাদের সচেতনতারই বহিঃ প্রকাশ।

নতুনকে জানায় বা নতুনের প্রতি আগ্রহ মানুষের চিরন্তন। শুধুমাত্র এই ইউনিক স্বভাবটির কারনেই মানুষ আজ এতটুকু আসতে পেড়েছে। তা না হলে আর দশটা প্রাণীর মত এদেরকেও সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগেই পড়ে থাকতে হতো।

জ্ঞানের আগ্রহ যাঁদের আছে অর্থাৎ যারা জানতে চান তাঁরা এগিয়ে আসুন, পোষ্টটি তাঁদের জন্য। যাঁরা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় (প্রবাসে বা বিদেশে) বিদেশী বন্ধুদের সাথে বসে অস্বস্তিতে পড়েন বা ঠিক খোলামেলা হতে পারেন না শুধু চপস্টিক ধরতে না পারার কারনে- তাঁরা এর পর কিছুটা হলেও অস্বস্তি কাটাতে পারবেন বলে মনে করি। আবার যারা নূতনকে জানতে আগ্রহী কিংবা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিতে চান না কোন কিছুকে – সেই অদম্য তারুন্য যাঁদের ভেতর (তারুন্যের কোন বয়স হয়না), তাঁদেরও জানাই স্বাগতম আমার এই পোষ্টে।

বলা যেতে পারে আমার আগের পোষ্টের (চপস্টিক, স্পুন আর আমাদের নগ্ন হাত) ধারাবাহিকতায় এলো এই পোষ্টটি।

তাই চপস্টিকের ব্যাপারে এখানে আর বিশদ আলোচনায় যাচ্ছি না।

চলুন সরাসরি প্র্যাকটিসে।

প্রথমঃ দুটোর মধ্য থেকে শুধু একটা কাঠি নিন। বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনীর মাঝ বরাবর আলতো করে রেখে এভাবে ধরুন। অনামিকা আর কনিষ্ঠা নীচ থেকে সাপোর্ট দিবে। এবং এই অবস্থায় স্থির থাকবে। এটা নড়াচড়া করবেনা।

এটুকু আয়ত্তে এসে গেলে অপর কাঠিটা নিন। তর্জনী, মধ্যমা আর বুড়ো আঙ্গুলের মাথা ব্যবহার করে এভাবে ধরুন। একদম সোজা, রাইট?

এভাবে ধরা অবস্থায় কাঠির অগ্রভাগ (সরু অংশটি) উপরে নীচে উঠানো এবং নামানোর চেষ্টা করুন। এটা যে কেহ পারবে। কঠিন কিছু না। তবে হাতের কব্জি নাড়াবেন না। শুধু আঙ্গুল তিনটা ব্যবহার করে কাজটি করুন।

এবার এই দুটো পর্যায় একত্র করে দুটো কাঠি একসাথে হাতে নিন। অনেকটা এভাবে।

আগেই বলেছি, নিচের কাঠিটা স্থির। এটা নড়াচড়া করবেনা। এবার তিন আঙ্গুলে ধরা দ্বিতীয় কাঠিটা উপরে তুলুন। এভাবে।

এই স্টেপটাই কয়েক বার এভাবে প্র্যাকটিস করুন। উপর নীচ, উপর নীচ…। চেষ্টা করবেন উপরের কাঠি দিয়ে নীচের কাঠিটা স্পর্শ করতে। অনেকটা বকের ঠোঁটের মত। তবে পাখির ঠোঁটের নীচের অংশ মুভ করে, উপরের টা ফিক্স। আপনার বেলায় উপরের টা নড়বে নীচেরটা ফিক্স থাকবে।

এটুকু হয়ে গেলে হাতের কাছে টেবিলের উপর হালকা কোন কিছু (হতে পারে ছোট একটুকরা পাউরুটি অথবা অথবা নরম ফোম) রেখে সেটা তোলার চেষ্টা করুন। এভাবে।

যখন দেখলেন পেরে গেছেন, আর কোন সমস্যা হচ্ছে না, সহজই মনে হচ্ছে। তখন আপনার ইচ্ছা মাফিক যে কোন কিছু (হতে পারে কয়েকটা আঙ্গুর) নিয়ে আরো কিছুক্ষন প্র্যাকটিস চালিয়ে যান।

কয়েকবার হয়তো পড়ে যেতে পারে (গোলাকার তো!)। তা যাক অধ্যবসায় চালিয়ে যান। যখন দেখবেন সেটা ধরে আপনার মুখ পর্যন্ত তুলে নিয়ে আসতে পেরেছেন, খেয়ে ফেলবেন। এটা আপনার পুরস্কার। এতক্ষন যে পরিশ্রম করলেন তার বিনিময়ে এটুকু পুরষ্কার আপনার প্রাপ্য।

বলাই বাহুল্য, ইতিমধ্যে আপনি মাষ্টার হয়ে গেছেন। যে আঙ্গুর তুলে খেতে পারে সে তো এখন যে কোন কিছু খেতে পারবে।

তবে খাওয়ার তালে পরে আমাকে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না যেন! 🙂

ছোট একটা টিপসঃ

যারা উপরের ছবিতে দেখানো ভঙ্গিতে নীচের কাঠিটা স্থির রাখতে পারবেন না (হয়তো ডানে বামে সরে গিয়ে প্রথম প্রথম কিছুটা ডিস্টার্ব করতে পারে।) তাঁরা নীচের ছবিতে দেখানো এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করতে পারেন।